ঢাকা ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হাজীগঞ্জ ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতালে

কনডম দিয়ে সেলাই, প্রসূতির লাশের মূল্য ৫৫ হাজার টাকা!

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম দিয়ে সেলাইয়ের ঘটনায় মৃত প্রসূতির লাশের মূল্য ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছে ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতাল কতৃপক্ষ। তদন্ত বানচাল করতে দালালদের মাধ্যমে মাত্র ৫৫ হাজার টাকায় প্রসূতি রোজিনা আক্তারের লাশের মূল্য নির্ধারণ করে নানা অনিয়মে অভিযুক্ত এ হাসপাতাল।

Model Hospital

গত ৫ এপ্রিল সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম দিয়ে সেলাই দেওয়ার ঘটনায় প্রসূতি রোজিনা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। নিউজ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনার তদন্তে হাসপাতাল ছুটে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাক্তার গোলাম মাওলা নঈম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. জামাল উদ্দিন, ডাক্তার নাজমুল ইসলামসহ একাধিক কর্মকর্তা।

জেলা সিভিল সার্জন শাহাদাত হোসেনের নির্দেশে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. জামাল উদ্দিনকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

হাজীগঞ্জ বাজারে হাজীগঞ্জ টাওয়ার মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত নানা অনিয়মে জর্জরিত ইসলামিয়া মডার্ণ হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) দিয়ে সেলাই দেন হাজীগঞ্জ গোল্ডেন হাসপাতাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার রইসুল ইসলাম রুবেল। এ ঘটনা ভুল অপারেশনের শিকার প্রসূতি রুজিনা আক্তারের শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে মৃত্যু বরণ করে।

নিহত প্রসূতি রুজিনা আক্তার হাজীগঞ্জ উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর ফজর আলী বেপারি বাড়ির ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী এবং একই উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের বানিয়াচোঁ খান বাড়ির হাসান খা’র মেয়ে।

প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তাসহ তদন্ত টিম যাওয়ার পরপরই তড়িগড়ি করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

মৃতের বোনের ছেলে ধর্ষণ মামলার আসামী সোহেলকে অর্থের লোভ দেখিয়ে লাশের মূল্য মাত্র ৫৫ হাজার টাকায় রফাদফা করা হয়। টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মৃতের আত্মীয় উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. ইউসুফ।

ঘটনা রফাদফার সময় উপস্থিত থাকা একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে পরবর্তী সংবাদ প্রকাশ না করা শর্তে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়েছে বলে জানা যায়। তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু সাংবাদিককে টাকা দিয়েছে। আরও কাউকে দিতে হবে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ডাক্তার রুবেল সন্তান প্রসবের ফুল কাটতে গিয়ে নির্ধারিত অংশের চেয়ে অতিমাত্রায় জরায়ু কেটে ফেলেন।

এসময় তিনি শাক দিয়ে মাছ থাকতে জরায়ুর কাটা অংশে বেলুন (কনডম ) বসিয়ে সেলাই করে দেন। ৪দিন পর প্রসূতি রুজিনা আক্তারকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে বাড়িতে পাঠানো হয়। বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করলে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ দেখা দিলে অসুস্থ্য রুজিনাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ২য় বার ভর্তি হলে রুজিরার শরীরে ৪ ব্যাগ রক্ত প্রয়োগ করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সুকৌশলে ভুল অপারেশনের দায় থেকে রক্ষা পেতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে গাইনী বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) বসিয়ে সেলাই করা হয়। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন অধ্যায়ের এমন নিয়ম নেই। গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ মেডিকেল বোর্ড জরায়ু কেটে বেলুন প্রতিস্থাপন ঘটনাটি এই প্রথম দেখেছেন বলে মৃতের স্বজনরা জানায় । এক দিনে প্রসূতি রোজিনা শরীরে ১৯ রক্ত দিয়েও মৃত্যুর হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে পারেনি চিকিৎসকরা। চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন প্রসূতি রোজিনা আক্তার।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

হাজীগঞ্জ ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতালে

কনডম দিয়ে সেলাই, প্রসূতির লাশের মূল্য ৫৫ হাজার টাকা!

