ঢাকা ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খাল-বিল, পুকুর-নদী বা জলাশয়ের জন্য হুমকি

ডাকাতিয়া নদীতে সাকার ফিশ, মৎস্যজীবীদের উদ্বেগ

হাজীগঞ্জে ডাকাতিয়া নদী থেকে জেলেদের জালে দু’টি সাকার ফিশ ধরা পড়া খবর পাওয়া গেছে। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে জেলে ও মৎস্য শিকারীদের মাঝে। এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে চাঁদপুরের স্থানীয় দৈনিক ইলশেপাড় পত্রিকায়। সংবাদে বলা হয় সম্প্রতি হাজীগঞ্জ বাজারস্থ ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণ পাড়ে জমিতে মাছ ধরার সময় দুইটি সাকার ফিশ পাওয়া যায়। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর পর দেশের সবধরনের নদী ও পুকুরসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে সাকার ফিশ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে মৎস্যজীবীদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Model Hospital

ওই জমির মালিক শরীফ হোসেন জানান, ডাকাতিয়া নদীর চরে তাদের জমি। বর্ষায় শেষে পানি কমে যাওয়ায় জমিতে মাছ মারছিলেন। এসময় অন্যান্য মাছের সাথে দুইটি সাকার ফিশ পাওয়ায় উপস্থিত জেলেসহ সবাই হতবাক হয়ে যায়। তিনি বলেন, প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে মাছ দুইটি হাতে নিয়ে দেখি সাকার ফিশ। এসময় আমি সাকার ফিশের ছবি মোবাইলে তুলে রাখি। পরে সাকার ফিশ দু’টি মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলি।

এছাড়া মাস তিনেক আগে পৌরসভাধীন ধেররা মৎস্য আড়তে কয়েকটি জ্যান্ত সাকার ফিশ বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন একজন বিক্রেতা। ওই সময়ে মাছটির পরিচিতি না থাকায় এবং স্থানীয়রা মাছটি চিনতে না পারায় অনেকের মনে কৌতুহল জন্মে। অনেকে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। পরে মাছগুলো বিক্রি হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি। তবে এতেই বুঝা যাচ্ছে- সাকার ফিশ এ অঞ্চলে অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে ডাকাতিয়া নদীতে সাকার ফিশের দেখা পাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। এর মধ্যে এরশাদ হোসেন কালু ও মো. শাহআলম নামের দু’জন মৎস্যজীবী এবং জামাল হোসেন নামর একজন মৎস্য শিকারী বলেন, টিভিতে দেখেছি বুড়িগঙ্গা নদীতে এই মাছগুলো রয়েছে। যার কারণে, সেখানে অন্য কোন দেশীয় মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। এখন যদি ডাকাতিয়া নদীতে এ মাছ ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের কি উপায় হবে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাকুয়ারিয়ামের শোভাবর্ধক ও আবর্জনাভুক সাকার ফিশ এখন শুধু বুড়িগঙ্গায় নয়, দেশের সব নদীতে কম বেশি মিলছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় মাছের খাবার ও জায়গা সংকট হয়ে বিপন্নের দিকে এগোতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, সাকার ফিশ নদীতে অন্য মাছের জায়গা দখল করছে, পাশাপাশি নদীতে থাকা অন্য মাছের প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে ফেলছে।

সাধারণ সাকার ফিশ উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের ডিম ও নিচের শ্যাওলা-আবর্জনা খেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে খাদ্যশৃঙ্খলে। ফলে এ মাছ দেশীয় মাছের খাবার খেয়ে ফেলছে। এছাড়া দ্রুত বংশবিস্তারের মাধ্যমে দখল করছে অন্য মাছের আবাসস্থল। যার প্রমাণ, বুড়িগঙ্গা নদী। নদীটির রাজধানীর অংশে দেশীয় মাছ নেই বললেই চলে। এখন যদি ডাকাতিয়া নদীতে এই মাছের বংশবিস্তার ঘটে, তাহলে দেশি মাছের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

এদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছে জন্য হুমকি হওয়ায় ক্ষতিকর সাকার ফিশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত বছরের (২০২২) ২৯ সেপ্টেম্বর মাছটি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে সাকার ফিশ আমদানি, প্রজনন, চাষ, পরিবহন, বিক্রি, গ্রহণ বা প্রদান, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও মালিক হতে পারবেন না বলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ওই সময়ে মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (মৎস্য চাষ) মো. খালেদ কনক সংবাদকর্মীদের বলেন, সাকার ফিশ দেশীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে মাছের বংশবিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

এ মাছ যেকোনো পরিবেশে বাঁচতে পারে এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। মাছটি খাওয়া যায় না। সর্বোপরি সাকার মাছ জলজ জীব-বৈচিত্র নষ্ট করে।

এদিকে একজন মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, সাকার ফিস আমাদের দেশীয় মাছের জন্য হুমকিস্বরূপ। এগুলো অন্যান্য মাছের ডিম বা পোনা মাছ খেয়ে ফেলে। যেসব জলাশয়ে এ মাছ থাকে, সেখানে অন্য মাছ টিকে থাকতে পারে না। হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীতে মাছটি পাওয়া যাওয়ার কারণে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এ মাছের কারণে নদীর অন্যান্য মাছের বংশবিস্তার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মৎস্য বিভাগ থেকে এ জাতীয় মাছ ধ্বংস করার নির্দেশনা আছে। কেউ যেন এক্যুরিয়ামের সাকার ফিশ উন্মুক্ত পানিতে না ছাড়ে, সে পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া কেউ এক্যুরিয়ামে বা চাষ, বিক্রি করলে মৎস্য অফিস কিংবা প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহজাহান বলেন, যাঁরা অ্যাকোয়ারিয়ামের ব্যবসা করেন, তাঁরাই বিদেশ থেকে দেশে সাকার মাছ আনেন। অ্যাকোয়ারিয়ামের কাচের সঙ্গে লেগে থাকা ময়লা সাকার মাছ খেয়ে ফেলে। এতে কাচ পরিষ্কার থাকে। এটা মাছটা কোনো না কোনোভাবে আমাদের প্রকৃতিতে চলে গেছে। অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে এটা কীভাবে প্রকৃতিতে চলে গেল, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না।

উল্লেখ্য, সাকার ফিশের আসল নাম ‘সাকার মাউথ ক্যাটফিস’। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকাসটোমাস। আশির দশকে অ্যাকোয়ারিয়ামের শ্যাওলা ও ময়লা পরিষ্কার করতে এই মাছ বিদেশ থেকে আনা হয়। এই মাছ দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে দেখা যায়। তবে কয়েক বছর ধরে তা ভারত, চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের জলাশয়ে দেখা যাচ্ছে।

সাকার মাছের পিঠের ওপরে বড় ও ধারালো পাখনা আছে। দুই পাশেও রয়েছে একই রকমের দুটি পাখনা। এর দাঁতও বেশ ধারালো। সাধারণত জলাশয়ের আগাছা, জলজ পোকামাকড় ও ছোট মাছ এদের প্রধান খাবার।

যেসব পানিতে দূষণের কারণে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, সেখানে অন্য মাছ বাঁচতে পারে না, তবে এই মাছ পারে। পানি ছাড়াও মাছটি ২৪ ঘণ্টা দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে, শখের বসে এক্যুরিয়ামে পালনের উদ্দেশ্যে কেউ সাকার ফিশ দেশে আনেন। পরে এক্যুরিয়ামে বড় হয়ে গেলে কেউ হয়তো মাছটি না মেরে উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দিয়েছে। সেখান থেকে খাল-বিল বা নদী-নালায় ছড়িয়ে পড়ছে। যা এখন দেশীয় প্রজাতির মাছের জন্য হুমকিস্বরূপ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

