মাসুদ হোসেন : রাস্তার বেহাল দশা, বেপরোয়া গতির যানবাহন, লাইসেন্স বিহীন চালক, আর ট্রাফিক সিস্টেম না মানার ফলে চাঁদপুরের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়ক মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ কারনে গত ৬ দিনে জেলায় প্রাণহানি ঘটেছে ৮ জনের। আহত হয়েছেন অনেকে। নিহতদের মধ্যে ৫ জনই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। বাকী তিনজন হচ্ছে একজন স্কুল শিক্ষিকা, একজন সিএনজি চালক ও অন্যজন সিএনজি যাত্রী।
জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার সময় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের মহামায়া হানাফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু হয়। এদিন সাজ্জাদ, আসিফ ও শান্ত নামের তিন বন্ধু মিলে কপি হাউজে কপি খেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালালে মহামায়া এলাকায় আসলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্থানীয় এক পথচারীর সাথে সজোরে ধাক্কা লেগে সাথে সাথে মোটরসাইকেলটি রাস্তার উপরে ছিটকে পড়ে যায়। পথচারী নজরুল ইসলাম পাটওয়ারীসহ তিন বন্ধুর অবস্থা খারাপ দেখে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দ্রুত ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোটরসাইকেল আরোহী একজনকে মৃত ঘোষনা করেন।
দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের অপর দুই আরোহীসহ পথচারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথিমধ্যে আরেক আরেজনের মৃত্যু হয়। তারা দুজনেই চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের হাঁপানিয়া গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির নজরুল ইসলাম পাটওয়ারীর একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান শান্ত (১৭) ও আক্তার পাটওয়ারীর ছেলে আশ্রাফুল ইসলাম আসিফ (১৭)। তারা দুজনেই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দুইজন।
এছাড়াও গত ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুরের কচুয়া-গৌরীপুর বিশ্বরোডের কচুয়া ডাক্তার বাড়ীর নামক স্থানে বিআরটিসি বাসচাপায় সিএনজিতে থাকা ৩ কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন কুমিল্লা ভিক্টরিয়া কলেজের মার্স্টাসের শিক্ষার্থী কচুয়া উপজেলার দোহাটি গ্রামের উর্মি মজুমদার ও কোয়া গ্রামের রিফাত। আরেকজন হলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন। কুমিল্লা ভিক্টরিয়া কলেজের মার্স্টাসের শিক্ষার্থী উর্মি মজুমদার ও রিফাত হোসেন। একটি পরীক্ষায় অংশ নিতে তারা সকালে বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়েন। যাওয়া হলো না সেই শিক্ষাঙ্গনে। সাদ্দাম হোসেন একটি ভাইবা পরীক্ষায় অংশ নিতে বেরিয়ে পড়েন। তারও যাওয়া হলো না নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বালিয়াতলী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে শিক্সার্থী মোঃ ইব্রাহিম ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে সিএনজি চালক মনির হোসেন।
এদিকে গত ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড নাওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা ফাতেমা-তুজ-জোহরা (৩০) স্কুলে যাওয়ার পথে বানিয়াচো এলাকায় অটোরিক্সার সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উনার অবস্থা অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়।
পরবর্তীতে ফাতেমা-তুজ-জোহরার চাঁদপুরে তার বাবার বাড়িতে অবস্থানরত ২৯ নভেম্বর সোমবার মধ্যরাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, এক মেয়ে, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এর আগে গত ২০ নভেম্বর শনিবার রাত ১১টার দিকে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের কচুয়া উপজেলার খাজুরিয়া বাজারের পূর্ব পাশে ভবানীপুর রাস্তার মূখে বালুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী সিএনজি চালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছে। জানা যায়, কুমিল্লাগামী ট্রাক ও শাহরাস্তিগামী সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে সিএনজি চালক ও এক যাত্রী মারা যায়।এবং অপর যাত্রী হাজীগঞ্জের মৈশামূড়া গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে রিপন হোসেন (৩০) কে গুরুতর আহত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। নিহতরা হচ্ছেন, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন রান্ধুনীমুড়া আড়াখালের হারুনুর রশিদের ছেলে সিএনজি চালক সোহেল (৩৫) এবং একই উপজেলার মৈশামুড়া গ্রামের মিস্ত্রি বাড়ির সেকুল সরকার (৩২)।
একই সপ্তাহে শাহরাস্তিতে দুই সিএনজি অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছে। ২৬ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কালিয়াপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা আহতদেরকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আয়েশা সিদ্দিকা তাদের মধ্যে ৪ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহতরা হলেন, হাজীগঞ্জের গন্ধব্যপুর চর বাড়ির মনির হোসেনের স্ত্রী সুমি (২২), কচুয়ার আশ্রাফপুর গ্রামের মৃতঃ আঃ বারেকের পুত্র আলমগীর (৪৭) ও তার স্ত্রী শাহিনা বেগম, শাহরাস্তির যাদবপুর গ্রামের মনির হোসেনের পুত্র জসিম ও ময়মনসিংহের হালুয়া ঘাটের হিরনের স্ত্রী সুধা রানী (৩০)।
চাঁদপুরের ছোট বড় সড়কগুলোতে যে হারে দুর্ঘটনা বেড়ে চলছে তা রোধ করা জরুরি প্রয়োজন। এজন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের ও সড়ক বিভাগের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল। তা না হলে রাস্তার বেহাল দশা, বেপরোয়া গতির যানবাহন, লাইসেন্স বিহীন চালক, আর ট্রাফিক সিস্টেম না মানার প্রবণতা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কের সমস্যাগুলোর কারনে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেড়ে চলে যেতে হবে অনেক মা বাবার সন্তান কিংবা পরিবারের আপন মানুষটিও।