ঢাকা ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শাহজালালের বেপরোয়া দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার : ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ শাহজালাল পাঠান। যার দূর্নীতির কোন শেষ নেই। নিজে জাল ডিসিআর তৈরি করে সেই রশিদ দিয়ে খাজনা আদায় করে সরকারি ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ৯০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি জেলা প্রশাসকের (ডিসি) স্বাক্ষর নকল করে কয়েকটি সরকারি জায়গা লিজ দিয়েছেন। এবং সরকারি খাস জায়গাও মানুষের নামে নামজারি (খারিজ) করে দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষকে হুমকি ধামকি দিয়ে সেবা প্রদানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতেন। এসব দূর্নীতি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় জেলা প্রশাসন তাকে অস্থায়ী বহিস্কার করেছেন। সর্বশেষ তিনি মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

Model Hospital

জানা গেছে, ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শাহজালাল পাঠান ৫টি অফিসিয়াল অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এসব অভিযোগের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয়া মামলা হয়েছে। মামলা নং ০৩/২০২০। প্রমাণিত অভিযোগগুলো হল, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতলব উত্তর, চাঁদপুর ০৩/১২/২০২০ তারিখের ৬৬৩নং স্মারকে তার বিরুদ্ধে মুজিব শতবর্ষে ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুর্ণবাসনের লক্ষ্যে সরেজমিন যাচাই বাছাই করে এখই ঘর নির্মাণ করা যায় এরূপ ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত নিস্কন্টক খাস জিমর তালিকা চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে শাহজালাল পাঠান উপজেলার উদ্দমদী মৌজায় ১নং খাস খতিয়ান ভূক্ত ১৭৩নং দাগে বোরো শ্রেণীর ০.১৬০০ একর জমির প্রস্তাব দাখিল করেন। উক্ত ভূমির সার্ভেয়ার কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রস্তাবিত ভূমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহকৃত এবং এখনই ঘর নির্মাণ করার উপযোগী নয়। তিনি কর্তৃপক্ষকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে অসংগতিপূর্ণ প্রতিবেদন দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও তিনি কোন জবাব দাখিল করেননি। যা সরকারি দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও অসদাচরন বলে গণ্য এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারার সঙ্গানুযায়ী একই বিধিমালার ৩(খ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তিনি ছেংগারচর পৌর ভূমি অফিসে কর্মরত থাকাকালে জেলা কার্যালয়ের ৬০/১৭-১৮ এবং উপজেলা ভূমি অফিসের ৩১/১৮-১৯ নং আর.আর বহির সবগুলো পাতা ব্যবহার করে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৬ টাকা আদায় করেন। উক্ত পাতাগুলো তারিখ বিহীন ব্যবহার করেন এবং আদায়কৃত টাকা ১০-১৫ দিন পর সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেন। সরকারি জামানতের (জামাত ৫০০০/-) চেয়ে বেশি টাকা অসদুদ্দেশ্যে হাতে রেখেছেন যা সরকারি কাজে আর্থিক অনিয়ম করেছেন যা বিধিমালার ৩(ঘ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
জনৈক তোফায়েল আহাম্মেদ, পিতা মজিদ তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন যে, তিনি তার মালিকানা জমি নিজ নামে নামজারী জমাখারিজ করার জন্য উপজেলা ভূমি অফিস আবেদন করায় তার সাথে অশোভনীয় আচরণ করেন এবং ৪/৫ দিন গোরাগুরির পর ১০০০/- টাকা নিয়ে তাকে মাত্র ১০ টাকার দাখিলা ইস্যু করেন। এছাড়াও অনেক অভিযোগ রয়েছে যে, ভূমি উন্নয়ন কর এর অযুহাতে অনেক টাকা গ্রহণ করে নাম মাত্র টাকার দাখিলা প্রদান করতেন। ইহা তার সরকারি কাজে চরম আর্থিক অনিয়ম ও সরকারি অর্থ অশ্রুপ করার দায়ে দূর্নীতিমূলক আচরণ বলে গণ্য এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারার সঙ্গানুযায়ী একই বিধিমালার ৩(ঘ) ধারায় দূর্নীতিপরায়ণতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

