ঢাকা ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাটবাজারে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ বিক্রি

নিজস্ব প্রতিনিধি : মতলব উত্তরে হাটবাজারে এখন দেদারসে বিক্রি হচ্ছে প্রাকৃতিক জলাশয়ের টেংরা, কৈ, শিং, মাগুর, পুঁটি, চিকরা, চেলা, মলাসহ নানা প্রজাতির ডিমওয়ালা মাছ। ক্রেতাদেরও এসব মাছের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকে। এসব মাছের দামও থাকে বেশি। অন্তত কেজিতে দু’শ থেকে তিনশ’ টাকা বেশি।

Model Hospital

উপজেলা শহরের ছেংগারচর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাছ বিক্রেতারা তাদের ডালিতে ডিমওয়ালা মাছ সাজিয়ে রেখেছেন। ক্রেতারাও দরদাম করছেন। এক ব্যবসায়ীর দোকানে দেখা গেছে লোভনীয় সাইজের টেংরা মাছ। সবগুলো মাছই জ্যন্ত। অন্তত ৮০ ভাগ মাছেরই পেট ভর্তি ডিম। অন্য সময় এসব টেংরা ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা কেজি বিক্রি হয়। কিন্তু বিক্রেতা এসব ডিমওয়ালা টেংরার দাম চাচ্ছেন এক হাজার টাকা কেজি। বর্ষার নতুন পানির এ মাছগুলো নদী অঞ্চল থেকে আনা হয়েছে বলে বিক্রেতা জানালেন।

এমনিতেই মতলব উত্তরে মিঠা পানির প্রাকৃতিক জলাশয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট হচ্ছে, আবাসন হচ্ছে। আবার যেসব প্রাকৃতিক জলাশয়ে একসময় ১২ মাস পানি থাকতো, এখন জলবায়ু পরিবর্তন এবং পলি পড়ার কারণে এরকম বহু জলাশয়ে বছরের একটি বড় সময় পানি থাকে না। যে কারণে স্থানীয় জাতের বহু মাছের আবাসস্থল কমেছে, উৎপাদনও কমেছে। বহু মাছের প্রজাতি অস্তিত্বের হুমকিতে রয়েছে। আবার বহু প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রধানত নির্ভর করতে হচ্ছে কৃত্রিম চাষাবাদের ওপর। যদিও চাষাবাদের মাছের উৎপাদন এখন প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছের চেয়ে অনেক বেশি। প্রাকৃতিক জলাশয়ে প্রাকৃতিক নিয়মেই মাছের প্রজনন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মানুষের তেমন ভূমিকা নেই, পরিশ্রমও নেই।

কিন্তু কৃত্রিম চাষাবাদের ক্ষেত্রে হ্যাচারি স্থাপন করে মাতৃ মাছের ডিম বের করে পুরুষ মাছের সাহায্য নিয়ে যান্ত্রিক উপায়ে মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়। সেগুলিও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হয়ে থাকে। এক শ্রেণীর মধ্যবর্তী পোনা ব্যবসায়ী হ্যাচারি মালিকদের কাছ থেকে পোনা কিনে নিয়ে পুকুর মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। তবে কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত মাছের স্বাদ প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছের মত হয় না। এক সময় হ্যাচারিতে কেবল পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া আর কার্প জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদিত হতো। এখন পাবদা, শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, গোলসা, টাকি, মেনিসহ নানা জাতের ছোট প্রজাতির মাছেরও পোনা উৎপাদিত হচ্ছে। এসব পোনা ফিশারিতে বা পুকুরে অবমুক্ত করে খাবার উপযোগী করা হচ্ছে। এসব ছোট প্রজাতির মাছ এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আবাদ হচ্ছে। বাজারে এখন এসব চাষ করা মাছেরই দাপট চলছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমকে ডিমওয়ালা মাছ শিকার ও বাজারে বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে জানান, সরকার ইলিশের ডিম পারার মৌসুমের মত মিঠা পানির প্রাকৃতিক জলাশয়ের ক্ষেত্রেও ডিমওয়ালা মাছের মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দরকার। প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের প্রজনন অনেক বেড়ে যেতে পারে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে ডিমওয়ালা মাছ রক্ষার জন্য প্রচারণা করা হয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

