ঢাকা ১২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাইমচরে থানার সামনে চায়ের দোকানীর প্রভাবে নাজেহাল বাড়ীর লোকজন

চাঁদপুরের হাইমচর থানার সামনের নুরুল আমিন নামের এক চায়ের দোকানীর প্রভাবে তার বাড়ীর নিরীহ মানুষজন নাজেহাল হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি সামনে আসতেই নিজেকে নিরীহ দাবী করে উল্টো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ তুললেন নুরুল। যদিও পুলিশ বলছে, চায়ের দোকানের সুবাদে পুলিশের সাথে ওই দোকানীর সখ্যতা থাকলেও তিনি তা কাজে লাগিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বিকালে উত্তর আলগী দূর্গাপুরের ৪নং ওয়ার্ডের কমলাপুর গ্রামের ছৈয়াল বাড়ীতে গেলে এসব তথ্য উঠে আসে।

ওই বাড়ীর নাজমা বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রবাসে থাকে। আমি বাড়ীতে ৩টি ছোট ছোট সন্তান নিয়ে নিকট আত্মীয়ের বাসায় বসবাস করছি। এখন বাড়ীতে স্বামী তার পৈতৃক সম্পত্তিতে দালান করতে গেলে পার্শ্ববর্তী নুরুল আমিন থানা থেকে পুলিশ নিয়ে এসে বাঁধা দেয়। এখন ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

নাজমা বলেন, ওই নুরুল আমিন আমার বাসার দরজায়ও মাঝেমধ্যে খারাপ উদ্দ্যেশ্যে টোকা দিয়েছে। পরে ভবন নির্মাণের সময় টাকা দাবী করে আড়াই লাখ। তা না দেয়ায় এখন ভবন নির্মাণ করতে দিচ্ছেনা। বলে যে, তার দোকান থানার সামনে রয়েছে এবং সব পুলিশের সাথে তার ভালো সম্পর্ক। সে আমাদেরকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে ছাড়বে। এখন বাড়ীর জমির মালিকানা নিয়ে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে কলকাঠি নেরে মামলা করিয়েছেন। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই এবং তার শাস্তির দাবী করছি।

Model Hospital

একই বাড়ীর বয়জৈষ্ঠ মোঃ তোফায়েল আহম্মদ এবং সফিকুর রহমান ও আব্দুর রহমান সৈয়াল বলেন, নাজমা নামের ওই মহিলা একজন নিরীহ মানুষ এবং এখানেই বসতভিটায় থাকতো। এখন সে এখানে পুরাতন ঘর ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করতে যাওয়ায় প্রতিবেশী নুরুল তার চাচাকে দিয়ে নাজমার বিরুদ্ধে মামলা করিয়ে নানাভাবে হয়রানি করতেছে। এর এমন নাজেহাল পরিস্থিতি এড়াতে একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত।

ওই বাড়ীর মিজানুর রহমান বলেন, ভবন নির্মাণের সময় নাজমাকে ৬ ইঞ্চি জমি ছাড়তে বলে নুরুল আমিন। তার কথানুযায়ী সেটি ছেড়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে এখন অহেতুক ঝামেলা বাঁধাচ্ছে নুরুল। থানার সামনে দোকান হওয়ায় সে শুধু পুলিশের ভয়ভীতি দেখায়। এখন বাড়ীর মানুষের নামে একটা আইনি ঝামেলাও করাচ্ছে। ওর থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা তদন্তপূর্বক এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।

সৈয়াল বাড়ীর বাসিন্দা নাসির হোসেন বলেন, এখানে যিনি মামলা করেছেন তিনি হচ্ছেন সৈয়দ আহম্মদ। মূলত তিনি এ বাড়ীতে থাকেননা এবং এই বাড়ী নিয়ে তার মাথাব্যাথাও নেই। নুরুল আমিনই কুট কৌশল করে ওই লোককে বাদী করে নাজমাসহ বাড়ীর মানুষের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করিয়েছেন। ওর শাস্তি হওয়া উচিত।

অভিযোগ প্রসঙ্গে নুরুল আমিনের স্ত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, এই বাড়িতে আমাদের অনেক জমি রয়েছে। তা বুজিয়ে দিচ্ছেনা কেউ। তাই জমির মালিকানা বুজ পেতে আমরা আইনী পদক্ষেপ নিয়েছি।