উপজেলার বড় চরকালিয়া মৌজায় সাউেশ ৮৩৩, ৮৩৪ হালে ২৩২২নং দাগের সম্পূর্ণ ভূমি ‘ক’ তালিকা হিসেবে গেজেটভূক্ত থাকার পরও কর্তৃপক্ষের নিকট তথ্য গোপন রেখে ২৪০০/২০১৯-২০ নং নামজারী ও জমাখারিজ মুলে সরকারি সম্পত্তি আব্দুল মান্নান এর নামে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খারিজ করে দিয়েছেন। যা কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ্য করার জন্য সরকারি সম্পত্তিতে সরকারের স্বার্থ ক্ষুন্ন করেছে শাহজালাল। যা সরকারি স্বার্থের পরিপন্থী ও সরকারি সম্পত্তি বেহাত করার কার্য করেছেন যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারার সঙ্গানুযায়ী একই বিধিমালার ৩(খ) ও (ঘ) ধারায় ধসদাচরন ও দুর্নীতিপরায়নতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

শাহজালাল পাঠান অস্থায়ী বহিস্কার হওয়ার আগে নিয়মিত অফিস করতেন না। সেবা নিতে আসা মানুষ তাকে মুঠোফোনে কল করলেও রিসিভ না করে সেবা নিতে আসা মানুষের সাথে অশোভনীয় আচরণ করতেন যা রাজস্ব প্রশাসনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। এছাড়া তার নিকট হতে কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট রিটার্ণ চাওয়া হলে তার নিকট পাওয়া যেত না। তাতে সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারার সঙ্গানুযায়ী একই বিধিমালার ৩(খ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়াও রয়েছে তার বিরুদ্ধে আনঅফিসিয়াল বহু অভিযোগ। উপজেলার পালালোকদি মৌজায় জনৈক এক ব্যক্তিকে সরকারি খাস জমি জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে বহু টাকার বিনিময়ে লিজ দিয়েছেন। আমিরাবাদ ভূমি অফিসে বহু সেবা গ্রহনকারীকে হুমকি ধামকি ও মোটা অংকের ঘুষ আদায় করেছেন শাহজালাল। ছেঙ্গারচর পৌরসভা ভূমি অফিসে থাকাকালীন সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তির সাথে হাতাহাতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। ভূমি অফিসের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ওই লোকটিকে ফাঁসানোর চেষ্টাও করেন শাহজালাল। এসব দুর্নীতি করে জাল রশিদ ও ব্যাংকের চালান ফরম জাল করে সরকারি প্রায় ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। ভূমির রাজস্ব আদায়ে শাহজালাল ব্যক্তিগত একটি রশিদ দিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতো। জনগণকে দিত মাত্র ১০ টাকার রশিদ আর কার্বন কপিতে ব্যবহার করতো মাত্র ২০০ টাকা, এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে শাহজালালের বিরুদ্ধে। সে যতটা অফিসে কর্মরত ছিল ততটা অফিসেই দুর্নীতি করতো বেপরোয়া ভাবে।

এধরনের দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য করে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ অনেক সম্পদ গড়েছেন। নিজ গ্রাম মমরুজকান্দি বাড়িতে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গড়েছেন আলিশান বাড়ি। ঢাকার সানারপাড়েও বহুতল ভবন ও কোনাপাড়ায় রয়েছে নিজের নামে ফ্ল্যাট। ছেঙ্গারচর পৌরসভায় কিনেছেন কোটি টাকার সম্পত্তি। টাকার পাহাড় ব্যবহার করে সম্প্রতি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন শাহজালাল, কিন্তু পরবর্তীতে কমিটি নিয়ে দ্বন্ধে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত ০৩/০৯/২১ইং তারিখে তালা লাগিয়ে দেন তিনি। প্রধান শিক্ষককেও মারধর করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয় শাহজালাল। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। তার গ্রামের একটি নিরীহ পরিবারের কাছ থেকে হুমকি ধামকি দিয়ে জায়গা নিয়ে তাদেরকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে ওই জায়গায় তিনি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। গত ১০ বছর আগেও ভূমি অফিস থেকে ডেপুটেশনে পাসপোর্ট অফিসে বদলী করা হলে সেখানেও জাল পাসপোর্ট করে অবৈধ টাকা উপার্যনের দায়ে হাত পা বাঁধা হয়েছিল তাকে।

আমিরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ৫ লাখ টাকার সোনালী ব্যাংক চালান ফরম সই নকল করে আত্মসাৎ করেন। সাদুল্লাপুর, কালীপুর ভূমি হিতৈশী ভূমি অফিসে মোট কথা সব অফিসের যেখানে যেখানে চাকুরী করেছে সব অফিসে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অস্থায়ী বহিস্কার হওয়ার কয়েকদিন আগে আমিরাবাদ ভূমি অফিসে গিয়ে আমি চাকুরী পাইছি বলে অবৈধ পন্থায় টাকা আত্মসাৎ করতে গেলে জনতা শাহজালালকে গণধোলাই দেয়।

সরকারি দায়িত্ব পালনে শাহজালাল পাঠানের চরম অবহেলা, কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য, সেবাগ্রহীতাদের সাথে অশোভনীয় আচরণ করা, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা, সরকারি আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ তশ্রুপ, সরকারি স্বার্থের পরিপন্থী ও সরকারি সম্পত্তি বেহাত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকায় এবং সরকারি দায়িত্ব পালনে অবৈধভাবে উৎকোচ গ্রহণ করা দুর্নীতিপরায়নতার কার্য করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারায় প্রদত্ত অভিযোগের দায়ে একই বিধিমালার ৩(খ) ও (ঘ) ধারায় অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ন এর দায়ে শাহজালালকে অভিযুক্ত করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৭ ধারায় বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। সেই সাথে গত ০৮/১২/২০ইং তারিখে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত এক পত্রে শাহজালাল পাঠানের কাছে জবাব দিহিতা ও বিভাগীয় মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে কোন সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে চান কি না তাও লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এসব দুর্নীতির ব্যাপারে শাহজালাল পাঠানের সাথে সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।

আর কত দুর্নীতি করলে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শাহজালাল পাঠান স্থায়ীভাবে বহিস্কার হবে? প্রশ্ন জনমনে। একজন সরকারি কর্মচারী এত দূর্নীতি করার পরও কেন দৃশ্যমান কোন শাস্তি হচ্ছে না তাও জানতে চায় জনগণ। তার মত অসাধু কর্মচারীর হাতে লাঞ্চিত হওয়া মানুষের দাবী, দ্রুত আইনের আওতায় এনে তার বিচার করে স্থায়ী বহিস্কার করা হোক। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বলেন, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শাহজালাল পাঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। চূড়ান্ত তদন্ত শেষে শুনানী হবে, তারপর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শাহজালালের বেপরোয়া দুর্নীতি

আপডেট সময় : ০২:১৩:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ শাহজালাল পাঠান। যার দূর্নীতির কোন শেষ নেই। নিজে জাল ডিসিআর তৈরি করে সেই রশিদ দিয়ে খাজনা আদায় করে সরকারি ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ৯০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি জেলা প্রশাসকের (ডিসি) স্বাক্ষর নকল করে কয়েকটি সরকারি জায়গা লিজ দিয়েছেন। এবং সরকারি খাস জায়গাও মানুষের নামে নামজারি (খারিজ) করে দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষকে হুমকি ধামকি দিয়ে সেবা প্রদানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতেন। এসব দূর্নীতি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় জেলা প্রশাসন তাকে অস্থায়ী বহিস্কার করেছেন। সর্বশেষ তিনি মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

