চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে অভাবের তাড়নায় মো. ওমর ফারুক নামের ১৭ দিন বয়সি এক নবজাতককে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। তবে পরিবারের দাবী বিক্রি নয়, নবজাতককে দত্তক দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বেতিয়াপাড়া গ্রামের তালুকদার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নবজাতক মো. ওমর ফারুক ওই বাড়ির ফার্নিচার মেস্তুরি মো. সেলিম ও গৃহবধূ মৌসুমি বেগম দম্পত্তির তৃতীয় সন্তান।
![priyo chandpur 12 Model Hospital](https://priyochandpur.net/wp-content/uploads/2023/11/awfe.png)
জানা গেছে, সেলিম ও মৌসুমি দম্পতির ৫ বছর বয়সি মেয়ে ও ৩ বছর বয়সি ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা দারিদ্রতার কারণে স্বচ্ছলতার সাথে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেনা। এর মধ্যে গত ৩০ মার্চ বিকালে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সাইট সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্ম দেন মৌসুমি বেগম।
এরপর টাকার অভাবে স্ত্রী মৌসুমিকে ভালোভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না সেলিম। যার কারণে সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতককে নিকট আত্মীয়ের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে পরিবারের দাবী নবজাতককে বিক্রি নয়, মৌসুমি বেগমের বড় বোন ফাতেমার কাছে দত্তক দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে ওই বাড়িতে গেলে কথা হয় নবজাতকের বাবা ফার্নিচার মেস্তুরি মো. সেলিমের সাথে। তিনি জানান, ১৪ বছর পূর্বে তাঁর জেষ্টস (স্ত্রীর বড় বোন) ফাতেমা বেগমের বিয়ে হলেও কোন সন্তান হয়নি। যার ফলে তাদের দ্বিতীয় সন্তানকে ফাতেমা বেগম দত্তক নিতে চেয়েছেন। কিন্তু তারা দেননি।
তিনি বলেন, তৃতীয় সন্তানের জন্মের দিন ফাতেমা বেগম আবারও তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। যার ফলে মানবিক কারণে এবং আত্মীয়তার দিক বিবেচনা করে সদ্য নেওয়া নবজাতককে দত্তক দিয়ে দেন। বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, তারা (ফাতেমা বেগম) টাকা দিতে চেয়েছে, কিন্তু আমরা নেইনি। তিনি জানান, স্ট্যাম্পের মাধ্যকে ছেলেকে দত্তক দেওয়া হয়েছে। তবে স্ট্যাম্প এখনো হয়নি, আত্মীয়কে লিখতে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে স্ট্যাম্প পেপারে স্বাক্ষর করা অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে শিশু দত্তক নেওয়ার আইনগত কোন বৈধতা নেই। দেশের আইন অনুযায়ী কোন শিশুকে দত্তক নিতে হলে, ওই শিশুর বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং ১৮৯০ সালের অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইনের অধীনে বৈধ অভিভাবকত্বের জন্য পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে।
এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রোটা. ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন জানান, কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, আপনাদের (সংবাদকর্মী) মাধ্যমে নবজাতক বিক্রির বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, দত্তকের আইনগত বৈধতা রয়েছে। তবে যথাযথ নিয়মের মাধ্যমে হতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি আইনের ব্যতয় ঘটে এবং অন্য কোনো কারণ থেকে থাকে তাহলে বিষয়টি দেখা হবে। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।