ঢাকা ০৬:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেষ সময়ের ব্যস্ততা কামার পাড়ায়

ঈদুল আযহার বাকি আর মাত্র তিনদিন। ঈদকে সামনে রেখে তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার পাড়ার শিল্পীরা। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।

Model Hospital

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এক মাস আগে থেকে ছুরি-চাকু-বটি, চাপাতি ও দা তৈরি ও পুরাতনগুলো শান দেওয়ার কাজে ব্যস্ত কামাররা। হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে রাতদিন মুখরিত থাকে কামার পাড়া। কেউ হাঁপর টানছেন, সেই হাঁপরে পুড়ছেন কয়লা, জ্বলছে লোহা। কেউ কেউ হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম।

কোরবানির ঈদ ঘিরে কামারদের যত রোজগার। তাই ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে তাদের এমন ব্যস্ততা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছর সংসার চালান। বছরের বেশিরভাগ সময় কামার শিল্পীরা অল্প কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই তারা এ সময়টাকে কাজে লাগান।

রোববার (২৫ জুন) মতলব উত্তরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোরবানিকে সামনে রেখে মানুষ কিনতে শুরু করেছেন ছুরি-চাকু-বটি, চাপাতি। আবার অনেকে একটু আগেভাগে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম শান দিয়ে দিচ্ছেন।

ছেংগারচর বাজারের কামার পট্টিতে বাপ-বেটা মিলেই কামারের দোকান পরিচালনা করেন। বাপ লোহা ধরে আছেন, ছেলে হাতুড়ি নিয়ে পেটাচ্ছেন। তাতেই তৈরি হচ্ছে চকচকে দা, ছুরি, চাপাতি, বটি, চাকু।

ছেংগারচর বাজারের কামার বিষু কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদে কাজ বেশি হয়। যে কারণে ঈদের একমাস আগে থেকেই আমাদের কাজ বাড়তে থাকে। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও এই ঈদে আমরা একটু বিশ্রামের সময়ও পাই না। ঈদের অনেক আগে থেকেই নতুন সরঞ্জাম তৈরি করে রাখি। অনেকে বানানোর সময় না পেয়ে নতুন জিনিস কিনতে চায়।

লতুরদি গ্রামের ছিটু কর্মকার। বয়স ষাটের ঘরে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে তাঁকে। সঙ্গে কাজ করেন তার স্ত্রী ও বারো বছরের স্কুল পড়ুয়া ছেলে রাজীবও।

সুমন কর্মকার বলেন, বছরের এই ঈদ মৌসুমটাই আমাদের মূল টার্গেট থাকে। বছরের কয়েকটা দিন ভালো টাকা, ভালো উপার্জন করার চিন্তা করলে এই দিনগুলো ঘিরেই করা হয়।
বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২৫০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা। বড় ছুরি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা। বটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।

কালির বাজারের কামার সঞ্জিব কর্মকার বলেন, আমার দাদাও এ কাজ করতেন। বাবা ৩০ বছর ধরে করছেন। সবমিলিয়ে ৬০ বছরের পুরোনো ব্যবসা আমাদের। এখন স্কুল বন্ধ, তাই পরিবারকে সময় দিতে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি। আর মাত্র তিনদিন পর ঈদ। এ সময়ে জমে ওঠার কথা দা-বটির বাজার, অথচ এবার বিক্রিই নেই। পুরোনো সরঞ্জামে অনেকেই শান দিয়ে নিচ্ছেন।

কোরবানির সরঞ্জাম কিনতে আসা পাঁচানী এলাকার বাসিন্দা মাহবুব সরকার বলেন, এবার গরু একটু আগেভাগেই কিনেছি। কোরবানির জন্য প্রয়োজন চাকু ও ছুরি। সে কারণে বাজারে এসেছি দা, বটি ও ছুরি কিনতে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

শেষ সময়ের ব্যস্ততা কামার পাড়ায়

আপডেট সময় : ১২:০৮:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩

ঈদুল আযহার বাকি আর মাত্র তিনদিন। ঈদকে সামনে রেখে তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার পাড়ার শিল্পীরা। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।

Model Hospital

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এক মাস আগে থেকে ছুরি-চাকু-বটি, চাপাতি ও দা তৈরি ও পুরাতনগুলো শান দেওয়ার কাজে ব্যস্ত কামাররা। হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে রাতদিন মুখরিত থাকে কামার পাড়া। কেউ হাঁপর টানছেন, সেই হাঁপরে পুড়ছেন কয়লা, জ্বলছে লোহা। কেউ কেউ হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম।

কোরবানির ঈদ ঘিরে কামারদের যত রোজগার। তাই ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে তাদের এমন ব্যস্ততা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছর সংসার চালান। বছরের বেশিরভাগ সময় কামার শিল্পীরা অল্প কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই তারা এ সময়টাকে কাজে লাগান।

রোববার (২৫ জুন) মতলব উত্তরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোরবানিকে সামনে রেখে মানুষ কিনতে শুরু করেছেন ছুরি-চাকু-বটি, চাপাতি। আবার অনেকে একটু আগেভাগে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম শান দিয়ে দিচ্ছেন।

ছেংগারচর বাজারের কামার পট্টিতে বাপ-বেটা মিলেই কামারের দোকান পরিচালনা করেন। বাপ লোহা ধরে আছেন, ছেলে হাতুড়ি নিয়ে পেটাচ্ছেন। তাতেই তৈরি হচ্ছে চকচকে দা, ছুরি, চাপাতি, বটি, চাকু।

ছেংগারচর বাজারের কামার বিষু কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদে কাজ বেশি হয়। যে কারণে ঈদের একমাস আগে থেকেই আমাদের কাজ বাড়তে থাকে। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও এই ঈদে আমরা একটু বিশ্রামের সময়ও পাই না। ঈদের অনেক আগে থেকেই নতুন সরঞ্জাম তৈরি করে রাখি। অনেকে বানানোর সময় না পেয়ে নতুন জিনিস কিনতে চায়।

লতুরদি গ্রামের ছিটু কর্মকার। বয়স ষাটের ঘরে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে তাঁকে। সঙ্গে কাজ করেন তার স্ত্রী ও বারো বছরের স্কুল পড়ুয়া ছেলে রাজীবও।

সুমন কর্মকার বলেন, বছরের এই ঈদ মৌসুমটাই আমাদের মূল টার্গেট থাকে। বছরের কয়েকটা দিন ভালো টাকা, ভালো উপার্জন করার চিন্তা করলে এই দিনগুলো ঘিরেই করা হয়।
বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২৫০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা। বড় ছুরি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা। বটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।

কালির বাজারের কামার সঞ্জিব কর্মকার বলেন, আমার দাদাও এ কাজ করতেন। বাবা ৩০ বছর ধরে করছেন। সবমিলিয়ে ৬০ বছরের পুরোনো ব্যবসা আমাদের। এখন স্কুল বন্ধ, তাই পরিবারকে সময় দিতে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি। আর মাত্র তিনদিন পর ঈদ। এ সময়ে জমে ওঠার কথা দা-বটির বাজার, অথচ এবার বিক্রিই নেই। পুরোনো সরঞ্জামে অনেকেই শান দিয়ে নিচ্ছেন।

কোরবানির সরঞ্জাম কিনতে আসা পাঁচানী এলাকার বাসিন্দা মাহবুব সরকার বলেন, এবার গরু একটু আগেভাগেই কিনেছি। কোরবানির জন্য প্রয়োজন চাকু ও ছুরি। সে কারণে বাজারে এসেছি দা, বটি ও ছুরি কিনতে।