ঢাকা ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাট চাষে সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে কৃষক

মনিরুল ইসলাম মনির : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। অনুকূল আবহাওয়া সেই সঙ্গে কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় জেলার কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নের কৃষক আবুল হোসেন জানান, চৈত্রের শেষ ভাগে পাটের মৌসুম শুরু হয়। বৈশাখে পুরোদমে এর আবাদ হয়। পাট কাটা হয় আষাঢ় ও শ্রাবণে। এ সময় বৃষ্টি বেশি হলে সহজে জাগ দিতে পারেন চাষিরা। এতে ভালো পাট পাওয়া যায়। তবে কোনো কারণে পানির অভাব দেখা দিলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এদিকে মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অধিদফতর বলছে, গতবার পাটের ফলন যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি কৃষকরা দামও ভালো পেয়েছেন। ফলে চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছেন। এবারও তারা লাভের আশা করছেন। কারণ, সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এখন পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

এ বিষয়ে পাট চাষি আব্দুল করিম বলেন, চলতি বছর এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। তবে দাম নিয়ে কিছুটা চিন্তিত আছি। সরকার এবারও চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে পাট কিনবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Model Hospital

মতলব উত্তর উপজেলার দশানী গ্রামের পাট চাষি জাকির হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট গাছের বয়স দেড় মাস পূর্ণ হয়েছে। গাছ ও পাতা অনেক ভালো আছে। এবারও ভালো ফলন পাব।

একই উপজেলার দেওয়ানজী কান্দি গ্রামের আব্দুস সাত্তার বলেন, গত বছর পাটের চাষ ছিল না। কিন্তু বাজারে ভালো দাম ছিল। তাই এবার আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি।

গত বছর কৃষকরা প্রতি মণ পাটে ৩ থেকে প্রায় ৪ হাজার টাকা দাম পেয়েছেন উল্লেখ করে গজরা ইউনিয়নের ডুবগী গ্রামের কৃষক আবুল হাজি বলেন, প্রতি বিঘায় বীজ বপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়।

বাজারে ভালো দাম, অনুকূল আবহাওয়া এবং সময়মতো কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে মন্তব্য করে মতলব উত্তর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাট চাষ হয়েছে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ ও সার বিনা মূল্যে দেয়া হয়েছে।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, কৃষক যেন ভালো দাম পান, এ জন্য সরকার বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং পাটের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নতুন আইন করেছে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪০১০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪২১০ হেক্টর জমি। অতীতে পাট আবাদে চাঁদপুরের যথেষ্ট সুনাম থাকায় পাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে দুটি বেসরকারি জুট মিল।

এছাড়াও সরকারিভাবে তৈরি করা হয় পাট গুদামজাত করার জন্য বিশাল আকারের গোডাউন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে দৃশ্যপট। দুটি জুট মিলের মধ্যে বন্ধ রয়েছে একটি। অন্যটি চালু আছে নামমাত্র। এছাড়াও সরকারি গোডাউন পড়ে আছে জরাজীর্ণ অবস্থায়।

ট্যাগস :

হাজীগঞ্জে এতিম ছাত্রদের মাঝে সুহিলপুর ইয়াং স্টার ব্লাড ফাউন্ডেশনের কম্বল বিতরণ

পাট চাষে সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে কৃষক

আপডেট সময় : ০১:২০:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ অগাস্ট ২০২২

মনিরুল ইসলাম মনির : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। অনুকূল আবহাওয়া সেই সঙ্গে কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় জেলার কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নের কৃষক আবুল হোসেন জানান, চৈত্রের শেষ ভাগে পাটের মৌসুম শুরু হয়। বৈশাখে পুরোদমে এর আবাদ হয়। পাট কাটা হয় আষাঢ় ও শ্রাবণে। এ সময় বৃষ্টি বেশি হলে সহজে জাগ দিতে পারেন চাষিরা। এতে ভালো পাট পাওয়া যায়। তবে কোনো কারণে পানির অভাব দেখা দিলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এদিকে মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অধিদফতর বলছে, গতবার পাটের ফলন যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি কৃষকরা দামও ভালো পেয়েছেন। ফলে চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছেন। এবারও তারা লাভের আশা করছেন। কারণ, সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এখন পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

এ বিষয়ে পাট চাষি আব্দুল করিম বলেন, চলতি বছর এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। তবে দাম নিয়ে কিছুটা চিন্তিত আছি। সরকার এবারও চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে পাট কিনবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Model Hospital

মতলব উত্তর উপজেলার দশানী গ্রামের পাট চাষি জাকির হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট গাছের বয়স দেড় মাস পূর্ণ হয়েছে। গাছ ও পাতা অনেক ভালো আছে। এবারও ভালো ফলন পাব।

একই উপজেলার দেওয়ানজী কান্দি গ্রামের আব্দুস সাত্তার বলেন, গত বছর পাটের চাষ ছিল না। কিন্তু বাজারে ভালো দাম ছিল। তাই এবার আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি।

গত বছর কৃষকরা প্রতি মণ পাটে ৩ থেকে প্রায় ৪ হাজার টাকা দাম পেয়েছেন উল্লেখ করে গজরা ইউনিয়নের ডুবগী গ্রামের কৃষক আবুল হাজি বলেন, প্রতি বিঘায় বীজ বপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়।

বাজারে ভালো দাম, অনুকূল আবহাওয়া এবং সময়মতো কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে মন্তব্য করে মতলব উত্তর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাট চাষ হয়েছে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ ও সার বিনা মূল্যে দেয়া হয়েছে।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, কৃষক যেন ভালো দাম পান, এ জন্য সরকার বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং পাটের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নতুন আইন করেছে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪০১০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪২১০ হেক্টর জমি। অতীতে পাট আবাদে চাঁদপুরের যথেষ্ট সুনাম থাকায় পাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে দুটি বেসরকারি জুট মিল।

এছাড়াও সরকারিভাবে তৈরি করা হয় পাট গুদামজাত করার জন্য বিশাল আকারের গোডাউন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে দৃশ্যপট। দুটি জুট মিলের মধ্যে বন্ধ রয়েছে একটি। অন্যটি চালু আছে নামমাত্র। এছাড়াও সরকারি গোডাউন পড়ে আছে জরাজীর্ণ অবস্থায়।