ঢাকা ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিনদেশি গাছে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও জীববৈচিত্র্য

মনিরুল ইসলাম মনির : বহিরাগত প্রজাতি হিসেবে আকাশি, ম্যানজিয়াম, রাবার, ইউক্যালিপটাসসহ নানা ধরনের গাছ পরিচিত। এসব গাছ দিয়ে বনায়নে কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতি বয়ে আনছে বলে গবেষক ও কৃষকদের অভিযোগ।

Model Hospital

সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্রুত বর্ধনশীল ও মুনাফা লাভের আশায় গত কয়েক যুগ ধরে বিদেশি প্রজাতির এসব গাছ দিয়ে বনায়নের হিড়িক শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সামাজিক বনায়ন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে বিদেশি গাছ লাগানো হয়। এতে কৃষি, মৎস্য চাষাবাদে ক্ষতি ছাড়াও পশু-পাখির খাদ্য তৈরি না হওয়ায় পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। দেশীয় প্রজাতির মূল্যবান কাঠ ও ফলের গাছ এবং ঔষধি বৃক্ষের চাষাবাদ উৎপাদনের ও সংরক্ষণের বিষয়টি প্রায় উপেক্ষিত হয়ে আছে।

গবেষকদের মতে, বিদেশি গাছগুলো স্থানীয় প্রজাতির জায়গা দখল করে সেগুলোকে বিপন্ন করে তোলে। গাছপালা বা পশু-পাখির যে কোনো প্রজাতি ভিন্ন পরিবেশ থেকে এনে বিস্তার ঘটতে দিলে কালক্রমে তা হয়ে ওঠে আগ্রাসি প্রজাতি। বর্তমানে দেশীয় প্রজাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বহিরাগত প্রজাতি। প্রয়াত প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মাও এসব গাছের ক্ষতিকর বিষয়ে গ্রন্থাবলিতে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তার মতে, ‘ইউক্যালিপটাস, শিশু, মেহগনি, রেইনট্রি এই গাছগুলো অত্যাধিক পানি শোষণ করে জমি শুকিয়ে ফেলে। শিকড় গভীরে প্রোথিত না হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আশপাশে অন্য গাছপালা জন্মাতে দেয় না। আমাদের দেশে দরকার জলজ উদ্ভিদ। এখানে জলজ জায়গা বেশি। শিকড় গভীরে প্রোথিত হয়। ফলে পাশে অন্যকিছুও জন্মাতে পারে।

বন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, বহিরাগত প্রজাতির গাছ-গাছালি পশু-পাখির খাবার তৈরি করে না। ব্যাপক বিস্তারে অন্য গাছগুলোর সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। যে কারণে জীববৈচিত্র্যের জন্য বহিরাগত প্রজাতির গাছ খুবই ক্ষতিকর।

মতলব উত্তর উপজেলার সালাউদ্দিন, ফয়েজ আহমেদ, ফারুক হোসেন’সহ কয়েক জন কৃষক জানান, আকাশমনি, ম্যানজিয়াম এসব গাছ-গাছালি কৃষিজমি বিনষ্ট করে। মাছের চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা আরো বলেন, আকাশি গাছের ছায়ায় ধানের চারা থেকে শুরু করে কোনো ধরনের চাষাবাদ সম্ভব হয় না।

বহিরাগত গাছগুলো কৃষির জন্য ক্ষতিকর। আকাশি, ইউক্যালিপটাস গাছের ছায়ায় ধানগাছের পাতা মোড়ানো রোগসহ বিভিন্ন ছত্রাকে আক্রান্ত করে। এসব রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক অথবা বালাইনাশক ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আকাশি গাছের পাতা ঘন, এমনকি সূর্যের আলো মোটেও পড়ে না। এগুলো প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর। গাছের পাতা পড়ে কৃষিখেত বিনষ্ট হয়। ক্ষতিকর এসব গাছ রোপণ থেকে সবাইকে নিরুৎসাহিত করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উপজেলা ফরেস্টার বলেন, বর্তমানে এসব গাছ রোপণ এবং সরকারি নার্সারিগুলোতে আকাশমনি, ম্যানজিয়াম গাছের চারা উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

