ঢাকা ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে নদী পাড়ের জেলেরা ইলিশ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে শঙ্কায়!

বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে অভয়াশ্রম এলাকায় মা ইলিশ রক্ষা কল্পে অভিযানের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে ইলিশ আহরন করতে নদীতে নামবেন এ এলাকার হাজার-হাজার জেলেরা। ইতোমধ্যে জেলেরা তাদের মাছ ধরার নৌকা মেরামত ও জাল প্রস্তুত করেছেন। তবে জেলেদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভও বিরাজ করছে। তারা মা ইলিশ রক্ষার সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও এক শ্রেণীর অসাধু জেলে নির্বিচারে মা ইলিশ ধরায় এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বছর বিগত বছরের তুলনায় যেভাবে ইলিশ নিধন হয়েছে,তাতে করে এ এলাকার জেলোরা এখন পদ্মা-মেঘনা নদীতে নেমে ইলিশ পাওয়া না পাওয়ার শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।

Model Hospital

চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় জেলে পাড়াগুলোতে ঘুরে দেখাগেছে, জেলেরা ইলিশ ধরার জন্য নতুন জাল প্রস্তুত করছেন। আবার অনেকেই নৌকাগুলো মেরামত করছেন এবং নৌকার মধ্যে ইঞ্জিন বসাচ্ছেন। তাদের এই প্রস্তুতির কাজে পরিবারের ছোট বড় সব সদস্যরাই সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের জেলে আলমগীর হোসেন জানান, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় ২২দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা আমরা সঠিক ভাবে মেনে নদীতে মা’ইলিশ ধরতে নামিনি। আমরা নদীতে নামিনি। কিন্তু এক শ্রেনীর অসাধু ও মৌসুমী জেলে ঠিকই মা ইলিশ নিধন করে দেশের সম্পদ নস্ট করে লাখ-লাখ টাকা কামিয়ে নিজেরা অনেক লাভবান হয়েছে।

একই এলাকার জেলে এনায়েত উল্যাহ ও ওমর ফারুক জানান, বছরে দুইবার ইলিশ না ধরার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আমরা সব কিছুই মানি। কিন্তু এই সময় আমাদের সংসার চলে না। অতি কস্টে দিন পাড় করতে হয় সন্তানদের নিয়ে। প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। ঋন করে চলতে হয়। বছর শেষে দেখা যায় একেকজন ৪০-৫০ হাজার টাকা ঋনগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে যে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়, তা’আবার সঠিক ওজনে পাওয়া যায় না। কম পরিমান চাল নিতে হয়।

তারা বলেন, বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিসিনপত্রের যে দাম, ২৫ কেজি চাল দিয়ে ৫-৭ জন পরিবারের সদস্যনিয়ে সংসার চালানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। সরকার আমাদের বিষয়ে আরো দৃষ্টি দেয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করি।

চান্দ্রা ইউনিয়নের আখনের হাট এলাকার জেলে মোহাম্মদ আলী জানান, আমরা মা ইলিশ ধরি না। কিন্তু নিরাপদে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগও দিচ্ছে না এক শ্রেনীর অসাধু জেলেরা। আমি মনে করি সকলেরই উচিৎ ইলিশ মাছকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দেওয়া। এসব মাছ বড় হলো আমরাইত ধরব এবং এর উপকার ভোগী হব।

শহরতলীর আনন্দ বাজার জেলে পল্লীর জেলে সৈয়দ আহমেদ জানান, গত কয়েক বছর নদীর অবস্থা ভাল না। মেঘনায় চর জেগে উঠায় আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য কাজ করতে হয়। কারণ মাছ ধরার কাজ করে সংসার চলে না আমাদের। আমাদের সাথের অনেক জেলে এখন রিকশা,ভ্যান চালায় এবং অনেকে কৃষি কাজ করে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, চাঁদপুর জেলায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযান আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা টাস্কফোর্স যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসব সিদ্ধান্ত আমরা শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। জেলেদেরকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। আশা করছি ইলিশের উৎপাদন বিগত বছরের চাইতে এ বছর আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ইলিশ পদ্মা-মেঘনায় জেলেরা পেয়ে তাদের সংসার পূর্বের চাইতে ভাল ভাবে চালাতে পারবে। আমরা এ বছরের অভিযান থেকে বলতে পারি ও আশা করতে পারি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

চাঁদপুরে নদী পাড়ের জেলেরা ইলিশ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে শঙ্কায়!