Model Hospital

জানা গেছে, ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শাহজালাল পাঠান ৫টি অফিসিয়াল অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এসব অভিযোগের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয়া মামলা হয়েছে। মামলা নং ০৩/২০২০। প্রমাণিত অভিযোগগুলো হল, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতলব উত্তর, চাঁদপুর ০৩/১২/২০২০ তারিখের ৬৬৩নং স্মারকে তার বিরুদ্ধে মুজিব শতবর্ষে ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুর্ণবাসনের লক্ষ্যে সরেজমিন যাচাই বাছাই করে এখই ঘর নির্মাণ করা যায় এরূপ ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত নিস্কন্টক খাস জিমর তালিকা চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে শাহজালাল পাঠান উপজেলার উদ্দমদী মৌজায় ১নং খাস খতিয়ান ভূক্ত ১৭৩নং দাগে বোরো শ্রেণীর ০.১৬০০ একর জমির প্রস্তাব দাখিল করেন। উক্ত ভূমির সার্ভেয়ার কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রস্তাবিত ভূমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহকৃত এবং এখনই ঘর নির্মাণ করার উপযোগী নয়। তিনি কর্তৃপক্ষকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে অসংগতিপূর্ণ প্রতিবেদন দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও তিনি কোন জবাব দাখিল করেননি। যা সরকারি দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও অসদাচরন বলে গণ্য এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারার সঙ্গানুযায়ী একই বিধিমালার ৩(খ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তিনি ছেংগারচর পৌর ভূমি অফিসে কর্মরত থাকাকালে জেলা কার্যালয়ের ৬০/১৭-১৮ এবং উপজেলা ভূমি অফিসের ৩১/১৮-১৯ নং আর.আর বহির সবগুলো পাতা ব্যবহার করে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৬ টাকা আদায় করেন। উক্ত পাতাগুলো তারিখ বিহীন ব্যবহার করেন এবং আদায়কৃত টাকা ১০-১৫ দিন পর সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেন। সরকারি জামানতের (জামাত ৫০০০/-) চেয়ে বেশি টাকা অসদুদ্দেশ্যে হাতে রেখেছেন যা সরকারি কাজে আর্থিক অনিয়ম করেছেন যা বিধিমালার ৩(ঘ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
জনৈক তোফায়েল আহাম্মেদ, পিতা মজিদ তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন যে, তিনি তার মালিকানা জমি নিজ নামে নামজারী জমাখারিজ করার জন্য উপজেলা ভূমি অফিস আবেদন করায় তার সাথে অশোভনীয় আচরণ করেন এবং ৪/৫ দিন গোরাগুরির পর ১০০০/- টাকা নিয়ে তাকে মাত্র ১০ টাকার দাখিলা ইস্যু করেন। এছাড়াও অনেক অভিযোগ রয়েছে যে, ভূমি উন্নয়ন কর এর অযুহাতে অনেক টাকা গ্রহণ করে নাম মাত্র টাকার দাখিলা প্রদান করতেন। ইহা তার সরকারি কাজে চরম আর্থিক অনিয়ম ও সরকারি অর্থ অশ্রুপ করার দায়ে দূর্নীতিমূলক আচরণ বলে গণ্য এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারার সঙ্গানুযায়ী একই বিধিমালার ৩(ঘ) ধারায় দূর্নীতিপরায়ণতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

উপজেলার বড় চরকালিয়া মৌজায় সাউেশ ৮৩৩, ৮৩৪ হালে ২৩২২নং দাগের সম্পূর্ণ ভূমি ‘ক’ তালিকা হিসেবে গেজেটভূক্ত থাকার পরও কর্তৃপক্ষের নিকট তথ্য গোপন রেখে ২৪০০/২০১৯-২০ নং নামজারী ও জমাখারিজ মুলে সরকারি সম্পত্তি আব্দুল মান্নান এর নামে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খারিজ করে দিয়েছেন। যা কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ্য করার জন্য সরকারি সম্পত্তিতে সরকারের স্বার্থ ক্ষুন্ন করেছে শাহজালাল। যা সরকারি স্বার্থের পরিপন্থী ও সরকারি সম্পত্তি বেহাত করার কার্য করেছেন যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারার সঙ্গানুযায়ী একই বিধিমালার ৩(খ) ও (ঘ) ধারায় ধসদাচরন ও দুর্নীতিপরায়নতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

শাহজালাল পাঠান অস্থায়ী বহিস্কার হওয়ার আগে নিয়মিত অফিস করতেন না। সেবা নিতে আসা মানুষ তাকে মুঠোফোনে কল করলেও রিসিভ না করে সেবা নিতে আসা মানুষের সাথে অশোভনীয় আচরণ করতেন যা রাজস্ব প্রশাসনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। এছাড়া তার নিকট হতে কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট রিটার্ণ চাওয়া হলে তার নিকট পাওয়া যেত না। তাতে সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারার সঙ্গানুযায়ী একই বিধিমালার ৩(খ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়াও রয়েছে তার বিরুদ্ধে আনঅফিসিয়াল বহু অভিযোগ। উপজেলার পালালোকদি মৌজায় জনৈক এক ব্যক্তিকে সরকারি খাস জমি জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে বহু টাকার বিনিময়ে লিজ দিয়েছেন। আমিরাবাদ ভূমি অফিসে বহু সেবা গ্রহনকারীকে হুমকি ধামকি ও মোটা অংকের ঘুষ আদায় করেছেন শাহজালাল। ছেঙ্গারচর পৌরসভা ভূমি অফিসে থাকাকালীন সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তির সাথে হাতাহাতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। ভূমি অফিসের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ওই লোকটিকে ফাঁসানোর চেষ্টাও করেন শাহজালাল। এসব দুর্নীতি করে জাল রশিদ ও ব্যাংকের চালান ফরম জাল করে সরকারি প্রায় ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। ভূমির রাজস্ব আদায়ে শাহজালাল ব্যক্তিগত একটি রশিদ দিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতো। জনগণকে দিত মাত্র ১০ টাকার রশিদ আর কার্বন কপিতে ব্যবহার করতো মাত্র ২০০ টাকা, এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে শাহজালালের বিরুদ্ধে। সে যতটা অফিসে কর্মরত ছিল ততটা অফিসেই দুর্নীতি করতো বেপরোয়া ভাবে।

