মতলব উত্তর ব্যুরো : মতলব উত্তর উপজেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চাল, ডাল, আটা, তেলসহ সব ভোগ্যপণ্যের চড়া দামের কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। তাই কম দামে চাল ও আটা কিনতে ছেংগারচর পৌরসভার চারটি ওএমএস ডিলারের দোকানে সারি ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দামে কুলিয়ে উঠতে না পেরে অভাবী মানুষের সারিতে দাঁড়াচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও।
এদিকে সরকারের খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) চাল ও আটা বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরছেন অনেকেই। তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ায় সবাইকে চাল ও আটা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ডিলাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হতদরিদ্র মানুষদের মধ্যে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির আওতায় ছেংগারচর পৌর শহরের চারটি ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রের প্রতিটিতে এক টন চাল এবং এক টন আটা সরবরাহ করা হয়। শুক্রবার ছাড়া জনপ্রতি ৫ কেজি করে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটার দাম ১৮ টাকা ধরা হয়।
সোমবার ছেংগারচর পৌর শহরের ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ১০টা থেকে চাল ও আটা বিক্রির কথা থাকলেও ভোরবেলা থেকেই মানুষ এসে জড়ো হয়েছেন। বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে বাজারের ব্যাগ ও বস্তা রেখে দাঁড়িয়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা। চাল ও আটা কিনতে আসা অধিকাংশই বৃদ্ধ ও নারী। তাঁদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়েছেন মধ্যবিত্তরাও। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চাল ও আটা পেলেও আবার অনেকেই ফিরেছেন খালি হাতে।
উপজেলার জোড়খালি গ্রামের আয়নাল হক (৫৫) বলেন, আমরা গরিব মানুষ, বাজারে চাল ও আটার দাম বেশি। তাই কম দামে আটা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এর আগে দুইবার এসেছিলাম, না পেয়ে ফিরে গেছি।
তিনি আরও বলেন, শুধু আমরা না; অনেক ভালো ভালো মানুষ এ লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
পৌর এলাকার রুহিতারপাড় গ্রামের মানসুরা বেগম (৫৩) বলেন, তাঁর স্বামী অন্যের চায়ের দোকানে কাজ করেন। সংসারে ছেলে-মেয়েসহ তাঁরা ৫ সদস্য। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁর। কম দামে চাল-আটা কিনতে তিনি এখানে এসেছেন।
মালাইরকান্দি গ্রামের মারফত আলী (৬৫) জানান, বাজারে চালের কেজি ৫০ টাকা আর আটা ৩২ টাকা কেজি। তাই কম দামে চাল ও আটা কিনতে এখানে এসেছেন তিনি।
ওএমএসের ডিলার জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দিন যত যাচ্ছে চাহিদা তত বাড়ছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ চাল ও আটা নিতে ছুটে আসছেন। বিশেষ করে আটার মান ভালো হওয়ায় এর চাহিদা খুব বেশি। তাই বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।
আরেক ডিলার রফিকুল ইসলাম বলেন, চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ কম হওয়ায় অনেকে ফিরে যান। বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনিও মনে করেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আঃ সালাম বলেন, পৌর শহরে চারজন ডিলারের মাধ্যমে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন আট টন চাল ও আটা নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা পেলে বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, ওএমএসের চাল ও আটার বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।