আপডেট সময় : ০২:১৬:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম দিয়ে সেলাইয়ের ঘটনায় মৃত প্রসূতির লাশের মূল্য ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছে ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতাল কতৃপক্ষ। তদন্ত বানচাল করতে দালালদের মাধ্যমে মাত্র ৫৫ হাজার টাকায় প্রসূতি রোজিনা আক্তারের লাশের মূল্য নির্ধারণ করে নানা অনিয়মে অভিযুক্ত এ হাসপাতাল।

Model Hospital

গত ৫ এপ্রিল সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম দিয়ে সেলাই দেওয়ার ঘটনায় প্রসূতি রোজিনা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। নিউজ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনার তদন্তে হাসপাতাল ছুটে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাক্তার গোলাম মাওলা নঈম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. জামাল উদ্দিন, ডাক্তার নাজমুল ইসলামসহ একাধিক কর্মকর্তা।

জেলা সিভিল সার্জন শাহাদাত হোসেনের নির্দেশে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. জামাল উদ্দিনকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

হাজীগঞ্জ বাজারে হাজীগঞ্জ টাওয়ার মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত নানা অনিয়মে জর্জরিত ইসলামিয়া মডার্ণ হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) দিয়ে সেলাই দেন হাজীগঞ্জ গোল্ডেন হাসপাতাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার রইসুল ইসলাম রুবেল। এ ঘটনা ভুল অপারেশনের শিকার প্রসূতি রুজিনা আক্তারের শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে মৃত্যু বরণ করে।

নিহত প্রসূতি রুজিনা আক্তার হাজীগঞ্জ উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর ফজর আলী বেপারি বাড়ির ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী এবং একই উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের বানিয়াচোঁ খান বাড়ির হাসান খা’র মেয়ে।

প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তাসহ তদন্ত টিম যাওয়ার পরপরই তড়িগড়ি করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

মৃতের বোনের ছেলে ধর্ষণ মামলার আসামী সোহেলকে অর্থের লোভ দেখিয়ে লাশের মূল্য মাত্র ৫৫ হাজার টাকায় রফাদফা করা হয়। টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মৃতের আত্মীয় উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. ইউসুফ।

ঘটনা রফাদফার সময় উপস্থিত থাকা একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে পরবর্তী সংবাদ প্রকাশ না করা শর্তে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়েছে বলে জানা যায়। তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু সাংবাদিককে টাকা দিয়েছে। আরও কাউকে দিতে হবে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ডাক্তার রুবেল সন্তান প্রসবের ফুল কাটতে গিয়ে নির্ধারিত অংশের চেয়ে অতিমাত্রায় জরায়ু কেটে ফেলেন।

এসময় তিনি শাক দিয়ে মাছ থাকতে জরায়ুর কাটা অংশে বেলুন (কনডম ) বসিয়ে সেলাই করে দেন। ৪দিন পর প্রসূতি রুজিনা আক্তারকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে বাড়িতে পাঠানো হয়। বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করলে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ দেখা দিলে অসুস্থ্য রুজিনাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ২য় বার ভর্তি হলে রুজিরার শরীরে ৪ ব্যাগ রক্ত প্রয়োগ করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সুকৌশলে ভুল অপারেশনের দায় থেকে রক্ষা পেতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে গাইনী বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) বসিয়ে সেলাই করা হয়। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন অধ্যায়ের এমন নিয়ম নেই। গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ মেডিকেল বোর্ড জরায়ু কেটে বেলুন প্রতিস্থাপন ঘটনাটি এই প্রথম দেখেছেন বলে মৃতের স্বজনরা জানায় । এক দিনে প্রসূতি রোজিনা শরীরে ১৯ রক্ত দিয়েও মৃত্যুর হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে পারেনি চিকিৎসকরা। চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন প্রসূতি রোজিনা আক্তার।