ঢাকা ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন গণমাধ্যম

মোহাম্মদ অংকন : দেশ, জাতি ও সমাজের সামগ্রিক পরিবর্তন, উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও বিশ্বায়নের সাথে সংযোগ রক্ষায় গণমাধ্যমের বিকল্প নেই। গণমাধ্যমে উঠে আসছে প্রান্তিক কৃষকের সফলতার খবর থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকতার অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা রাজনৈতিক নেতার দুঃশাসন, প্রশাসনের স্বেচ্ছারিতাসহ সবা কিছুই।

Model Hospital

সংবাদ পাঠের মধ্যদিয়েই কি তার মূল্য শেষ হয়ে যাচ্ছে? কখনোই নয়। বরং গণমাধ্যম কাজ করছে হাতিয়ার হিসেবে। যখনই একটি ইস্যু গণমাধ্যমে আসছে, তা সমাধান ও উত্তরণের বিষয়ে সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ফলে গণমাধ্যমকে অতিগুরুপূর্ণ আনুষঙ্গিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যারা গণমাধ্যমে কাজ করেন, তাদেরও বিশেষ সম্মানের চোখে দেখা হয়। যেসব গণমাধ্যম সত্য, নিরপেক্ষ সংবাদ সংগ্রহ, প্রচার ও পরিবেশন করে, নিঃসন্দেহে ওই সব সংবাদমাধ্যম সমাজে গতি আনতে অংশীদার হতে কাজ করে।

মূলধারার সংবাদমাধ্যম যেমন টেলিভিশন, রেডিও ও প্রিন্ট পত্রিকার পাশাপাশি বর্তমানে অনলাইন গণমাধ্যম বেশ অগ্রগামী। কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল বেশ ভালো করছে। জনপ্রিয়তা, সংবাদ পরিবেশনে সূক্ষ্মতা কিংবা দায়িত্বশীলতার দিক দিয়ে পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে। এসব অনলাইন পোর্টালকে সুশৃঙ্খল করতে সরকার নিবন্ধনের আওতায় এনেছে। কৈফিয়তের জায়গা তৈরি করতে পারলে অনলাইন গণমাধ্যমও সঠিক, সত্য ও তথ্যবহুল সংবাদ পরিবেশনের দিকে নজর বাড়াবে। নিবন্ধনের মাপকাঠিতে অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা তাদের বৈধ পরিচয়পত্র পাচ্ছেন। বাকি যেসব নিউজ পোর্টাল এখনো অনিবন্ধিত রয়েছে, সেখানে যেসব সংবাদকর্মী কাজ করছেন, তারা সাংবাদিকতা চর্চার মধ্যদিয়ে আগাচ্ছেন যা তাদের উৎসাহিত করছে। তাই বলা যেতে পারে- সাংবাদিকতা শেখার অনবদ্য প্লাটফর্ম ‘অনলাইন গণমাধ্যম’।
সাংবাদিকতার প্রতি অনেকেরই আগ্রহ আছে। কিন্তু যোগ্যতার ঘাটতি ও অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকেই মূলধারার গণমাধ্যমে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না।

তারা ঝুঁকছেন অনলাইন গণমাধ্যমে। এটির ইতিবাচক দিক রয়েছে। প্রথম কথা হচ্ছে, তারা শিখতে পারছেন কিভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়, লিখতে হয়, পরিবেশন করতে হয়। অনলাইন গণমাধ্যমের দ্বারা শেখার মাধ্যমে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মূলধারার গণমাধ্যমে কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। শেখার আগ্রহ, আগ্রহবোধ ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে কাজ করলে অনলাইন গণমাধ্যমের দ্বারাও সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। একজন আগ্রহী তরুণকে সাংবাদিক হিসেবে কাজের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে যে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করছে অনলাইন গণমাধ্যম তা প্রশংসার দাবি রাখে।

দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অনলাইন গণমাধ্যম। কিন্তু অভিযোগ আছে, অনলাইন গণমাধ্যম চালু করে প্রতিনিধি নিয়োগের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ। সারা দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগবাবদ পাঁচশ’, এক হাজার, দুই হাজার টাকার বিনিময়ে আইডি কার্ড দেয়া হচ্ছে। আবার কিছু দিন পর উধাও হয়ে যাচ্ছে তারা। খুঁজে ফিরছে অন্য গ্রাহককে। শুধু অনলাইন গণমাধ্যমের মালিকরা যে এসব করছেন, তা নয়। অর্র্থের বিনিময়ে কার্ড নিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিতেও লিপ্ত কিছু অসাংবাদিক। তারাই সংবাদ প্রকাশের নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। একজন ব্যক্তির অপরাধ সংশ্লিষ্টতা দেখে পত্রিকায় প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে সে বিষয় ধামাচাপা দিচ্ছেন।

এ ধরনের অপসাংবাদিকতার কারণে অনলাইন গণমাধ্যমসহ মূলধারার গণমাধ্যমের ভাবমর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণে নজর দিতে পারলে অনলাইন মাধ্যম আরো পরিশীলিত হবে। মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর আয়ের সুযোগ আছে। বিপরীতে অনলাইন গণমাধ্যমের আয়ের একমাত্র পথ ‘গুগল এডসেন্স’। যারা মানদণ্ড বজায় রাখতে পারে, তারা ‘গুগল এডসেন্স’ থেকে আয় করার মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত পরিশ্রমের পারিশ্রমিক হাসিল করতে পারেন। কিন্তু যারা এ বিষয়ে অনভিজ্ঞ, তারা অনলাইন গণমাধ্যমকে পুঁজি করে চাঁদাবাজি, ভাঁওতাবাজিসহ অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। যার কারণে বেড়েছে হলুদ সাংবাদিকতা। ব্যক্তিবিশেষের এজেন্ডা বাস্তবায়নেও গড়ে উঠছে ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল। শুধু নিজের গুণকীর্তন প্রচারের জন্য অনেকে করছেন অনলাইন পোর্টাল। এটি গণমাধ্যমের জন্য হুমকি।
অনলাইন গণমাধ্যমকে কাঙ্ক্ষিত মানে নিতে হলে এর মানদণ্ড নির্ধারণ জরুরি। অনলাইন গণমাধ্যম চালুর ক্ষেত্রে বিধিমালা তৈরি করা যেতে পারে। অনুমোদনের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যমের যাত্রা শুরু হলে এর দ্বারা সংঘটিত অনৈতিক কাজগুলো বন্ধ হবে আশা করা যায়।

লেখক : সাংবাদিক

ইমেইল : md.angkon12@gmail.com

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

অনলাইন গণমাধ্যম

আপডেট সময় : ১২:১১:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১

মোহাম্মদ অংকন : দেশ, জাতি ও সমাজের সামগ্রিক পরিবর্তন, উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও বিশ্বায়নের সাথে সংযোগ রক্ষায় গণমাধ্যমের বিকল্প নেই। গণমাধ্যমে উঠে আসছে প্রান্তিক কৃষকের সফলতার খবর থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকতার অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা রাজনৈতিক নেতার দুঃশাসন, প্রশাসনের স্বেচ্ছারিতাসহ সবা কিছুই।

Model Hospital

সংবাদ পাঠের মধ্যদিয়েই কি তার মূল্য শেষ হয়ে যাচ্ছে? কখনোই নয়। বরং গণমাধ্যম কাজ করছে হাতিয়ার হিসেবে। যখনই একটি ইস্যু গণমাধ্যমে আসছে, তা সমাধান ও উত্তরণের বিষয়ে সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ফলে গণমাধ্যমকে অতিগুরুপূর্ণ আনুষঙ্গিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যারা গণমাধ্যমে কাজ করেন, তাদেরও বিশেষ সম্মানের চোখে দেখা হয়। যেসব গণমাধ্যম সত্য, নিরপেক্ষ সংবাদ সংগ্রহ, প্রচার ও পরিবেশন করে, নিঃসন্দেহে ওই সব সংবাদমাধ্যম সমাজে গতি আনতে অংশীদার হতে কাজ করে।

মূলধারার সংবাদমাধ্যম যেমন টেলিভিশন, রেডিও ও প্রিন্ট পত্রিকার পাশাপাশি বর্তমানে অনলাইন গণমাধ্যম বেশ অগ্রগামী। কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল বেশ ভালো করছে। জনপ্রিয়তা, সংবাদ পরিবেশনে সূক্ষ্মতা কিংবা দায়িত্বশীলতার দিক দিয়ে পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে। এসব অনলাইন পোর্টালকে সুশৃঙ্খল করতে সরকার নিবন্ধনের আওতায় এনেছে। কৈফিয়তের জায়গা তৈরি করতে পারলে অনলাইন গণমাধ্যমও সঠিক, সত্য ও তথ্যবহুল সংবাদ পরিবেশনের দিকে নজর বাড়াবে। নিবন্ধনের মাপকাঠিতে অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা তাদের বৈধ পরিচয়পত্র পাচ্ছেন। বাকি যেসব নিউজ পোর্টাল এখনো অনিবন্ধিত রয়েছে, সেখানে যেসব সংবাদকর্মী কাজ করছেন, তারা সাংবাদিকতা চর্চার মধ্যদিয়ে আগাচ্ছেন যা তাদের উৎসাহিত করছে। তাই বলা যেতে পারে- সাংবাদিকতা শেখার অনবদ্য প্লাটফর্ম ‘অনলাইন গণমাধ্যম’।
সাংবাদিকতার প্রতি অনেকেরই আগ্রহ আছে। কিন্তু যোগ্যতার ঘাটতি ও অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকেই মূলধারার গণমাধ্যমে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না।

তারা ঝুঁকছেন অনলাইন গণমাধ্যমে। এটির ইতিবাচক দিক রয়েছে। প্রথম কথা হচ্ছে, তারা শিখতে পারছেন কিভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়, লিখতে হয়, পরিবেশন করতে হয়। অনলাইন গণমাধ্যমের দ্বারা শেখার মাধ্যমে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মূলধারার গণমাধ্যমে কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। শেখার আগ্রহ, আগ্রহবোধ ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে কাজ করলে অনলাইন গণমাধ্যমের দ্বারাও সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। একজন আগ্রহী তরুণকে সাংবাদিক হিসেবে কাজের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে যে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করছে অনলাইন গণমাধ্যম তা প্রশংসার দাবি রাখে।

দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অনলাইন গণমাধ্যম। কিন্তু অভিযোগ আছে, অনলাইন গণমাধ্যম চালু করে প্রতিনিধি নিয়োগের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ। সারা দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগবাবদ পাঁচশ’, এক হাজার, দুই হাজার টাকার বিনিময়ে আইডি কার্ড দেয়া হচ্ছে। আবার কিছু দিন পর উধাও হয়ে যাচ্ছে তারা। খুঁজে ফিরছে অন্য গ্রাহককে। শুধু অনলাইন গণমাধ্যমের মালিকরা যে এসব করছেন, তা নয়। অর্র্থের বিনিময়ে কার্ড নিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিতেও লিপ্ত কিছু অসাংবাদিক। তারাই সংবাদ প্রকাশের নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। একজন ব্যক্তির অপরাধ সংশ্লিষ্টতা দেখে পত্রিকায় প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে সে বিষয় ধামাচাপা দিচ্ছেন।

এ ধরনের অপসাংবাদিকতার কারণে অনলাইন গণমাধ্যমসহ মূলধারার গণমাধ্যমের ভাবমর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণে নজর দিতে পারলে অনলাইন মাধ্যম আরো পরিশীলিত হবে। মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর আয়ের সুযোগ আছে। বিপরীতে অনলাইন গণমাধ্যমের আয়ের একমাত্র পথ ‘গুগল এডসেন্স’। যারা মানদণ্ড বজায় রাখতে পারে, তারা ‘গুগল এডসেন্স’ থেকে আয় করার মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত পরিশ্রমের পারিশ্রমিক হাসিল করতে পারেন। কিন্তু যারা এ বিষয়ে অনভিজ্ঞ, তারা অনলাইন গণমাধ্যমকে পুঁজি করে চাঁদাবাজি, ভাঁওতাবাজিসহ অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। যার কারণে বেড়েছে হলুদ সাংবাদিকতা। ব্যক্তিবিশেষের এজেন্ডা বাস্তবায়নেও গড়ে উঠছে ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল। শুধু নিজের গুণকীর্তন প্রচারের জন্য অনেকে করছেন অনলাইন পোর্টাল। এটি গণমাধ্যমের জন্য হুমকি।
অনলাইন গণমাধ্যমকে কাঙ্ক্ষিত মানে নিতে হলে এর মানদণ্ড নির্ধারণ জরুরি। অনলাইন গণমাধ্যম চালুর ক্ষেত্রে বিধিমালা তৈরি করা যেতে পারে। অনুমোদনের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যমের যাত্রা শুরু হলে এর দ্বারা সংঘটিত অনৈতিক কাজগুলো বন্ধ হবে আশা করা যায়।

লেখক : সাংবাদিক

ইমেইল : md.angkon12@gmail.com