চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিজ ইউনিয়নেই চাকুরী করে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, পরিবারের লোকজনের বিভিন্ন নামে প্রকল্প আনা, চাল বিতরণে অনিয়ম সহ বিভিন্ন অভিযোগে এবার হাতেনাতে ধরা পড়লো মোঃ ইউনুছ তালুকদার।

ঈদুল ফিতর কে সামনে রেখে এক কোটি হত দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারে ১০ কেজি করে বিনামূল্যে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
১৬ ই মার্চ রবিবার সকাল থেকে ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নে অসহায় ও হত দরিদ্রের মাঝে ভিজিএফের চাল বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। চাল সঠিক ভাবে বিতরন করা হয় কিনা দেখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ ইউসুফ জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যদের থাকতে বলেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির ফরিদগঞ্জ পৌর শাখার সদস্য আব্দুল রহমান মিয়াজী, মাহবুব রাব্বানী, জাতীয় নাগরিক কমিটি ১৬ নং রুপসা ইউনিয়নের সদস্য রাকিব পাঠান, পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন সদস্য মোস্তফা কামাল সহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। চাল বিতরণ করার সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা দেখেন যে ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইউনুস তালুকদার ৬ টি কার্ডে তার ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী হাবিব তালুকদারের স্ত্রী আসমা আক্তারকে ১০ কেজি করে মোট ৬০ কেজি চাউল দিচ্ছে। চালের কার্ড গুলো ছিল ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী হাবিব তালুকদারের স্ত্রী আসমা আক্তারের নিকট। কি ভাবে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর নিকট ৬ টি কার্ড গেল তার ব্যাখ্যা ইউনুস তালুকদারের নিকট জানতে চাইলে কোন উত্তর দেয়নি ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইউনুস তালুকদার।

জানা যায় মোঃ ইউনুস তালুকদার ৭নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সাছিয়াখালী গ্রামের মরহুম লোকমান তালুকদারের সন্তান। ছাত্রজীবনে এই ইউনুছ তালুকদার ফরিদগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম শামসুল হক ভুঁইয়া গ্রুপে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুব রহমানের সাথে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে সামনের সারিতে ছিল তার অবস্থান। ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটবিহীন ফরিদগঞ্জ থেকে সাংবাদিক শফিকুর রহমান এমপি হলে তখন থেকে আবার এই ফ্যাসিস্ট গ্রুপে রাজনীতি করেন এই ইউনুস তালুকদার।
সাংবাদিক শফিকুর রহমানের ডান হাত খাজা আহম্মদ এর সাথে যোগসাজশে তার হিসাব সহকারী কাম- কম্পিউটার অপারেটে ২০২২ সালের প্রথমে চাকুরী হয় তার। কয়েক মাস পর এমপি শফিকুর রহমানের সুপারিশে ২১ শে এপ্রিল ২০২২ সালে ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দোসর ফ্যাসিস্ট এই ইউনুস তালুকদার আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে সমাবেশে ছিলেন সয়ংক্রিয়। আওয়ামীলীগের রাজনীতির প্রভাব দেখিয়ে নিজের ইচ্ছে মত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তোলেন।
ইউনিয়ন সচিবের সাইন নকল করে চেক জ্বালিয়াতি, বিভিন্ন সেবার নামে অর্থ আদায়, ইউডিসির উদ্যোক্তাকে জিম্মি করে নিজে ইউনিয়ন পরিষদে বসেই পাসপোর্ট, এন আইডি, বিভিন্ন নিয়োগের আবেদন, জন্মনিবন্ধন করে অর্থ আদায় করে নিজে ভোগ করতেন। অথচ এগুলো তার কাজ না।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) ২০০৯ সনের ৬১ নং আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর এর কর্মবণ্টনের ১৪ টি কাজের কথা উল্লেখ থাকলেও ফ্যাসিস্ট এই ইউনুস তালুকদার ব্যস্ত শুধু অর্থ আত্মসাতে। শুধু তাই নয়, ইউনুস তালুকদার অনিয়ম করে সবার অগোচরে নিজের পরিবারের বিভিন্ন লোকজনের নামে বিভিন্ন প্রকল্প এনে অর্থ আত্মসাৎ করতো। পশ্চিম জয়শ্রী নজু পাটোয়ারী বাড়ির ব্রিজের গোড়া হইতে উত্তর দিকের কাঁচা রাস্তা সংস্কারকরণ কাজের ৪০ দিনের কর্মসূচির প্রকল্পে নিজের নামে একাধিক বিকাশ নাম্বার ও পরিবারের বিভিন্ন লোকের নামে বিকাশ নাম্বার দিয়ে দুই ধাপে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন এই প্রতারক ইউনুস তালুকদার। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মহিলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরে চুক্তি ভিত্তিক চাকুরির ব্যবস্থা করে দেন স্ত্রী সিমা আক্তার কে। চুক্তির মেয়াদ বহু আগে শেষ হলেও এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের উর্ধ্বমুখীর এই বাজরে যেখানে মানুষের মৌলিক চাহিদাই পূরণ করা কষ্টসাধ্য সেখানে এই দুর্নীতিবাজ ইউনুছ তালুকদার ১৬ তম গ্রেডে ৯৩০০ টাকা বেতন স্কেলে চাকুরী করে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন বহুতল ভ্রবনের আলিশান বাড়ি। তার এই অর্থের উৎস কি?