এ বিষয়ে নুরুল আমিন বলেন, আমি দীর্ঘ ২২/২৩ বছর থানার সামনে চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছি এটা সত্য। আমার সাথে থানা পুলিশের অনেকের সাথে সুসম্পর্ক এটিও সত্য। তবে আমি বাড়ীর কাউকে অহেতুক পুলিশি ভয় দেখাইনি এবং কোন প্রভাবও বিস্তার করিনি। আমি কাগজপত্র অনুযায়ী আমার জমি বুজে পেতে কাজ বন্ধ রাখতে পুলিশ নিয়ে বাড়ীতে হাজির হয়েছি এবং আআইনানুযায়ীই ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করিয়েছি। আমি নাজমা নামের ওই নারীর থেকে কোন টাকা দাবী করিনি এবং কখনোই তার থাকার ঘরের দরজায় কু-মতলবে টোকা দেইনি। আমি ওই বাড়ীতে একা হওয়ায় ন্যায় বিচার পেতেই আমার চাচা সৈয়দ আহম্মদ মামলা করেন এবং আমি সে মামলার সাক্ষী হতে বাধ্য হয়েছি এবং এর বাইরে আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ সব বানোয়াট ও মিথ্যা।

এদিকে ঘটনাস্থলে যাওয়া ওই পুলিশ সদস্য হচ্ছেন হাইমচর থানার এএসআই আবু হানিফ। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওখানে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাজ বন্ধ করে দিয়ে এসেছি। আমি মূলত আইনের কাজ করতেই ওই বাড়ীতে গিয়েছি। থানার সামনে চায়ের দোকান হওয়ায় আমি নুরুল আমিনের সাথে কোনরূপ ব্যাক্তি সম্পর্কে ওখানে যাইনি এবং এই মামলাটি করেছে তার চাচা। কাজেই নুরুল আমিনের ত ওখানে কিছুনা বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

এ বিষয়টি চাঁদপুরের হাইমচর থানার সেকেন্ড অফিসার সমীর দাসকে অবগত করা হলে তিনি বলেন, থানার সামনে দোকান হওয়ায় যদি কোন চায়ের দোকানি বাড়ীতে প্রভাব বিস্তার করে তা ঠিক করেনি। আইন সবার জন্য সমান। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

৩ জনকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় হামলা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের

হাইমচরে থানার সামনে চায়ের দোকানীর প্রভাবে নাজেহাল বাড়ীর লোকজন

আপডেট সময় : ০৯:২০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চাঁদপুরের হাইমচর থানার সামনের নুরুল আমিন নামের এক চায়ের দোকানীর প্রভাবে তার বাড়ীর নিরীহ মানুষজন নাজেহাল হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি সামনে আসতেই নিজেকে নিরীহ দাবী করে উল্টো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ তুললেন নুরুল। যদিও পুলিশ বলছে, চায়ের দোকানের সুবাদে পুলিশের সাথে ওই দোকানীর সখ্যতা থাকলেও তিনি তা কাজে লাগিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বিকালে উত্তর আলগী দূর্গাপুরের ৪নং ওয়ার্ডের কমলাপুর গ্রামের ছৈয়াল বাড়ীতে গেলে এসব তথ্য উঠে আসে।

ওই বাড়ীর নাজমা বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রবাসে থাকে। আমি বাড়ীতে ৩টি ছোট ছোট সন্তান নিয়ে নিকট আত্মীয়ের বাসায় বসবাস করছি। এখন বাড়ীতে স্বামী তার পৈতৃক সম্পত্তিতে দালান করতে গেলে পার্শ্ববর্তী নুরুল আমিন থানা থেকে পুলিশ নিয়ে এসে বাঁধা দেয়। এখন ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

নাজমা বলেন, ওই নুরুল আমিন আমার বাসার দরজায়ও মাঝেমধ্যে খারাপ উদ্দ্যেশ্যে টোকা দিয়েছে। পরে ভবন নির্মাণের সময় টাকা দাবী করে আড়াই লাখ। তা না দেয়ায় এখন ভবন নির্মাণ করতে দিচ্ছেনা। বলে যে, তার দোকান থানার সামনে রয়েছে এবং সব পুলিশের সাথে তার ভালো সম্পর্ক। সে আমাদেরকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে ছাড়বে। এখন বাড়ীর জমির মালিকানা নিয়ে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে কলকাঠি নেরে মামলা করিয়েছেন। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই এবং তার শাস্তির দাবী করছি।

