জনগণের করের টাকায় সেতু নির্মাণ করা হলেও ক্ষমতা আর প্রভাব প্রতিপত্তির জোরে সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি সেতুর নাম দিয়েছেন তার বাবার নামে ‘ভাষাবিদ এম এ ওয়াদুদ সেতু’। সেতু বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের কাগজপত্রে এ নামের অস্তিত্ব না থাকলেও দীপু মনি ভিত্তিফলকে তার বাবার নাম জুড়ে দেন। এ ঘটনায় ডাকাতিয়া নদীর দুপাড়ের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও কেউ প্রতিবাদ করার সুযোগ পায়নি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার ছোটসুন্দর ও পাশের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২৫৮ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণে সবমিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। আর এটি বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।
নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় দীর্ঘ ১০ বছর পর চলতি বছরের জুন মাসে সেতুটি ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। যদিও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হয়নি।
সেতু বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ চাঁদপুর অফিস সূত্র জানায়, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৬ টাকায় সেতু নির্মাণে ‘নবারুন ট্রেডার্স লি:’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশসহ সরকারি সকল কাগজে সেতুর আলাদা কোন নাম দেয়া হয়নি। সাবজেক্ট হিসেবে লেখা রয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন মহামায়া জিসি রামপুর ইউপি-ছোট সুন্দর বাজার-কামরাঙ্গা বাজার-বাকিলা জিসি সড়কে ডাকাতিয়া নদীর উপর ২৭৪.২০মিটার ব্রিজ।
তৎকালীন চাঁদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য দীপু মনি ও ফরিদগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক ভূঁইয়া যৌথভাবে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণ পাড় অর্থাৎ ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে ভিত্তি ফলক উন্মোচন করা হয়। ওই সময় দীপু মনি তার প্রয়াত বাবার নামে (ভাষাবির এম এ ওয়াদুদ সেতু) এ সেতুর নামকরণের কথা বলেন।
দুপাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়কসহ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। জনগণের করের টাকায় সেতু নির্মাণ করা হলেও দীপু মনি সকল অনুষ্ঠানে এবং সেতুর ভিত্তি ফলকে তার বাবার নাম জুড়ে দেন। স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়ায় ‘ভাসাবির এম এ ওয়াদুদ সেতু’ নাম দিয়ে প্রচারণা করান। এ ঘটনায় ছোটসুন্দর ও ইসলামপুর গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও তারা হয়রানীর ভয়ে প্রতিবাদ করেননি। যদিও লোকমুখে ইসলামপুর ব্রিজ হিসাবেই সমধিক পরিচিত।
চাঁদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, কাগজপত্রে ‘ভাসাবির এম এ ওয়াদুদ সেতু’ নামে কোন প্রকল্পের অস্তিত্ব নেই। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকেও আমরা এরকম কোন নির্দেশনা পাইনি।
চাঁদপুরের এক প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলেন, মন্ত্রীরা শপথ নেন এই বলে ‘তাঁরা অনুরাগ অথবা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না।’ দীপু মনি নিজের বাবার নামে সেতুর নামকরণের মাধ্যমে শপথের বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা কোনক্রমেই কাম্য নয়।
চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদী বিভাজন করেছে সদর উপজেলার ছোটসুন্দর ও ফরিদগঞ্জের ইসলামপুরকে। শুধু এই দুটি এলাকা নয়, আশপাশের অন্তত আরও ২০টি গ্রামকে। ফলে নদী পেরিয়ে দুপাড়ে যাতায়াতে দুর্ভোগের কমতি ছিল না। খেয়া পার হতে ঘন্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু সেতু চালু হওয়ায় সেই দুর্ভোগ ক্রমশ দূর হচ্ছে।
সেতুটি পুরোদমে চালু হলে ডাকাতিয়া নদীর দুপাড়ের মানুষের শুধু দুর্ভোগই কমবে না, এর সঙ্গে পাশের জেলা লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথের দূরত্বও কমে আসবে। এমন মন্তব্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।