ঢাকা ০২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজসিক সৌন্দর্য নিয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে টিউলিপ

সূর্যের আলো আর তাপ নিয়ন্ত্রণ করা বিশেষ শেডের নিচে সারি সারি ফুটেছে রাজসিক সৌন্দর্যের ফুল টিউলিপ। ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। টিউলিপের বাগানে এসে কেউ ছুঁয়ে দেখছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ফুলের সঙ্গে সেলফি নিচ্ছেন। আবার কেউবা ভিডিও কলে দূরে থাকা স্বজনদের দেখাচ্ছেন টিউলিপের সৌন্দর্য। কেউ কেউ ফুল কিনে ফিরছেন বাড়িতে।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার চোখজুড়ানো এই টিউলিপ বাগানে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।

দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া এলাকায় ক্ষুদ্র চাষিদের টিউলিপ বাগানে ঢুকে উপভোগ করছেন টিউলিপের সৌন্দর্য।

টিউলিপ উৎপাদনের এই উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। চাষিদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করা, তাঁদের পরিবারের আয় বাড়ানো, বিদেশ থেকে টিউলিপ ফুল আমদানি কমানো, পঞ্চগড় জেলাকে পর্যটন উপযোগী জেলা হিসেবে গড়ে তোলা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে ইএসডিও।

Model Hospital

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতপ্রধান দেশে টিউলিপ ফুল হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে এর দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। টিউলিপ ফুল চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনশীল ধরা হয়। এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা হলে প্রাপ্তবয়সের আগেই মানসম্মত ফুল না–ও ফুটতে পারে। স্বাভাবিকভাবে রোপণের ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কলি আসতে শুরু করে এবং ২৫ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত টিউলিপ ফুল স্থায়ী হয়। অনেক সময় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শীতপ্রধান এলাকা হিসেবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলাকে নির্বাচন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও। গত ১১ জানুয়ারি উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামের ২০ জন নারী উদ্যোক্তো চাষির মাধ্যমে সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস থেকে আনা টিউলিপ গাছের বাল্ব (বীজ হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত কাণ্ড) রোপণ করা হয়। ২০ জন চাষির মোট এক একর জমিতে ১৯ প্রজাতির ২৫ হাজার টিউলিপের বাল্ব রোপণ করা হয়। এই ফুল ফোটাতে ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চ কৃষিপ্রযুক্তি। ফুলগুলো একটি বিশেষ শেডের (ছাউনির) নিচে চাষ করা হচ্ছে। আর চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নেট দিয়ে, যা তাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করে সূর্যের আলো।

তেঁতুলিয়ার টিউলিপ প্রকল্পে এবারও ২২ দিনের মাথায় ফুটতে শুরু করেছে মনোমুগ্ধকর টিউলিপ। ১৯ প্রজাতির ১৯টি রঙের মধ্যে অধিকাংশ ফুলই ফুটেছে সারি সারিভাবে। অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ্ সানরাইজ (হলুদ), মিষ্টিকভ্যান ইজক (গোলাপি), ম্যারেরোসহ ফুটেছে নানা রঙের টিউলিপ। বিস্তৃত পরিসরে টিউলিপের বৈচিত্র্যময় উপস্থিতি বাগানজুড়ে ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা।

টিউলিপচাষি ও উদ্যোক্তা সায়েকা সুলতানা বলেন, ‘পিকেএসএফ ও ইএসডিওর সহযোগিতায় এবার আমরা ২০ জন নারী উদ্যোক্তা ১৯ প্রজাতির টিউলিপ চাষ করেছি। ফুল ফোটার পর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ভিড় করছেন। নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপের একেকটি বাল্ব আনতে এবার ৫৫ টাকা করে খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাগান থেকেই একেকটি ফুলের স্টিক ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া একেকটি টবসহ ফুল ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এম খায়রুল হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে এসে টিউলিপ ফুল চাষে সম্পৃক্তদের চোখেমুখে যে হাসি দেখেছি, যে আত্মবিশ্বাস দেখেছি; না হলে বোঝা যেত না ইএসডিওর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশেকে এগিয়ে নিতে কীভাবে কাজ করছে।’

২০২২ সালে তেঁতুলিয়ায় প্রথমবারের মতো পাইলট প্রকল্প হিসেবে উপজেলার শারিয়ালজোত ও দর্জিপাড়া গ্রামের আটজন নারী উদ্যোক্তা চাষির মাধ্যমে ৪০ শতাংশ জমিতে ৬ প্রজাতির ৪০ হাজার টিউলিপ ফুল চাষ করেছিল ইএসডিও।

ট্যাগস :