ভিনদেশি গাছে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও জীববৈচিত্র্য

আপডেট সময় : ০১:০১:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২২

মনিরুল ইসলাম মনির : বহিরাগত প্রজাতি হিসেবে আকাশি, ম্যানজিয়াম, রাবার, ইউক্যালিপটাসসহ নানা ধরনের গাছ পরিচিত। এসব গাছ দিয়ে বনায়নে কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতি বয়ে আনছে বলে গবেষক ও কৃষকদের অভিযোগ।

Model Hospital

সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্রুত বর্ধনশীল ও মুনাফা লাভের আশায় গত কয়েক যুগ ধরে বিদেশি প্রজাতির এসব গাছ দিয়ে বনায়নের হিড়িক শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সামাজিক বনায়ন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে বিদেশি গাছ লাগানো হয়। এতে কৃষি, মৎস্য চাষাবাদে ক্ষতি ছাড়াও পশু-পাখির খাদ্য তৈরি না হওয়ায় পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। দেশীয় প্রজাতির মূল্যবান কাঠ ও ফলের গাছ এবং ঔষধি বৃক্ষের চাষাবাদ উৎপাদনের ও সংরক্ষণের বিষয়টি প্রায় উপেক্ষিত হয়ে আছে।

গবেষকদের মতে, বিদেশি গাছগুলো স্থানীয় প্রজাতির জায়গা দখল করে সেগুলোকে বিপন্ন করে তোলে। গাছপালা বা পশু-পাখির যে কোনো প্রজাতি ভিন্ন পরিবেশ থেকে এনে বিস্তার ঘটতে দিলে কালক্রমে তা হয়ে ওঠে আগ্রাসি প্রজাতি। বর্তমানে দেশীয় প্রজাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বহিরাগত প্রজাতি। প্রয়াত প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মাও এসব গাছের ক্ষতিকর বিষয়ে গ্রন্থাবলিতে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তার মতে, ‘ইউক্যালিপটাস, শিশু, মেহগনি, রেইনট্রি এই গাছগুলো অত্যাধিক পানি শোষণ করে জমি শুকিয়ে ফেলে। শিকড় গভীরে প্রোথিত না হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আশপাশে অন্য গাছপালা জন্মাতে দেয় না। আমাদের দেশে দরকার জলজ উদ্ভিদ। এখানে জলজ জায়গা বেশি। শিকড় গভীরে প্রোথিত হয়। ফলে পাশে অন্যকিছুও জন্মাতে পারে।

বন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, বহিরাগত প্রজাতির গাছ-গাছালি পশু-পাখির খাবার তৈরি করে না। ব্যাপক বিস্তারে অন্য গাছগুলোর সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। যে কারণে জীববৈচিত্র্যের জন্য বহিরাগত প্রজাতির গাছ খুবই ক্ষতিকর।

মতলব উত্তর উপজেলার সালাউদ্দিন, ফয়েজ আহমেদ, ফারুক হোসেন’সহ কয়েক জন কৃষক জানান, আকাশমনি, ম্যানজিয়াম এসব গাছ-গাছালি কৃষিজমি বিনষ্ট করে। মাছের চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা আরো বলেন, আকাশি গাছের ছায়ায় ধানের চারা থেকে শুরু করে কোনো ধরনের চাষাবাদ সম্ভব হয় না।

বহিরাগত গাছগুলো কৃষির জন্য ক্ষতিকর। আকাশি, ইউক্যালিপটাস গাছের ছায়ায় ধানগাছের পাতা মোড়ানো রোগসহ বিভিন্ন ছত্রাকে আক্রান্ত করে। এসব রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক অথবা বালাইনাশক ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আকাশি গাছের পাতা ঘন, এমনকি সূর্যের আলো মোটেও পড়ে না। এগুলো প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর। গাছের পাতা পড়ে কৃষিখেত বিনষ্ট হয়। ক্ষতিকর এসব গাছ রোপণ থেকে সবাইকে নিরুৎসাহিত করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উপজেলা ফরেস্টার বলেন, বর্তমানে এসব গাছ রোপণ এবং সরকারি নার্সারিগুলোতে আকাশমনি, ম্যানজিয়াম গাছের চারা উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে।