ঢাকা ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মতলবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাগুরু এম এ ইউসুফ স্যার আর বেঁচে নেই

মতলব উত্তর ব্যুরো : জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাগুরু মতলবের এম এ ইউসুফ স্যার আর বেঁচে নেই। আজ ১৫ ডিসেম্বর বুধবার বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন(ইন্নালিল্লাহ…….রাজেউন)।

Model Hospital

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি ৫ ছেলে, ৩ মেয়ে ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮:৩০ মিনিটে ফরাজীকান্দি মাদ্রাসা মসজিদের সামনে এবং সকাল ১০ টায় মরহুমের নিজবাড়ী সংলগ্ন রামদাশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ২য় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নাউরী আহম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

বরেন্য শিক্ষাগুরু এমএ আবু ইউছুফ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর ইউনিয়নাধীন বোরোচর গ্রামে মরহুম লাল মিয়া সরকারের সংসারে ২রা আগষ্ট ১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহন করেন। এম এ ইউসুফ আড়াই বছর বয়সে বোরোচর থেকে স্থানান্তরিত হয়ে বাড়ি করেন তার পরিবার বর্তমান আবাসস্থল ১২নং ফরাজীকান্দি ইউনিয়নাধীন রামদাশপুর গ্রামে। পিতার সংসারে পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই এম এ ইউসুফ ছিলেন সকলের মধ্যমণী। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের প্রফেসর প্রখ্যাত লেখক প্রয়াত হাফেজ হাবিবুর রহমান (MNA-মেম্বার অফ ন্যাশনাল এসেম্বলি) তার ভাতিজা এম এ ইউসুফ দিয়েছেন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। ধীরে ধীরে মেধার প্রসার ও লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে উঠে কিশোর এম এ ইউসুফ।

১৯৫৯ সালে ছেঙ্গারচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন (বর্তমান SSC) পাশ করেন। ১৯৬২ সালে সিলেটের সরকারী মুরারী চাঁদ কলেজ (বর্তমান সরকারী এম সি কলেজ) থেকে আইএ সম্পন্ন করেন লাখো হৃদয়ের প্রিয় শিক্ষাগুরু মোঃ আবু ইউসুফ। ১৯৬৪ সালে সরকারী মুরারী চাঁদ কলেজ থেকে বিএ সম্পন্ন করেন প্রিয় শিক্ষাগুরু। ১৯৬৪ সালের আগষ্টে এম এ ইউসুফ প্রিয় শিক্ষক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রয়াত বদিউর রহমান পাটোয়ারীর অনুরোধে ছেঙ্গারচর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন শিক্ষকতার মহান পেশায়।

শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা বিএড কলেজ থেকে বিএড সম্পন্ন করেন স্পষ্টভাষী এই আবু ইউসুফ। ১৯৬৯ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারস্থ নুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। নানাগুণে গুনান্নীত ও ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন এম এ ইউসুফ ১৯৭২ সালে নুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। তিনি সততা, শিক্ষার কৌশল, ও পরিচালনায় ছিলেন দারুণ পারদর্শী তাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন সকলের কাছে। ১৯৭৭ সালে ১৬ই জানুয়ারী হাজারো মানুষের অনুরোধে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মতলবের ঐতিহ্যবাহী নাউরী আহম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। তখন বিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা ছিল সবমিলিয়ে প্রায় ২৭০ জনের মতো।

অজস্র ভালোবাসায় সিক্ত আবু ইউসুফ ২০০০ সালে চাঁদপুর জেলায় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে মতলব দক্ষিণ উপজেলার পিংড়ায় অবস্থিত হজরত শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেন। ২০০২ সালে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন প্রধান শিক্ষকের পদে। ২০০৩ সালে হজ্ব পালন করেন ধর্মভীরু প্রিয় ব্যাক্তিত্ব এম এ ইউসুফ। ২০০৪ সালে মহান শিক্ষাগুরু অবসর নেন তার কর্ম জীবন শিক্ষকতা থেকে। সংসার জীবনে পাঁচ পুত্র সন্তান ও তিন কন্যা সন্তানের জনক ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চীরতরে হারিয়েছেন তার সহধর্মিনীকে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

মতলবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাগুরু এম এ ইউসুফ স্যার আর বেঁচে নেই

আপডেট সময় : ০৩:১৪:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২১

মতলব উত্তর ব্যুরো : জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাগুরু মতলবের এম এ ইউসুফ স্যার আর বেঁচে নেই। আজ ১৫ ডিসেম্বর বুধবার বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন(ইন্নালিল্লাহ…….রাজেউন)।

Model Hospital

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি ৫ ছেলে, ৩ মেয়ে ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮:৩০ মিনিটে ফরাজীকান্দি মাদ্রাসা মসজিদের সামনে এবং সকাল ১০ টায় মরহুমের নিজবাড়ী সংলগ্ন রামদাশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ২য় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নাউরী আহম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

বরেন্য শিক্ষাগুরু এমএ আবু ইউছুফ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর ইউনিয়নাধীন বোরোচর গ্রামে মরহুম লাল মিয়া সরকারের সংসারে ২রা আগষ্ট ১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহন করেন। এম এ ইউসুফ আড়াই বছর বয়সে বোরোচর থেকে স্থানান্তরিত হয়ে বাড়ি করেন তার পরিবার বর্তমান আবাসস্থল ১২নং ফরাজীকান্দি ইউনিয়নাধীন রামদাশপুর গ্রামে। পিতার সংসারে পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই এম এ ইউসুফ ছিলেন সকলের মধ্যমণী। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের প্রফেসর প্রখ্যাত লেখক প্রয়াত হাফেজ হাবিবুর রহমান (MNA-মেম্বার অফ ন্যাশনাল এসেম্বলি) তার ভাতিজা এম এ ইউসুফ দিয়েছেন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। ধীরে ধীরে মেধার প্রসার ও লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে উঠে কিশোর এম এ ইউসুফ।

১৯৫৯ সালে ছেঙ্গারচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন (বর্তমান SSC) পাশ করেন। ১৯৬২ সালে সিলেটের সরকারী মুরারী চাঁদ কলেজ (বর্তমান সরকারী এম সি কলেজ) থেকে আইএ সম্পন্ন করেন লাখো হৃদয়ের প্রিয় শিক্ষাগুরু মোঃ আবু ইউসুফ। ১৯৬৪ সালে সরকারী মুরারী চাঁদ কলেজ থেকে বিএ সম্পন্ন করেন প্রিয় শিক্ষাগুরু। ১৯৬৪ সালের আগষ্টে এম এ ইউসুফ প্রিয় শিক্ষক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রয়াত বদিউর রহমান পাটোয়ারীর অনুরোধে ছেঙ্গারচর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন শিক্ষকতার মহান পেশায়।

শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা বিএড কলেজ থেকে বিএড সম্পন্ন করেন স্পষ্টভাষী এই আবু ইউসুফ। ১৯৬৯ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারস্থ নুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। নানাগুণে গুনান্নীত ও ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন এম এ ইউসুফ ১৯৭২ সালে নুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। তিনি সততা, শিক্ষার কৌশল, ও পরিচালনায় ছিলেন দারুণ পারদর্শী তাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন সকলের কাছে। ১৯৭৭ সালে ১৬ই জানুয়ারী হাজারো মানুষের অনুরোধে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মতলবের ঐতিহ্যবাহী নাউরী আহম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। তখন বিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা ছিল সবমিলিয়ে প্রায় ২৭০ জনের মতো।

অজস্র ভালোবাসায় সিক্ত আবু ইউসুফ ২০০০ সালে চাঁদপুর জেলায় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে মতলব দক্ষিণ উপজেলার পিংড়ায় অবস্থিত হজরত শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেন। ২০০২ সালে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন প্রধান শিক্ষকের পদে। ২০০৩ সালে হজ্ব পালন করেন ধর্মভীরু প্রিয় ব্যাক্তিত্ব এম এ ইউসুফ। ২০০৪ সালে মহান শিক্ষাগুরু অবসর নেন তার কর্ম জীবন শিক্ষকতা থেকে। সংসার জীবনে পাঁচ পুত্র সন্তান ও তিন কন্যা সন্তানের জনক ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চীরতরে হারিয়েছেন তার সহধর্মিনীকে।