হাটবাজারে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ বিক্রি

আপডেট সময় : ০২:২৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিনিধি : মতলব উত্তরে হাটবাজারে এখন দেদারসে বিক্রি হচ্ছে প্রাকৃতিক জলাশয়ের টেংরা, কৈ, শিং, মাগুর, পুঁটি, চিকরা, চেলা, মলাসহ নানা প্রজাতির ডিমওয়ালা মাছ। ক্রেতাদেরও এসব মাছের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকে। এসব মাছের দামও থাকে বেশি। অন্তত কেজিতে দু’শ থেকে তিনশ’ টাকা বেশি।

Model Hospital

উপজেলা শহরের ছেংগারচর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাছ বিক্রেতারা তাদের ডালিতে ডিমওয়ালা মাছ সাজিয়ে রেখেছেন। ক্রেতারাও দরদাম করছেন। এক ব্যবসায়ীর দোকানে দেখা গেছে লোভনীয় সাইজের টেংরা মাছ। সবগুলো মাছই জ্যন্ত। অন্তত ৮০ ভাগ মাছেরই পেট ভর্তি ডিম। অন্য সময় এসব টেংরা ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা কেজি বিক্রি হয়। কিন্তু বিক্রেতা এসব ডিমওয়ালা টেংরার দাম চাচ্ছেন এক হাজার টাকা কেজি। বর্ষার নতুন পানির এ মাছগুলো নদী অঞ্চল থেকে আনা হয়েছে বলে বিক্রেতা জানালেন।

এমনিতেই মতলব উত্তরে মিঠা পানির প্রাকৃতিক জলাশয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট হচ্ছে, আবাসন হচ্ছে। আবার যেসব প্রাকৃতিক জলাশয়ে একসময় ১২ মাস পানি থাকতো, এখন জলবায়ু পরিবর্তন এবং পলি পড়ার কারণে এরকম বহু জলাশয়ে বছরের একটি বড় সময় পানি থাকে না। যে কারণে স্থানীয় জাতের বহু মাছের আবাসস্থল কমেছে, উৎপাদনও কমেছে। বহু মাছের প্রজাতি অস্তিত্বের হুমকিতে রয়েছে। আবার বহু প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রধানত নির্ভর করতে হচ্ছে কৃত্রিম চাষাবাদের ওপর। যদিও চাষাবাদের মাছের উৎপাদন এখন প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছের চেয়ে অনেক বেশি। প্রাকৃতিক জলাশয়ে প্রাকৃতিক নিয়মেই মাছের প্রজনন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মানুষের তেমন ভূমিকা নেই, পরিশ্রমও নেই।

কিন্তু কৃত্রিম চাষাবাদের ক্ষেত্রে হ্যাচারি স্থাপন করে মাতৃ মাছের ডিম বের করে পুরুষ মাছের সাহায্য নিয়ে যান্ত্রিক উপায়ে মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়। সেগুলিও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হয়ে থাকে। এক শ্রেণীর মধ্যবর্তী পোনা ব্যবসায়ী হ্যাচারি মালিকদের কাছ থেকে পোনা কিনে নিয়ে পুকুর মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। তবে কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত মাছের স্বাদ প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছের মত হয় না। এক সময় হ্যাচারিতে কেবল পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া আর কার্প জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদিত হতো। এখন পাবদা, শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, গোলসা, টাকি, মেনিসহ নানা জাতের ছোট প্রজাতির মাছেরও পোনা উৎপাদিত হচ্ছে। এসব পোনা ফিশারিতে বা পুকুরে অবমুক্ত করে খাবার উপযোগী করা হচ্ছে। এসব ছোট প্রজাতির মাছ এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আবাদ হচ্ছে। বাজারে এখন এসব চাষ করা মাছেরই দাপট চলছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমকে ডিমওয়ালা মাছ শিকার ও বাজারে বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে জানান, সরকার ইলিশের ডিম পারার মৌসুমের মত মিঠা পানির প্রাকৃতিক জলাশয়ের ক্ষেত্রেও ডিমওয়ালা মাছের মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দরকার। প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের প্রজনন অনেক বেড়ে যেতে পারে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে ডিমওয়ালা মাছ রক্ষার জন্য প্রচারণা করা হয়।