খাল-বিল, পুকুর-নদী বা জলাশয়ের জন্য হুমকি

ডাকাতিয়া নদীতে সাকার ফিশ, মৎস্যজীবীদের উদ্বেগ

আপডেট সময় : ০৩:২১:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

হাজীগঞ্জে ডাকাতিয়া নদী থেকে জেলেদের জালে দু’টি সাকার ফিশ ধরা পড়া খবর পাওয়া গেছে। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে জেলে ও মৎস্য শিকারীদের মাঝে। এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে চাঁদপুরের স্থানীয় দৈনিক ইলশেপাড় পত্রিকায়। সংবাদে বলা হয় সম্প্রতি হাজীগঞ্জ বাজারস্থ ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণ পাড়ে জমিতে মাছ ধরার সময় দুইটি সাকার ফিশ পাওয়া যায়। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর পর দেশের সবধরনের নদী ও পুকুরসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে সাকার ফিশ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে মৎস্যজীবীদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Model Hospital

ওই জমির মালিক শরীফ হোসেন জানান, ডাকাতিয়া নদীর চরে তাদের জমি। বর্ষায় শেষে পানি কমে যাওয়ায় জমিতে মাছ মারছিলেন। এসময় অন্যান্য মাছের সাথে দুইটি সাকার ফিশ পাওয়ায় উপস্থিত জেলেসহ সবাই হতবাক হয়ে যায়। তিনি বলেন, প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে মাছ দুইটি হাতে নিয়ে দেখি সাকার ফিশ। এসময় আমি সাকার ফিশের ছবি মোবাইলে তুলে রাখি। পরে সাকার ফিশ দু’টি মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলি।

এছাড়া মাস তিনেক আগে পৌরসভাধীন ধেররা মৎস্য আড়তে কয়েকটি জ্যান্ত সাকার ফিশ বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন একজন বিক্রেতা। ওই সময়ে মাছটির পরিচিতি না থাকায় এবং স্থানীয়রা মাছটি চিনতে না পারায় অনেকের মনে কৌতুহল জন্মে। অনেকে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। পরে মাছগুলো বিক্রি হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি। তবে এতেই বুঝা যাচ্ছে- সাকার ফিশ এ অঞ্চলে অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে ডাকাতিয়া নদীতে সাকার ফিশের দেখা পাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। এর মধ্যে এরশাদ হোসেন কালু ও মো. শাহআলম নামের দু’জন মৎস্যজীবী এবং জামাল হোসেন নামর একজন মৎস্য শিকারী বলেন, টিভিতে দেখেছি বুড়িগঙ্গা নদীতে এই মাছগুলো রয়েছে। যার কারণে, সেখানে অন্য কোন দেশীয় মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। এখন যদি ডাকাতিয়া নদীতে এ মাছ ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের কি উপায় হবে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাকুয়ারিয়ামের শোভাবর্ধক ও আবর্জনাভুক সাকার ফিশ এখন শুধু বুড়িগঙ্গায় নয়, দেশের সব নদীতে কম বেশি মিলছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় মাছের খাবার ও জায়গা সংকট হয়ে বিপন্নের দিকে এগোতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, সাকার ফিশ নদীতে অন্য মাছের জায়গা দখল করছে, পাশাপাশি নদীতে থাকা অন্য মাছের প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে ফেলছে।

সাধারণ সাকার ফিশ উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের ডিম ও নিচের শ্যাওলা-আবর্জনা খেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে খাদ্যশৃঙ্খলে। ফলে এ মাছ দেশীয় মাছের খাবার খেয়ে ফেলছে। এছাড়া দ্রুত বংশবিস্তারের মাধ্যমে দখল করছে অন্য মাছের আবাসস্থল। যার প্রমাণ, বুড়িগঙ্গা নদী। নদীটির রাজধানীর অংশে দেশীয় মাছ নেই বললেই চলে। এখন যদি ডাকাতিয়া নদীতে এই মাছের বংশবিস্তার ঘটে, তাহলে দেশি মাছের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

এদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছে জন্য হুমকি হওয়ায় ক্ষতিকর সাকার ফিশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত বছরের (২০২২) ২৯ সেপ্টেম্বর মাছটি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে সাকার ফিশ আমদানি, প্রজনন, চাষ, পরিবহন, বিক্রি, গ্রহণ বা প্রদান, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও মালিক হতে পারবেন না বলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ওই সময়ে মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (মৎস্য চাষ) মো. খালেদ কনক সংবাদকর্মীদের বলেন, সাকার ফিশ দেশীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে মাছের বংশবিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

এ মাছ যেকোনো পরিবেশে বাঁচতে পারে এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। মাছটি খাওয়া যায় না। সর্বোপরি সাকার মাছ জলজ জীব-বৈচিত্র নষ্ট করে।

এদিকে একজন মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, সাকার ফিস আমাদের দেশীয় মাছের জন্য হুমকিস্বরূপ। এগুলো অন্যান্য মাছের ডিম বা পোনা মাছ খেয়ে ফেলে। যেসব জলাশয়ে এ মাছ থাকে, সেখানে অন্য মাছ টিকে থাকতে পারে না। হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীতে মাছটি পাওয়া যাওয়ার কারণে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এ মাছের কারণে নদীর অন্যান্য মাছের বংশবিস্তার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মৎস্য বিভাগ থেকে এ জাতীয় মাছ ধ্বংস করার নির্দেশনা আছে। কেউ যেন এক্যুরিয়ামের সাকার ফিশ উন্মুক্ত পানিতে না ছাড়ে, সে পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া কেউ এক্যুরিয়ামে বা চাষ, বিক্রি করলে মৎস্য অফিস কিংবা প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহজাহান বলেন, যাঁরা অ্যাকোয়ারিয়ামের ব্যবসা করেন, তাঁরাই বিদেশ থেকে দেশে সাকার মাছ আনেন। অ্যাকোয়ারিয়ামের কাচের সঙ্গে লেগে থাকা ময়লা সাকার মাছ খেয়ে ফেলে। এতে কাচ পরিষ্কার থাকে। এটা মাছটা কোনো না কোনোভাবে আমাদের প্রকৃতিতে চলে গেছে। অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে এটা কীভাবে প্রকৃতিতে চলে গেল, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না।

উল্লেখ্য, সাকার ফিশের আসল নাম ‘সাকার মাউথ ক্যাটফিস’। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকাসটোমাস। আশির দশকে অ্যাকোয়ারিয়ামের শ্যাওলা ও ময়লা পরিষ্কার করতে এই মাছ বিদেশ থেকে আনা হয়। এই মাছ দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে দেখা যায়। তবে কয়েক বছর ধরে তা ভারত, চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের জলাশয়ে দেখা যাচ্ছে।

সাকার মাছের পিঠের ওপরে বড় ও ধারালো পাখনা আছে। দুই পাশেও রয়েছে একই রকমের দুটি পাখনা। এর দাঁতও বেশ ধারালো। সাধারণত জলাশয়ের আগাছা, জলজ পোকামাকড় ও ছোট মাছ এদের প্রধান খাবার।

যেসব পানিতে দূষণের কারণে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, সেখানে অন্য মাছ বাঁচতে পারে না, তবে এই মাছ পারে। পানি ছাড়াও মাছটি ২৪ ঘণ্টা দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে, শখের বসে এক্যুরিয়ামে পালনের উদ্দেশ্যে কেউ সাকার ফিশ দেশে আনেন। পরে এক্যুরিয়ামে বড় হয়ে গেলে কেউ হয়তো মাছটি না মেরে উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দিয়েছে। সেখান থেকে খাল-বিল বা নদী-নালায় ছড়িয়ে পড়ছে। যা এখন দেশীয় প্রজাতির মাছের জন্য হুমকিস্বরূপ।