স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুর আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মোঃমোজাম্মেল হক পাটোয়ারী দীর্ঘদিনের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎসহ অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় অধ্যক্ষ পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
২রা ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস এর সভাপতিত্বে ম্যানেজিং কমিটি এক বিষেশ গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সভার শুরুতে জেলা প্রশাসক ডাক্তার মোঃ মোজাম্মেল হক পাটোয়ারি অধ্যক্ষ আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল খলিশাডুলী, বাবুরহাট, চাঁদপুর এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এবং তদন্ত প্রতিবেদন পাঠ করে শোনান।
তিনি আরো জানান কলেজের খন্ডকালীন শিক্ষক ডাক্তার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের করা মামলার রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হলেও অধ্যক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি। জুন মাসের বেতন বিলে ডাক্তার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এর নাম না থাকায় সংশোধন পূর্বক উপস্থাপন করতে বলা হলে তিনি তাও করেননি। এমনকি তিনি জুলাই হতে অদ্যাবধি কলেজের শিক্ষকদের বেতন বিল উপস্থাপনও করে নি বিদায় জুলাই হতে অদ্যাবধি কলেজের সকল শিক্ষক ও কর্মচারী বেতন ভাতা পাননি। এছাড়াও অধ্যক্ষ ম্যানেজিং কমিটির অনুমতি ছাড়া কলেজের তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা জনৈক ব্যক্তিকে দিয়েছে এবং একাধিক ভাউচার তৈরি করেও টাকা আত্মসাতের গুঞ্জন রয়েছে।
অধ্যক্ষ ডাক্তার মোজাম্মেল হক পাটোয়ারী নিয়ম নীতি না মেনে খামখেয়ালি ভাবে কলেজ পরিচালনা করেন যা সঠিক নয় বলে জানান কলেজ গভর্নিং বডির মেম্বারগন । গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় বিস্তারিত আলাপ আলোচনায় শেষে সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ মুজ্জামেল হক পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে ও তদন্ত প্রতিবেদন সত্য বলে প্রমাণিত হয়। তাই সভার সকলের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটোয়ারী কে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং উপাধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ আতাহার আলীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জানা যায় চাঁদপুর সদরের মটখোলায় অবস্থিত আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও বেতন ভাতা না দেওয়ায় কলেজের প্রভাষক জসীম উদ্দীন বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
এছাড়া অধ্যক্ষের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেখিয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সহ বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড ঢাকা চেয়ারম্যান ও রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অধ্যক্ষের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রভাষক জসীম উদ্দীনকে কলেজে ঢুকতে না দিয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়া সহ তার বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়। এই ঘটনায় নিম্ন আদালত ও জেলা দায়রা জজ আদালতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার পরেও আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন গভর্নিং বডির সভা আহবান না করে প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা বন্ধ রেখেছেন।
দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা না পেয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীরা খুব কষ্টে তাদের পরিবার স্বজনদের নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বিরুদ্ধে রয়েছে ভুরিভুরি অনেক অভিযোগ। তিনি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনেক দুর্নীতির কিল্লায় পরিণত করেছে। এছাড়াও কলেজ ফান্ডের ও হোমিও বোর্ড থেকে পাওয়া অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক ও কর্মচারীর ৭ মাসের বেতন-ভাতা আটকে রেখেছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত করতে জেলা প্রশাসক সহ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভুক্তভোগীরা। এসময় গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী সহ কলেজ গভর্নিং বডির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
নিম্ন আদালত ও জেলা দায়রা জজ আদালতের রায়ে বাদী প্রভাষক জসীমউদ্দীনের বেতন-ভাতা দেওয়াসহ তাকে কলেজে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার সত্বেও অভিযুক্ত অধ্যক্ষ তা করেনি।
তার কর্মকাণ্ডে গভর্নিংবডির সভাপতিসহ সকল নেতৃবৃন্দরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।
আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চাঁদপুরের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে জাতীয় ও চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় ফলাও ভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। তার অভিযোগ গুলো তদন্ত করে সততা প্রমাণ পেয়েছে প্রশাসন।
তারপরেও অদৃশ্য শক্তির বলে এই দুর্নীতিবাজ অভিযুক্ত অধ্যক্ষ এখনো তার কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করছে। খুব দ্রুত তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত ও কলঙ্কমুক্ত করার জোর দাবি জানান সচেতন মহল।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করেও তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।