ঢাকা ১১:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বক্তা বেড়ে যাওয়া কি কিয়ামতের আলামত?

মুফতি আসিম নাজিব : কিয়ামত ও পরকালে বিশ্বাস ঈমানের অংশ। পরকাল অস্বীকার করলে মানুষ ঈমানহারা হয়ে যায়। কিয়ামতের সঠিক সময় আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী কিয়ামত খুব বেশি দূরে নয়। কেননা কোরআনে কিয়ামতের সময়কাল বোঝাতে ‘নিকটবাচক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

Model Hospital

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কিয়ামত সম্পর্কে জানতে চাইলে আল্লাহ ওহি নাজিল করেন। ইরশাদ হয়, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ০১)

আল্লাহ আরও বলেন, ‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা কামার, আয়াত : ০১) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে কিয়ামত কখন হবে জিজ্ঞাসা করছে? তার আলোচনার সঙ্গে তোমার কি সম্পর্ক! তার পরম জ্ঞান আছে তোমার প্রতিপালকের কাছে।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত : ৪২-৪৪)

প্রখ্যাত তাফসিরবিশারদ ও ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আপনার কাছে তার কোনো জ্ঞান নেই এবং নেই কোনো সৃষ্টির কাছেও। বরং এর উদ্দেশ্য ও প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকে। তিনিই তা সংঘটিত হওয়ার নির্ধারিত সময় জানেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৮/৩১৮)

বক্তার সংখ্যা বেড়ে গেলে কিয়ামত নিকটে?

একটা বাস্তাব সত্য হলো- ইদানিং প্রচুর পরিমাণে বক্তার সংখ্যা বেড়ে চলছে। কিন্তু দুঃখজনক কথা হলো- অনেক বক্তার আলোচনা শুধু অযথা কথার ফুলঝুড়ি। কোনো ধরনের ইলম ও হিকমতও নেই তাদের। অবশ্য সত্যিকার ইলমের ধারক-বাহক অনেক আলেম ও বক্তা দাওয়াত-ওয়াজের ময়দানে রয়েছেন।

আলেমদের সংখ্যা কমেবে, মূর্খতা বেড়ে যাবে

মূল কথা হলো, হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, শেষ জামানায় আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে, মূর্খতা বেড়ে যাবে এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ ব্যাপকতা লাভ করবে। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) সংবাদ দিয়েছেন, যখন (প্রকৃত) আলেমদের মৃত্যু হবে তখন ইলম উঠে যাবে এবং মূর্খতা ধেয়ে আসবে। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হলো (১) ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, (২) মূর্খতা বেড়ে যাবে, (৩) মদ্যপান করা হবে এবং (৪) ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮০; মুসলিম, হাদিস : ২৬৭১)

রক্ষণশীল আলেমরা বক্তাদের আধিক্য কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করেছেন। ইমাম মালেক (রহ.) তার ‘মুয়াত্তা’য় ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, একবার আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, ‘তুমি এখন এমন এক যুগে বাস করছ, যে যুগে প্রাজ্ঞ আলেমের সংখ্যা বেশি এবং কারির (সাধারণ আলেমের) সংখ্যা কম। এ যুগে কোরআনের সীমারেখা সংরক্ষণ করা হয় (অর্থাৎ কোরআনের বিধি-নিষেধ পালন করা হয়), শব্দের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় কম। এ যুগে প্রার্থীর সংখ্যা কম এবং দাতার সংখ্যা বেশি। এ যুগের লোকেরা নামাজ দীর্ঘ করে এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করে। তারা প্রবৃত্তির অনুসরণের আগেই আমলের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এমন এক যুগ আসবে, যখন বিজ্ঞ আলেমদের সংখ্যা কম হবে এবং কারি বা সাধারণ আলেমদের সংখ্যা বেশি হবে। তখন কোরআনের শব্দসমূহকে হেফাজত করা হবে (হাফেজের সংখ্যা বেড়ে যাবে) এবং কোরআনের সীমারেখা বিনষ্ট হবে। প্রার্থী বেশি হবে এবং দাতা কম হবে। তখন লোকেরা খুতবা দীর্ঘায়িত করবে এবং নামাজ সংক্ষিপ্ত করবে। আর তারা আমলের আগে নিজেদের খেয়ালখুশির দিকে এগিয়ে যাবে।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ৫৯৭)

মহান আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তিতে ৭৭৫ কেজি পলিথিন জব্দ, ৫ প্রতিষ্ঠানকে ২৮ হাজার টাকা অর্থদন্ড

বক্তা বেড়ে যাওয়া কি কিয়ামতের আলামত?