আপডেট সময় : ০৯:৩১:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে অভয়াশ্রম এলাকায় মা ইলিশ রক্ষা কল্পে অভিযানের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে ইলিশ আহরন করতে নদীতে নামবেন এ এলাকার হাজার-হাজার জেলেরা। ইতোমধ্যে জেলেরা তাদের মাছ ধরার নৌকা মেরামত ও জাল প্রস্তুত করেছেন। তবে জেলেদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভও বিরাজ করছে। তারা মা ইলিশ রক্ষার সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও এক শ্রেণীর অসাধু জেলে নির্বিচারে মা ইলিশ ধরায় এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বছর বিগত বছরের তুলনায় যেভাবে ইলিশ নিধন হয়েছে,তাতে করে এ এলাকার জেলোরা এখন পদ্মা-মেঘনা নদীতে নেমে ইলিশ পাওয়া না পাওয়ার শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।

Model Hospital

চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় জেলে পাড়াগুলোতে ঘুরে দেখাগেছে, জেলেরা ইলিশ ধরার জন্য নতুন জাল প্রস্তুত করছেন। আবার অনেকেই নৌকাগুলো মেরামত করছেন এবং নৌকার মধ্যে ইঞ্জিন বসাচ্ছেন। তাদের এই প্রস্তুতির কাজে পরিবারের ছোট বড় সব সদস্যরাই সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের জেলে আলমগীর হোসেন জানান, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় ২২দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা আমরা সঠিক ভাবে মেনে নদীতে মা’ইলিশ ধরতে নামিনি। আমরা নদীতে নামিনি। কিন্তু এক শ্রেনীর অসাধু ও মৌসুমী জেলে ঠিকই মা ইলিশ নিধন করে দেশের সম্পদ নস্ট করে লাখ-লাখ টাকা কামিয়ে নিজেরা অনেক লাভবান হয়েছে।

একই এলাকার জেলে এনায়েত উল্যাহ ও ওমর ফারুক জানান, বছরে দুইবার ইলিশ না ধরার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আমরা সব কিছুই মানি। কিন্তু এই সময় আমাদের সংসার চলে না। অতি কস্টে দিন পাড় করতে হয় সন্তানদের নিয়ে। প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। ঋন করে চলতে হয়। বছর শেষে দেখা যায় একেকজন ৪০-৫০ হাজার টাকা ঋনগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে যে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়, তা’আবার সঠিক ওজনে পাওয়া যায় না। কম পরিমান চাল নিতে হয়।

তারা বলেন, বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিসিনপত্রের যে দাম, ২৫ কেজি চাল দিয়ে ৫-৭ জন পরিবারের সদস্যনিয়ে সংসার চালানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। সরকার আমাদের বিষয়ে আরো দৃষ্টি দেয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করি।

চান্দ্রা ইউনিয়নের আখনের হাট এলাকার জেলে মোহাম্মদ আলী জানান, আমরা মা ইলিশ ধরি না। কিন্তু নিরাপদে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগও দিচ্ছে না এক শ্রেনীর অসাধু জেলেরা। আমি মনে করি সকলেরই উচিৎ ইলিশ মাছকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দেওয়া। এসব মাছ বড় হলো আমরাইত ধরব এবং এর উপকার ভোগী হব।

শহরতলীর আনন্দ বাজার জেলে পল্লীর জেলে সৈয়দ আহমেদ জানান, গত কয়েক বছর নদীর অবস্থা ভাল না। মেঘনায় চর জেগে উঠায় আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য কাজ করতে হয়। কারণ মাছ ধরার কাজ করে সংসার চলে না আমাদের। আমাদের সাথের অনেক জেলে এখন রিকশা,ভ্যান চালায় এবং অনেকে কৃষি কাজ করে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, চাঁদপুর জেলায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযান আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা টাস্কফোর্স যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসব সিদ্ধান্ত আমরা শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। জেলেদেরকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। আশা করছি ইলিশের উৎপাদন বিগত বছরের চাইতে এ বছর আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ইলিশ পদ্মা-মেঘনায় জেলেরা পেয়ে তাদের সংসার পূর্বের চাইতে ভাল ভাবে চালাতে পারবে। আমরা এ বছরের অভিযান থেকে বলতে পারি ও আশা করতে পারি।