চাঁদপুরের মতলব উত্তরে যুবলীগ কর্মী মোবারক হোসেন বাবু নিহতের ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।
![priyo chandpur 12 Model Hospital](https://priyochandpur.net/wp-content/uploads/2023/11/awfe.png)
শনিবার (১৭ জুন) গুলিতে আওয়ামী লীগকর্মী মোবারক হোসেন বাবু নিহতের ঘটনায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে তার ভাই আমির হোসেন কালু থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় রবিবার পর্যন্ত ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আগের সংবাদটি পড়ুন… মতলব উত্তরে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবলীগ নেতা বাবু নিহত
রবিবার দুপুরে মোহনপুর আলী আহম্মদ মিয়া বহুমূখী কলেজ মাঠে ময়না তদন্ত শেষে মোবারক হোসেন বাবুর জানাযা শেষে বাহাদুরপুরে পারিবারিক কবররস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে মোবারক হোসেন বাবুর মরদেহ মোহনপুরে নিয়ে আসলে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল সমাবেশ ও কাজী মিজানুর রহমানের কুশপূত্রলিকা দাহ করে প্রতিবাদ জানান।
এদিকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রবিবার সকালে মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। দুপুর ১টায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) পলাশ কান্তি নাথ।
এ ঘটনায় সাবিয়া বেগম, মুছা গাজী, আনোয়ার হোসেন শেখ, জুয়েল কবিরাজ, মোশারফ হোসেন মিজি, সাহিনা বেগমকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। আদালত আসামীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, আটক হওয়া কাজী মিজানুর রহমান এই মামলার প্রধান আসামি। এরই মধ্যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, মামলার অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশ ঘটনাস্থল ও তার আশপাশে অভিযান চালাচ্ছে।
এর আগে শনিবার বিকেলে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পশ্চিম পার বাহাদুরপুর এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন যুবলীগ কর্মী মোবারক হোসেন বাবু (৪৮)।
এই ঘটনায় তার ছেলে ইমরান (১৮), জসিম উদ্দিনসহ (৩০) আরো একজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপির সমাবেশ থেকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে মোহনপুর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা হাই স্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
আর এই সমাবেশে যোগ দিতে মিছিল নিয়ে আসার পথে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন মোবারক হোসেন বাবুসহ বেশ কয়েকজন। এ সময় বাহাদুরপুর গ্রামের রাজ্জাক প্রধানিয়ার বাহাদুরপুর গ্রামের বাড়ি থেকে পূর্ববিরোধের জের ধরে মিছিলকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হন মোবারক হোসেন বাবুসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে একাধিক গুলিতে রক্তাক্ত হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান বাবু। পরে মায়া চৌধুরী সমাবেশ অসমাপ্ত রেখে নিহত ও আহতদের দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান।
এদিকে এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের জন্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ নিহতের স্বজনরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান ও তার লোকজনকে দায়ী করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য, মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমানের সঙ্গে একই দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও তার অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। যদিও শনিবারের ঘটনার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান।
পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে মুঠোফোনে তিনি দাবি করেন, এলাকার চেয়ারম্যান হয়ে কেন একজন মানুষকে হত্যা করবেন এবং এই ঘটনার সঙ্গে তার ও তার ভাইদের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার ওসি মহিউদ্দিন বলেন, বাহাদুরপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় কাজী মিজানকে প্রধান আসামী করে ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০/৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার পর রোববার সকালে কাজী মিজানের নিজ বাড়ি থেকে তাকে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আরো ৬ জনকে আটক করেছি। অন্য আসামীদেরকেও দ্রুত আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।