মেঘনাপাড়ের বাতিঘর বলে খ্যাত চাঁদপুর সরকারি কলেজে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) যথাযোগ্য মর্যাদায় ২১ ফেব্রুয়ারি ‘মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করা হয়।
![priyo chandpur 12 Model Hospital](https://priyochandpur.net/wp-content/uploads/2023/11/awfe.png)
রাত বারোটা এক মিনিটে কলেজ উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ মোঃ খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষক-কর্মকর্তা চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার মধ্য দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিবসটির কর্মসূচির শুভ সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত রাখা হয়।
সকাল সাড়ে আটটায় কলেজ উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ মোঃ খলিলুর রহমান বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকবৃন্দকে নিয়ে শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে কলেজ শহিদ মিনার এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
সকাল দশটায় কলেজ কনফারেন্স কক্ষে শুরু হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনার।
প্রফেসর সামছুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ মোঃ খলিলুর রহমান, মহান শহিদ দিবস প্রতিপালন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক গোপাল কৃষ্ণ ভৌমিক।
সেমিনারের শুরুতে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামিক স্ট্যাডিজ ও আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আল-আমিন। বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শরীফ মাহমুদ চিশতীর সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ মাসুদ আলম। উপস্থাপিত প্রবন্ধের উপর মূল আলোচনা করেন প্রফেসর মোঃ রফিক উল্লাহ।
এছাড়াও আলোচনা করেন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্র দাস, ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ আলী আজগর ফকির, সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান।
বিশেষ অতিথি প্রফেসর শেখ মোঃ খলিলুর রহমান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন ’৫২-র ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউলসহ সকল ভাষা শহিদ, ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, গাজীউল হক, আহমদ রফিক প্রমুখদেরকে। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ও আহত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে।
তিনি বলেন, ‘৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি না হলে ৭১ সৃষ্টি হতো না। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি একুশের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মাতৃভাষার চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের মাধ্যমে সমাজের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।’
সভাপতি প্রফেসর সামছুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের মায়ের ভাষার উপর, মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর বারবার আঘাত এসেছে, এখনও আসছে। পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা বারবার আক্রমণ করেছে আমাদের ভাষা, স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর।’ তিনি সেমিনার আয়োজনের সাথে যুক্ত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সেমিনার শেষে কবিতা আবৃত্তি এবং রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বাদ যোহর কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং হোস্টেল মসজিদসমূহে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও তবারক বিতরণের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে তাৎপর্যপূর্ণ এই দিবসের অনুষ্ঠানমালার।