এধরনের দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য করে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ অনেক সম্পদ গড়েছেন। নিজ গ্রাম মমরুজকান্দি বাড়িতে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গড়েছেন আলিশান বাড়ি। ঢাকার সানারপাড়েও বহুতল ভবন ও কোনাপাড়ায় রয়েছে নিজের নামে ফ্ল্যাট। ছেঙ্গারচর পৌরসভায় কিনেছেন কোটি টাকার সম্পত্তি। টাকার পাহাড় ব্যবহার করে সম্প্রতি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন শাহজালাল, কিন্তু পরবর্তীতে কমিটি নিয়ে দ্বন্ধে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত ০৩/০৯/২১ইং তারিখে তালা লাগিয়ে দেন তিনি। প্রধান শিক্ষককেও মারধর করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয় শাহজালাল। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। তার গ্রামের একটি নিরীহ পরিবারের কাছ থেকে হুমকি ধামকি দিয়ে জায়গা নিয়ে তাদেরকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে ওই জায়গায় তিনি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। গত ১০ বছর আগেও ভূমি অফিস থেকে ডেপুটেশনে পাসপোর্ট অফিসে বদলী করা হলে সেখানেও জাল পাসপোর্ট করে অবৈধ টাকা উপার্যনের দায়ে হাত পা বাঁধা হয়েছিল তাকে।

আমিরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ৫ লাখ টাকার সোনালী ব্যাংক চালান ফরম সই নকল করে আত্মসাৎ করেন। সাদুল্লাপুর, কালীপুর ভূমি হিতৈশী ভূমি অফিসে মোট কথা সব অফিসের যেখানে যেখানে চাকুরী করেছে সব অফিসে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অস্থায়ী বহিস্কার হওয়ার কয়েকদিন আগে আমিরাবাদ ভূমি অফিসে গিয়ে আমি চাকুরী পাইছি বলে অবৈধ পন্থায় টাকা আত্মসাৎ করতে গেলে জনতা শাহজালালকে গণধোলাই দেয়।

সরকারি দায়িত্ব পালনে শাহজালাল পাঠানের চরম অবহেলা, কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য, সেবাগ্রহীতাদের সাথে অশোভনীয় আচরণ করা, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা, সরকারি আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ তশ্রুপ, সরকারি স্বার্থের পরিপন্থী ও সরকারি সম্পত্তি বেহাত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকায় এবং সরকারি দায়িত্ব পালনে অবৈধভাবে উৎকোচ গ্রহণ করা দুর্নীতিপরায়নতার কার্য করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ২(খ) ধারায় প্রদত্ত অভিযোগের দায়ে একই বিধিমালার ৩(খ) ও (ঘ) ধারায় অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ন এর দায়ে শাহজালালকে অভিযুক্ত করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৭ ধারায় বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। সেই সাথে গত ০৮/১২/২০ইং তারিখে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত এক পত্রে শাহজালাল পাঠানের কাছে জবাব দিহিতা ও বিভাগীয় মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে কোন সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে চান কি না তাও লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এসব দুর্নীতির ব্যাপারে শাহজালাল পাঠানের সাথে সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।

আর কত দুর্নীতি করলে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শাহজালাল পাঠান স্থায়ীভাবে বহিস্কার হবে? প্রশ্ন জনমনে। একজন সরকারি কর্মচারী এত দূর্নীতি করার পরও কেন দৃশ্যমান কোন শাস্তি হচ্ছে না তাও জানতে চায় জনগণ। তার মত অসাধু কর্মচারীর হাতে লাঞ্চিত হওয়া মানুষের দাবী, দ্রুত আইনের আওতায় এনে তার বিচার করে স্থায়ী বহিস্কার করা হোক। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বলেন, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শাহজালাল পাঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। চূড়ান্ত তদন্ত শেষে শুনানী হবে, তারপর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।