ঢাকা ১০:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিদ্যালয়ে অনিয়মিত থেকেও বেতন তোলেন শিক্ষিকা

শাহরাস্তিতে ৩১ মাসে বিদ্যালয়ে ক্লাস না নিলেও বেতন তোলেন নিয়মিত

★শিক্ষকদের চাপাঁ ক্ষোভ★
★ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে সহযোগিতার অভিযোগ★
★৩১ মাসের চাকুরী জীবনে ঠিক মতো বিদ্যালয়ে ক্লাস না নিলেও বেতন তোলেন নিয়মিত★

Model Hospital

শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষিকাকে ঠিক মতো চেনে না। চাকুরিতে যোগাদানের পর ৩১ মাসে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যে কেউ ঠিক মতো তার দেখা পেয়েছেন কিনা সন্দেহ! কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতায় কর্মদিবসের প্রতিটি ঘরে তাঁর সই, পাচ্ছেন বেতন। এ যেন কাগজে- কলমে শিক্ষক।

এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া হিন্দু বিষয়ের এই শিক্ষকের নাম রত্না রাণী রায়। শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে এই শিক্ষিকার দেখা না মিললেও অনিয়মের নানা তথ্য মিলেছে। বিদ্যালয়টিতে ৮৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক /শিক্ষিকা আছেন ২৩ জন। অথচ এর মধ্যে একজন শিক্ষক প্রায় সময় থাকেন অনুপস্থিত।

সরেজমিন কথা হয় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় তাদের হিন্দু বিষয়ের শিক্ষকের নাম। তারা সকলেই এ বিষয়ের শিক্ষক সব সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না বলে জানান । কৌশলে শিক্ষিকা তার হাজিরা খাতায় নিয়মিত সাইন ঠিকই দিচ্ছেন। অথচ এই শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না ঠিক মতো। আবার একই শিক্ষকের হাজিরা খাতায় ৩/৪ ধরণের স্বাক্ষর। এ যেনো নিরব জালিয়াতি!

এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষিকা রত্না রাণী রায় নিয়োগ পেয়েছেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। চাকুরী স্থায়ী হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে। হাজিরা খাতায় নিয়মিত সাইন ও ছুটি থাকলেও বেতন শিটে (এমপিও) তাঁর নামের ঘরে বসানো টাকার অঙ্কটা প্রতি মাসে হচ্ছে নিয়মিত।

অত্র বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা জানান, শিক্ষিকা রত্না রানী রায় প্রতি মাসে নির্দিষ্ট দিনে ছুটি কাটিয়ে এবং অতিরিক্ত বাড়তি ছুটিতে থাকার পরেও তার বেতন পাচ্ছেন ঠিকই নিয়মিত থাকা শিক্ষকদের হারে। এ যেনো এক অলৌকিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ! ৩১ মাসের নিয়োগের এই দিন গুলোতে ঠিক মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়েও কোন ক্ষমতাবলে তিনি পুরো মাসের বেতন তুলতে পারতেন, তা আসলেই বোধগম্য নয়? আমরা সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে এর একটা সমাধান চাই।

প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে এমন অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে দিব্যি রত্না রাণী রায় কোন শোকজ ছাড়াই চাকুরীতে বহাল আছে বলেই ধারণা করেন অনেক শিক্ষক ও এলাকার অভিভাবকবৃন্দ।

অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা অনেকেই শিক্ষিকা রত্না রাণী রায় কে, তারা চিনেন ও না তাকে?চাকুরীতে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অনিয়মিত এই শিক্ষকের খুঁটির জোর কোথায়, তাই প্রশ্ন অধিকাংশ অভিভাবক ও এলাকাবাসীর।

শিক্ষক রত্মা রাণী রায় থাকেন বগুড়ায়।

এ বিষয়ে জানতে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করলে রিং বাজলেও রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।

প্রধান শিক্ষক মোঃ হাবিব উল্লাহ বলেন, জুলাই মাসের ৩১ তারিখে তিনি ছুটি নিয়েছেন। এরপর আর বিদ্যালয়ে আসেন নি৷ সর্বশেষ ১০ সেপ্টেম্বর আবার অসুস্থতার কথা বলে ওয়াটসআপে নতুন করে ছুটি আবেদন পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমি সভাপতি মহোদয়কে অবগত করেছি।

চলতি মাসের ৪ তারিখ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় হিন্দু বিষয়ের শিক্ষক রত্না রাণী রায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। হিন্দু শিক্ষক স্কুলে না এসেও কীভাবে শিক্ষক হাজিরা খাতায় নিয়মিত সই করেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একদিন এসেছিলেন ওই শিক্ষক, তাই আমরা তাঁকে একবার সুযোগ দিয়েছিলাম।’

শাহরাস্তি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আলী আশ্রাফ খান জানান, আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মীর) মাধ্যমে বিষয়টি আমি জানতে পারলাম। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।

ট্যাগস :

কচুয়ায় শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে দেখা দিয়েছে কৃত্রিম বন্যা

বিদ্যালয়ে অনিয়মিত থেকেও বেতন তোলেন শিক্ষিকা

শাহরাস্তিতে ৩১ মাসে বিদ্যালয়ে ক্লাস না নিলেও বেতন তোলেন নিয়মিত

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

★শিক্ষকদের চাপাঁ ক্ষোভ★
★ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে সহযোগিতার অভিযোগ★
★৩১ মাসের চাকুরী জীবনে ঠিক মতো বিদ্যালয়ে ক্লাস না নিলেও বেতন তোলেন নিয়মিত★

Model Hospital

শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষিকাকে ঠিক মতো চেনে না। চাকুরিতে যোগাদানের পর ৩১ মাসে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যে কেউ ঠিক মতো তার দেখা পেয়েছেন কিনা সন্দেহ! কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতায় কর্মদিবসের প্রতিটি ঘরে তাঁর সই, পাচ্ছেন বেতন। এ যেন কাগজে- কলমে শিক্ষক।

এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া হিন্দু বিষয়ের এই শিক্ষকের নাম রত্না রাণী রায়। শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে এই শিক্ষিকার দেখা না মিললেও অনিয়মের নানা তথ্য মিলেছে। বিদ্যালয়টিতে ৮৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক /শিক্ষিকা আছেন ২৩ জন। অথচ এর মধ্যে একজন শিক্ষক প্রায় সময় থাকেন অনুপস্থিত।

সরেজমিন কথা হয় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় তাদের হিন্দু বিষয়ের শিক্ষকের নাম। তারা সকলেই এ বিষয়ের শিক্ষক সব সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না বলে জানান । কৌশলে শিক্ষিকা তার হাজিরা খাতায় নিয়মিত সাইন ঠিকই দিচ্ছেন। অথচ এই শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না ঠিক মতো। আবার একই শিক্ষকের হাজিরা খাতায় ৩/৪ ধরণের স্বাক্ষর। এ যেনো নিরব জালিয়াতি!

এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষিকা রত্না রাণী রায় নিয়োগ পেয়েছেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। চাকুরী স্থায়ী হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে। হাজিরা খাতায় নিয়মিত সাইন ও ছুটি থাকলেও বেতন শিটে (এমপিও) তাঁর নামের ঘরে বসানো টাকার অঙ্কটা প্রতি মাসে হচ্ছে নিয়মিত।

অত্র বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা জানান, শিক্ষিকা রত্না রানী রায় প্রতি মাসে নির্দিষ্ট দিনে ছুটি কাটিয়ে এবং অতিরিক্ত বাড়তি ছুটিতে থাকার পরেও তার বেতন পাচ্ছেন ঠিকই নিয়মিত থাকা শিক্ষকদের হারে। এ যেনো এক অলৌকিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ! ৩১ মাসের নিয়োগের এই দিন গুলোতে ঠিক মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়েও কোন ক্ষমতাবলে তিনি পুরো মাসের বেতন তুলতে পারতেন, তা আসলেই বোধগম্য নয়? আমরা সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে এর একটা সমাধান চাই।

প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে এমন অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে দিব্যি রত্না রাণী রায় কোন শোকজ ছাড়াই চাকুরীতে বহাল আছে বলেই ধারণা করেন অনেক শিক্ষক ও এলাকার অভিভাবকবৃন্দ।

অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা অনেকেই শিক্ষিকা রত্না রাণী রায় কে, তারা চিনেন ও না তাকে?চাকুরীতে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অনিয়মিত এই শিক্ষকের খুঁটির জোর কোথায়, তাই প্রশ্ন অধিকাংশ অভিভাবক ও এলাকাবাসীর।

শিক্ষক রত্মা রাণী রায় থাকেন বগুড়ায়।

এ বিষয়ে জানতে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করলে রিং বাজলেও রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।

প্রধান শিক্ষক মোঃ হাবিব উল্লাহ বলেন, জুলাই মাসের ৩১ তারিখে তিনি ছুটি নিয়েছেন। এরপর আর বিদ্যালয়ে আসেন নি৷ সর্বশেষ ১০ সেপ্টেম্বর আবার অসুস্থতার কথা বলে ওয়াটসআপে নতুন করে ছুটি আবেদন পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমি সভাপতি মহোদয়কে অবগত করেছি।

চলতি মাসের ৪ তারিখ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় হিন্দু বিষয়ের শিক্ষক রত্না রাণী রায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। হিন্দু শিক্ষক স্কুলে না এসেও কীভাবে শিক্ষক হাজিরা খাতায় নিয়মিত সই করেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একদিন এসেছিলেন ওই শিক্ষক, তাই আমরা তাঁকে একবার সুযোগ দিয়েছিলাম।’

শাহরাস্তি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আলী আশ্রাফ খান জানান, আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মীর) মাধ্যমে বিষয়টি আমি জানতে পারলাম। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।