আপডেট সময় : ০১:২০:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ডিসেম্বর ২০২১

মুফতি আসিম নাজিব : কিয়ামত ও পরকালে বিশ্বাস ঈমানের অংশ। পরকাল অস্বীকার করলে মানুষ ঈমানহারা হয়ে যায়। কিয়ামতের সঠিক সময় আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী কিয়ামত খুব বেশি দূরে নয়। কেননা কোরআনে কিয়ামতের সময়কাল বোঝাতে ‘নিকটবাচক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

Model Hospital

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কিয়ামত সম্পর্কে জানতে চাইলে আল্লাহ ওহি নাজিল করেন। ইরশাদ হয়, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ০১)

আল্লাহ আরও বলেন, ‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা কামার, আয়াত : ০১) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে কিয়ামত কখন হবে জিজ্ঞাসা করছে? তার আলোচনার সঙ্গে তোমার কি সম্পর্ক! তার পরম জ্ঞান আছে তোমার প্রতিপালকের কাছে।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত : ৪২-৪৪)

প্রখ্যাত তাফসিরবিশারদ ও ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আপনার কাছে তার কোনো জ্ঞান নেই এবং নেই কোনো সৃষ্টির কাছেও। বরং এর উদ্দেশ্য ও প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকে। তিনিই তা সংঘটিত হওয়ার নির্ধারিত সময় জানেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৮/৩১৮)

বক্তার সংখ্যা বেড়ে গেলে কিয়ামত নিকটে?

একটা বাস্তাব সত্য হলো- ইদানিং প্রচুর পরিমাণে বক্তার সংখ্যা বেড়ে চলছে। কিন্তু দুঃখজনক কথা হলো- অনেক বক্তার আলোচনা শুধু অযথা কথার ফুলঝুড়ি। কোনো ধরনের ইলম ও হিকমতও নেই তাদের। অবশ্য সত্যিকার ইলমের ধারক-বাহক অনেক আলেম ও বক্তা দাওয়াত-ওয়াজের ময়দানে রয়েছেন।

আলেমদের সংখ্যা কমেবে, মূর্খতা বেড়ে যাবে

মূল কথা হলো, হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, শেষ জামানায় আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে, মূর্খতা বেড়ে যাবে এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ ব্যাপকতা লাভ করবে। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) সংবাদ দিয়েছেন, যখন (প্রকৃত) আলেমদের মৃত্যু হবে তখন ইলম উঠে যাবে এবং মূর্খতা ধেয়ে আসবে। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হলো (১) ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, (২) মূর্খতা বেড়ে যাবে, (৩) মদ্যপান করা হবে এবং (৪) ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮০; মুসলিম, হাদিস : ২৬৭১)

রক্ষণশীল আলেমরা বক্তাদের আধিক্য কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করেছেন। ইমাম মালেক (রহ.) তার ‘মুয়াত্তা’য় ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, একবার আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, ‘তুমি এখন এমন এক যুগে বাস করছ, যে যুগে প্রাজ্ঞ আলেমের সংখ্যা বেশি এবং কারির (সাধারণ আলেমের) সংখ্যা কম। এ যুগে কোরআনের সীমারেখা সংরক্ষণ করা হয় (অর্থাৎ কোরআনের বিধি-নিষেধ পালন করা হয়), শব্দের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় কম। এ যুগে প্রার্থীর সংখ্যা কম এবং দাতার সংখ্যা বেশি। এ যুগের লোকেরা নামাজ দীর্ঘ করে এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করে। তারা প্রবৃত্তির অনুসরণের আগেই আমলের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এমন এক যুগ আসবে, যখন বিজ্ঞ আলেমদের সংখ্যা কম হবে এবং কারি বা সাধারণ আলেমদের সংখ্যা বেশি হবে। তখন কোরআনের শব্দসমূহকে হেফাজত করা হবে (হাফেজের সংখ্যা বেড়ে যাবে) এবং কোরআনের সীমারেখা বিনষ্ট হবে। প্রার্থী বেশি হবে এবং দাতা কম হবে। তখন লোকেরা খুতবা দীর্ঘায়িত করবে এবং নামাজ সংক্ষিপ্ত করবে। আর তারা আমলের আগে নিজেদের খেয়ালখুশির দিকে এগিয়ে যাবে।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ৫৯৭)

মহান আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন।