চাঁদপুর শহরে আবারও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অস্ত্র নিয়ে মহড়া চালিয়ে হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। পৃথক ঘটনায় দুজন কিশোরকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করায় থানায় মামলা হয় এবং দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। গত কয়েকদিনের কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শহরের বাসিন্দারা।
সোমবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া, থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ সদস্যরা শহরের অভিযান চালায়। এ সময়ে ৮ জন কিশোরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
জানা গেছে, অর্ধশতাধিক পুলিশের একটি দল শহরের কালিবাড়ী, কোর্ট স্টেশন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড, রেললাইন, মিশন রোড, হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, রেললাইন এলাকায়, বড় স্টেশন ও প্রেসক্লাব সড়কে অভিযান চালানো হয়। এসময় সন্দেহভাজন কিশোর ও যুবকদের তল্লাশি করে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ওসি বাহার মিয়া হাসান আলী স্কুলমাঠ এলাকায় থেকে ইয়াবাসহ বাবুরহাট এলাকার শুকুর শেখের ছেলে শামীম শেখ ওরফে মান্না ও মনির মিজির ছেলে তাসফির মিজিকে আটক করতে সক্ষম হয়।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, ‘শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এটি পুলিশের নিয়মিত অভিযান। আটক কিশোরদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তাদের অভিভাবকদের ডাকা হবে।’
ওসি আরও বলেন, ‘অভিযানকালে আমরা রেললাইন এলাকায় সন্ধ্যার পরে কিশোর বয়সীরা যাতে আড্ডা না দিতে পারে সে বিষয়ে স্থানীয়দের সতর্ক করেছি। সেই সঙ্গে শহরের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের ব্যবসায়ীদের কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘শহরে কিশোর গ্যাং দমাতে মডেল থানা-পুলিশ ও ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় সন্দেহভাজন কয়েকজন কিশোরকে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি মাদকসহ দুজনকে ধরতে সক্ষম হয় পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হবে।’
এদিকে, রোববার সন্ধ্যায় শহরের ছায়াবানী এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ঘটে। এতে একপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত ঢালীর ঘাট এলাকার স্কুলছাত্র রাশেদ (১৫)। পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে ধাওয়া করে সড়কে ফেলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। পরে তার সঙ্গীরা তাকে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
এর আগে, শনিবার রাতে শহরের পুরাণ বাজার জাফরাবাদ এলাকায় ওয়াজ শুনতে গিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয় আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সিফাত পাটওয়ারী গুরুতর আহত হয়। তাকেও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গত ৫ আগস্টের পর শহরের কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় রাজনৈতিক ফোরাম, জেলা প্রশাসন, ব্যবসায়ী সংগঠন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে অংশীজনদের একাধিক মতবিনিময় হয়। এসব ফোরামে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট