ঢাকা ০৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইটভাটা বন্ধের আগে বিকল্প ভাবুন

শাহরাস্তির হাজারো শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

বিভিন্ন ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের একাংশের সংগৃহিত ছবি।

পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সরকার সারাদেশে ইটভাটা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না নিয়ে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে শাহরাস্তির ইটভাটাগুলোতে কর্মরত হাজারো শ্রমিক, মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ সংকটে পড়বেন।

চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলা কৃষিনির্ভর এলাকা হলেও এখানে ইটভাটা শিল্প অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শত শত পরিবার এই খাতের ওপর নির্ভরশীল।

শাহরাস্তিতে প্রায় ২০টির বেশি ইটভাটা রয়েছে, যা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আশপাশের জেলাগুলোর নির্মাণ প্রকল্পেও ইট সরবরাহ করে। এই ভাটাগুলোতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক সরাসরি কাজ করেন, যাদের মধ্যে অনেকে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কৃষিকাজের ফাঁকে এখানে জীবিকা নির্বাহ করেন।

শুধু ইটভাটা শ্রমিকরাই নন, এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্রাকচালক, মাটি সরবরাহকারী, কয়লা ব্যবসায়ী ও নির্মাণ সামগ্রী বিক্রেতারাও এই খাত থেকে উপার্জন করেন। ফলে হঠাৎ করে ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Model Hospital

শাহরাস্তির একটি ইটভাটার শ্রমিক আব্দুল মান্নান বলেন, “আমাদের পুরো পরিবার এই কাজের ওপর নির্ভরশীল। ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা খাবো কী, সন্তানদের লেখাপড়া চালাবো কীভাবে?”

শুধু শ্রমিকরাই নন, ইটভাটার মালিকরাও বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। আকস্মিকভাবে ভাটা বন্ধ হলে তারা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

পরিবেশবিদরা বলছেন, ইটভাটা শিল্প ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে জ্বালানি-সাশ্রয়ী হফম্যান কিলন, ভাঁজ করা ইট প্রযুক্তি (VSBK), স্বয়ংক্রিয় ব্রিক ফিল্ড (ABF) ইত্যাদির কথা বলা হচ্ছে। এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে এবং কর্মসংস্থান বজায় রেখেই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

সরকারের উচিত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আকস্মিকভাবে ইটভাটা বন্ধ না করা। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের উচিত পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির প্রযুক্তি উৎসাহিত করা, ইটভাটা শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, মালিকদের জন্য প্রযুক্তি হালনাগাদ করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, পরিবেশগত ঝুঁকি কমাতে পর্যায়ক্রমে ইটভাটা সংস্কার করা।

পরিবেশ রক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শ্রমজীবী মানুষের জীবনধারা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং স্থানীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখাও সমান জরুরি। তাই ইটভাটা বন্ধের আগে সরকারকে অবশ্যই বাস্তবসম্মত ও মানবিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ট্যাগস :

ইটভাটা বন্ধের আগে বিকল্প ভাবুন

শাহরাস্তির হাজারো শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

আপডেট সময় : ০৬:৫০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সরকার সারাদেশে ইটভাটা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না নিয়ে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে শাহরাস্তির ইটভাটাগুলোতে কর্মরত হাজারো শ্রমিক, মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ সংকটে পড়বেন।

চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলা কৃষিনির্ভর এলাকা হলেও এখানে ইটভাটা শিল্প অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শত শত পরিবার এই খাতের ওপর নির্ভরশীল।

শাহরাস্তিতে প্রায় ২০টির বেশি ইটভাটা রয়েছে, যা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আশপাশের জেলাগুলোর নির্মাণ প্রকল্পেও ইট সরবরাহ করে। এই ভাটাগুলোতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক সরাসরি কাজ করেন, যাদের মধ্যে অনেকে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কৃষিকাজের ফাঁকে এখানে জীবিকা নির্বাহ করেন।

শুধু ইটভাটা শ্রমিকরাই নন, এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্রাকচালক, মাটি সরবরাহকারী, কয়লা ব্যবসায়ী ও নির্মাণ সামগ্রী বিক্রেতারাও এই খাত থেকে উপার্জন করেন। ফলে হঠাৎ করে ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Model Hospital

শাহরাস্তির একটি ইটভাটার শ্রমিক আব্দুল মান্নান বলেন, “আমাদের পুরো পরিবার এই কাজের ওপর নির্ভরশীল। ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা খাবো কী, সন্তানদের লেখাপড়া চালাবো কীভাবে?”

শুধু শ্রমিকরাই নন, ইটভাটার মালিকরাও বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। আকস্মিকভাবে ভাটা বন্ধ হলে তারা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

পরিবেশবিদরা বলছেন, ইটভাটা শিল্প ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে জ্বালানি-সাশ্রয়ী হফম্যান কিলন, ভাঁজ করা ইট প্রযুক্তি (VSBK), স্বয়ংক্রিয় ব্রিক ফিল্ড (ABF) ইত্যাদির কথা বলা হচ্ছে। এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে এবং কর্মসংস্থান বজায় রেখেই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

সরকারের উচিত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আকস্মিকভাবে ইটভাটা বন্ধ না করা। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের উচিত পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির প্রযুক্তি উৎসাহিত করা, ইটভাটা শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, মালিকদের জন্য প্রযুক্তি হালনাগাদ করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, পরিবেশগত ঝুঁকি কমাতে পর্যায়ক্রমে ইটভাটা সংস্কার করা।

পরিবেশ রক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শ্রমজীবী মানুষের জীবনধারা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং স্থানীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখাও সমান জরুরি। তাই ইটভাটা বন্ধের আগে সরকারকে অবশ্যই বাস্তবসম্মত ও মানবিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।