জাতীয় নাগরিক কমিটির ফরিদগঞ্জ শাখার সদস্য আব্দুল রহমান মিয়াজী, মাহবুব রাব্বানী, রাকিব পাঠান, মোস্তফা কামাল বলেন আমরা দীর্ঘ দিন এই ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইউনুস তালুকদারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা শুনে আসতেছি। ১৬ ই মার্চ ২০২৫ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদে ১০ কেজি করে চাউল বিতরণ কালে সচিব মোঃ ইউসুফ আমাদের থাকতে বলেন, আমরা সেখানে যাই। সেখানে দেখি মোঃ ইউনুস তালুকদার ৬ টি কার্ডে তার ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী হাবিব তালুকদারের স্ত্রী আসমা আক্তারকে ১০ কেজি করে মোট ৬০ কেজি চাউল দিচ্ছে। আমরা তাকে হাতে নাতে ধরি।
তাদের এক পরিবারে এক ব্যক্তির নিকট মোট ৬টি কার্ড। কার্ডে মধ্যে লেখা নাম্বার গুলো যথাক্রমে ১০১১, ১০১৯, ১০২২, ১০২৩, ১০২৪, ২০২৫। কার্ডগুলো জব্দ করে কিভাবে ইউনুস তালুকদার পরিবারের সদস্য ৬ টি কার্ড পেল তার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে কোন উত্তর দেয়নি ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইউনুস তালুকদার। পরে ইউনিয়ন পরিষদের অফিস সুত্রে তথ্য প্রমাণ সহ তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতীর প্রমাণ আমরা দেখতে পাই।যা আমাদের নিকটও সংরক্ষিত আছে। ইউনুস তালুকদার আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া দোসর। সে যেই ইউনিয়নের জন্মগ্রহণ করছে সেই ইউনিয়নের চাকরি করে কিভাবে?বিভিন্ন সময় তার নিজের নামে ও পরিবারের বিভিন্ন লোকজনের নামে প্রকল্প এনে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। স্বেরাচারী আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে সচিবের সাইন জ্বালিয়াতি করে করেছে লক্ষ লক্ষ টাকা উর্জাপন করেছে। আমরা এই দুর্নীতিবাজদের বিচার চাই।
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ ইউসুফ বলেন সে স্থানীয় হওয়াতে তার ইচ্ছে মত কাজ করতো। আমাদের কথা শুনতো না। নিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করলেও তার স্থানীয় আধিপত্য ও রোশানলের শিকার হতে হতো। বিষয়টি কয়েকবার উপজেলা অফিসে জানিয়েছি। আজ যেটা করেছে সেটাও নিয়ম বহির্ভূত।
স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মোঃ গোলাম জাকারিয়া বলেন বিষয়টি যেহেতু এইমাত্র আপনার মাধ্যমে জেনেছি, আমি ইউনিয়ন পরিষদের নাম অভিযুক্ত ইউনুসের নাম লিখে রাখলাম। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পেলে সরকারি চাকরি বিধি মোতাবেক দ্রুত ব্যবস্থা নিব।
এই বিষয় অভিযুক্ত হিসবা সহকারী কাম -কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইউনুস তালুকদার বলেন কেউ দুধে ধোয়া তুলসী পাতা না। রোজার মাস তাই ছোট ভাইয়ের বউ তার মার কার্ড সহ ৬ টি কার্ড নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বললে তিনি বলেন সব চেয়ারম্যান জানে।