গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবাদপত্র একটি স্বাধীন গণসংযোগ মাধ্যম। এটি মানুষের মতামত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। সংবাদপত্র সারাবিশ্বে কী ঘটছে তা আমাদেরকে বলে দেয়। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিচিত্র খবর বহন করে এটি আমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়। সংবাদপত্র ছাড়া আমরা আমাদের জীবন কল্পনাই করতে পারি না। এটি আধুনিক সভ্যতার ধারক-বাহক। মানবজীবনের নানা প্রয়োজন সাধনে এর স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের সংবাদপত্র আছে। সেগুলো হলো– দৈনিক, আর্ধ-সাপ্তাহিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক, বার্ষিক ইত্যাদি।
সংবাদপত্রের ইতিহাস প্রাচীন। মানুষের জানার আগ্রহ ও তথ্য সংগ্রহের প্রবণতা থেকে সংবাদপত্রের উৎপত্তি। প্রথম সংবাদপত্রের প্রচলন হয় চীন দেশে। পাক-ভারত উপমহাদেশের সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে সর্বপ্রথম হাতে লেখা সংবাদপত্র চালু হয়। ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাবেথের সময় সর্বপ্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। প্রথম বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ভারতে। বাংলাদেশের তথা ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র “বেঙ্গল গেজেট”। ১৮১৮ সালের মে মাসে ইংরেজ মিশনারিরা সাপ্তাহিক “সমাচার দর্পণ” নামে একটি বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। ১৮১৮ সালেই প্রকাশিত হয় বাঙালি পরিচালিত প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক ”বাঙ্গালা গেজেট”। “ইন্ডিয়ান গেজেট” উপমহাদেশের প্রথম সংবাদপত্র।
সংবাদপত্র বিশ্বের দর্পণ ও বিশ্ব সভ্যতার মাপকাঠি। যেন আমাদের এ বিশাল পৃথিবীটা কল্পনাতীতভাবে একটি ক্ষুদ্র গোলকে পরিণত হয়েছে। এটি শিক্ষিত মানুষের মনের খোরাক। এটি ছাড়া সভ্য সমাজ একদিনও চলতে পারে না। বর্তমান যুগে সংবাদপত্র পাঠ করা খুবই জরুরি। সংবাদপত্র পাঠ খুবই ভালো অভ্যাস। সংবাদপত্র জ্ঞানের ভান্ডার। এটি পাঠে মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। একটা সময় দেখা যেতো আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরাই প্রধানত সংবাদপত্র পাঠ করে। একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চাকরিজীবিও তাদের কর্মক্ষেত্রে বসে পত্রিকা পড়ে। সংবাদপত্রের পাঠক হিসেবে সংসারী নারীদের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন তা আর দেখা যায় না।
আমাদের জাতিকে আরও যথাযথভাবে গড়ে তুলতে হলে সংবাদপত্র পাঠে আরও উৎসাহিত করতে হবে। একটি সভ্য জাতির কর্ণকুহরে সর্বদাই সচেতনার বার্তা ভেসে বেড়ায়। এ সচেতনার সবচেয়ে বড় অংশটিই আসে সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সংবাদপত্রকে বিশ্বের আইনসভা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই আইনসভার সদস্য হতে হলে অবশ্যই সংবাদপত্র পাঠ করতে হবে। সংবাদপত্র বিশ্ব সভ্যতার তাৎক্ষণিক আয়না। এটা জ্ঞানার্জনের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। সংবাদপত্র পাঠ আমাদেরকে আনন্দ ও জ্ঞান উভয় প্রদান করে। এটা আমাদেরকে গণমত সৃষ্টিতেও সাহায্য করে। কেউ কেউ বিভিন্ন ভাষা শিখতে সংবাদপত্র পড়ে। সংবাদপত্রের জায়গাগুলো বিভিন্ন খবরাখবরে জন্য নির্দিষ্ট থাকে। এটা পাঠককে প্রত্যাশিত খবর সহজেই পেতে সহায়তা করে। যে কারণে সব ক্ষেত্রের লোকজন নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে সংবাদপত্র পড়ে।
গণতান্ত্রিক দেশে রাজ্যশাসন করে শাসক নয়–জনমত। এই জনমত গঠনের একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম সংবাদপত্র। একটি সংবাদপত্র সত্য, সুন্দর এবং সঠিক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমি সরকারহীন সংবাদপত্র চাইব, না সংবাদপত্রহীন সরকার চাই, আমি প্রথমটাই বরণ করে নেব।
সংবাদপত্র অনেক সময়ে ভুল ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করে। ফলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মানুষকে উত্তেজিত করা কখনোই সংবাদপত্রের কাজ নয়। সেজন্যই সংবাদপত্রগুলো সর্বদা সঠিক সংবাদ পরিবেশন করা উচিত। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যাতে দেশ ও জাতির অকল্যাণ ও গণতান্ত্রিক অনুশীলনের প্রতিপক্ষ না হয়ে ওঠে সেদিকে সচেতন থাকতে হবে। তাইতো, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন– সংবাদপত্র যতই অধিক এবং যতই অবাধ হইবে, স্বভাবিক নিয়ম অনুসারে দেশ ততই আত্মগোপন করিতে পারিবে না।
লেখক: মোঃ রনি, শিক্ষার্থী, বিবিএ (অনার্স) হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত, রামগঞ্জ মডেল ডিগ্রি কলেজ, লক্ষ্মীপুর।