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় হাজীগঞ্জে ইফতার মাহফিল

রাজসিক সৌন্দর্য নিয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে টিউলিপ

আপডেট সময় : ০৪:৪৩:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

সূর্যের আলো আর তাপ নিয়ন্ত্রণ করা বিশেষ শেডের নিচে সারি সারি ফুটেছে রাজসিক সৌন্দর্যের ফুল টিউলিপ। ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। টিউলিপের বাগানে এসে কেউ ছুঁয়ে দেখছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ফুলের সঙ্গে সেলফি নিচ্ছেন। আবার কেউবা ভিডিও কলে দূরে থাকা স্বজনদের দেখাচ্ছেন টিউলিপের সৌন্দর্য। কেউ কেউ ফুল কিনে ফিরছেন বাড়িতে।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার চোখজুড়ানো এই টিউলিপ বাগানে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।

দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া এলাকায় ক্ষুদ্র চাষিদের টিউলিপ বাগানে ঢুকে উপভোগ করছেন টিউলিপের সৌন্দর্য।

টিউলিপ উৎপাদনের এই উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। চাষিদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করা, তাঁদের পরিবারের আয় বাড়ানো, বিদেশ থেকে টিউলিপ ফুল আমদানি কমানো, পঞ্চগড় জেলাকে পর্যটন উপযোগী জেলা হিসেবে গড়ে তোলা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে ইএসডিও।

Model Hospital

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতপ্রধান দেশে টিউলিপ ফুল হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে এর দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। টিউলিপ ফুল চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনশীল ধরা হয়। এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা হলে প্রাপ্তবয়সের আগেই মানসম্মত ফুল না–ও ফুটতে পারে। স্বাভাবিকভাবে রোপণের ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কলি আসতে শুরু করে এবং ২৫ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত টিউলিপ ফুল স্থায়ী হয়। অনেক সময় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শীতপ্রধান এলাকা হিসেবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলাকে নির্বাচন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও। গত ১১ জানুয়ারি উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামের ২০ জন নারী উদ্যোক্তো চাষির মাধ্যমে সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস থেকে আনা টিউলিপ গাছের বাল্ব (বীজ হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত কাণ্ড) রোপণ করা হয়। ২০ জন চাষির মোট এক একর জমিতে ১৯ প্রজাতির ২৫ হাজার টিউলিপের বাল্ব রোপণ করা হয়। এই ফুল ফোটাতে ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চ কৃষিপ্রযুক্তি। ফুলগুলো একটি বিশেষ শেডের (ছাউনির) নিচে চাষ করা হচ্ছে। আর চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নেট দিয়ে, যা তাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করে সূর্যের আলো।

তেঁতুলিয়ার টিউলিপ প্রকল্পে এবারও ২২ দিনের মাথায় ফুটতে শুরু করেছে মনোমুগ্ধকর টিউলিপ। ১৯ প্রজাতির ১৯টি রঙের মধ্যে অধিকাংশ ফুলই ফুটেছে সারি সারিভাবে। অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ্ সানরাইজ (হলুদ), মিষ্টিকভ্যান ইজক (গোলাপি), ম্যারেরোসহ ফুটেছে নানা রঙের টিউলিপ। বিস্তৃত পরিসরে টিউলিপের বৈচিত্র্যময় উপস্থিতি বাগানজুড়ে ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা।

টিউলিপচাষি ও উদ্যোক্তা সায়েকা সুলতানা বলেন, ‘পিকেএসএফ ও ইএসডিওর সহযোগিতায় এবার আমরা ২০ জন নারী উদ্যোক্তা ১৯ প্রজাতির টিউলিপ চাষ করেছি। ফুল ফোটার পর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ভিড় করছেন। নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপের একেকটি বাল্ব আনতে এবার ৫৫ টাকা করে খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাগান থেকেই একেকটি ফুলের স্টিক ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া একেকটি টবসহ ফুল ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এম খায়রুল হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে এসে টিউলিপ ফুল চাষে সম্পৃক্তদের চোখেমুখে যে হাসি দেখেছি, যে আত্মবিশ্বাস দেখেছি; না হলে বোঝা যেত না ইএসডিওর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশেকে এগিয়ে নিতে কীভাবে কাজ করছে।’

২০২২ সালে তেঁতুলিয়ায় প্রথমবারের মতো পাইলট প্রকল্প হিসেবে উপজেলার শারিয়ালজোত ও দর্জিপাড়া গ্রামের আটজন নারী উদ্যোক্তা চাষির মাধ্যমে ৪০ শতাংশ জমিতে ৬ প্রজাতির ৪০ হাজার টিউলিপ ফুল চাষ করেছিল ইএসডিও।