Model Hospital

একই বাড়ীর বয়জৈষ্ঠ মোঃ তোফায়েল আহম্মদ এবং সফিকুর রহমান ও আব্দুর রহমান সৈয়াল বলেন, নাজমা নামের ওই মহিলা একজন নিরীহ মানুষ এবং এখানেই বসতভিটায় থাকতো। এখন সে এখানে পুরাতন ঘর ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করতে যাওয়ায় প্রতিবেশী নুরুল তার চাচাকে দিয়ে নাজমার বিরুদ্ধে মামলা করিয়ে নানাভাবে হয়রানি করতেছে। এর এমন নাজেহাল পরিস্থিতি এড়াতে একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত।

ওই বাড়ীর মিজানুর রহমান বলেন, ভবন নির্মাণের সময় নাজমাকে ৬ ইঞ্চি জমি ছাড়তে বলে নুরুল আমিন। তার কথানুযায়ী সেটি ছেড়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে এখন অহেতুক ঝামেলা বাঁধাচ্ছে নুরুল। থানার সামনে দোকান হওয়ায় সে শুধু পুলিশের ভয়ভীতি দেখায়। এখন বাড়ীর মানুষের নামে একটা আইনি ঝামেলাও করাচ্ছে। ওর থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা তদন্তপূর্বক এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।

সৈয়াল বাড়ীর বাসিন্দা নাসির হোসেন বলেন, এখানে যিনি মামলা করেছেন তিনি হচ্ছেন সৈয়দ আহম্মদ। মূলত তিনি এ বাড়ীতে থাকেননা এবং এই বাড়ী নিয়ে তার মাথাব্যাথাও নেই। নুরুল আমিনই কুট কৌশল করে ওই লোককে বাদী করে নাজমাসহ বাড়ীর মানুষের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করিয়েছেন। ওর শাস্তি হওয়া উচিত।

অভিযোগ প্রসঙ্গে নুরুল আমিনের স্ত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, এই বাড়িতে আমাদের অনেক জমি রয়েছে। তা বুজিয়ে দিচ্ছেনা কেউ। তাই জমির মালিকানা বুজ পেতে আমরা আইনী পদক্ষেপ নিয়েছি।

এ বিষয়ে নুরুল আমিন বলেন, আমি দীর্ঘ ২২/২৩ বছর থানার সামনে চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছি এটা সত্য। আমার সাথে থানা পুলিশের অনেকের সাথে সুসম্পর্ক এটিও সত্য। তবে আমি বাড়ীর কাউকে অহেতুক পুলিশি ভয় দেখাইনি এবং কোন প্রভাবও বিস্তার করিনি। আমি কাগজপত্র অনুযায়ী আমার জমি বুজে পেতে কাজ বন্ধ রাখতে পুলিশ নিয়ে বাড়ীতে হাজির হয়েছি এবং আআইনানুযায়ীই ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করিয়েছি। আমি নাজমা নামের ওই নারীর থেকে কোন টাকা দাবী করিনি এবং কখনোই তার থাকার ঘরের দরজায় কু-মতলবে টোকা দেইনি। আমি ওই বাড়ীতে একা হওয়ায় ন্যায় বিচার পেতেই আমার চাচা সৈয়দ আহম্মদ মামলা করেন এবং আমি সে মামলার সাক্ষী হতে বাধ্য হয়েছি এবং এর বাইরে আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ সব বানোয়াট ও মিথ্যা।

এদিকে ঘটনাস্থলে যাওয়া ওই পুলিশ সদস্য হচ্ছেন হাইমচর থানার এএসআই আবু হানিফ। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওখানে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাজ বন্ধ করে দিয়ে এসেছি। আমি মূলত আইনের কাজ করতেই ওই বাড়ীতে গিয়েছি। থানার সামনে চায়ের দোকান হওয়ায় আমি নুরুল আমিনের সাথে কোনরূপ ব্যাক্তি সম্পর্কে ওখানে যাইনি এবং এই মামলাটি করেছে তার চাচা। কাজেই নুরুল আমিনের ত ওখানে কিছুনা বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

এ বিষয়টি চাঁদপুরের হাইমচর থানার সেকেন্ড অফিসার সমীর দাসকে অবগত করা হলে তিনি বলেন, থানার সামনে দোকান হওয়ায় যদি কোন চায়ের দোকানি বাড়ীতে প্রভাব বিস্তার করে তা ঠিক করেনি। আইন সবার জন্য সমান। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।