মনিরুল ইসলাম মনির : সকালে ঘাসের ডগায় শিশির ভেজা মুক্তকণা জানান দিচ্ছে শীতের। শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী কারিগরদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
উপজেলার লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তাদের পাশাপাশি বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরাও। দিন যতই গড়াচ্ছে শীতের প্রকোপ ততই বেশি বাড়ার আশংকায় উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নতুন নতুন লেপ তৈরি করছে। বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে বিক্রি কয়েক গুন বেড়ে যায়।
বাজারে কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি। তুলা পিটিয়ে তা রঙ বেরঙের কাপড়ের তৈরি লেপ-তোষকের কাভারে মুড়িয়ে সুই-সুতার ফোড়ে তৈরি করা হয় লেপ।
উত্তরের হিমেল হাওয়া শীতের আগমনের জানান দিচ্ছে। মেঘনা-ধনাগোদা নদীর তীরে উপজেলাতেও শীতের এই আগমনী বার্তা ছড়িয়ে গেছে। সকাল-সন্ধ্যা কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম।
শীতের এই আগমনবার্তাকে সামনে রেখে মানুষজন নিচ্ছেন শীত মোকাবেলার প্রস্তুতি। ভীড় বাড়ছে লেপ-তোষকের দোকানে। ফলে ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোষকের কারিগর ও এই ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টদের।
মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের প্রতিটি বাজারেই দেখা গেছে শীতকে সামনে রেখে এমন প্রস্তুতির দৃশ্য। দোকান থেকে লেপ-তোষক কিনে শীতের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন এ উপজেলার লোকজন। ফলে অলস সময় কাটানোর দিন ফুরিয়ে গেছে লেপ-তোষকের কারিগর ও ব্যবসা সংশ্লিষ্টদের।
শীত মানেই প্রশান্তির ঘুমের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ঋতু। তবে সেই প্রশান্তির ঘুমের সাথে শীতকে মোকাবেলা করে ঘুমাতে প্রয়োজন হয় শীতবস্ত্রের। সেই শীতবস্ত্রের সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় থাকে লেপ। তাই শীত মৌসুম এলেই কদর বাড়ে লেপ-তোষকের কারিগরদের।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীত মৌসুমের অন্তত এই চারটি মাস তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। এই সময়টাতে লেপ-তোষক ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করেন। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও দিনরাত কাজ করেন এ সময়টাতে।
অন্য সময়ের রোজগার পুশিয়ে নিতে এ চারটি মাস তারা কাজ করেন সমান তালে। বাকি আট মাস এই কাজ না থাকায় লেপ সেলাই কর্মীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য কাজে মনোনিবেশ করেন। কেউ নেমে পড়েন রিকশা-ভ্যান চালাতে, কেউ মাঠে দিনমজুরের কাজ নেন, আবার কেউ কেউ তাদের সুবিধামতো বেছে নেন অন্য পেশা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের লেপ-তোষক তৈরির কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি লেপ ও তোষক তৈরিতে ৫-৬ কেজি তুলা ব্যবহার করা হয়। আকার ভেদে ৯শ’ থেকে দুই হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। একটি তোষক তৈরি করতে ৮-১৫ কেজি তুলা লাগে, বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১৫শ’ টাকায়। একটি জাজিম তৈরিতে ৩০-৫০ কেজি তুলা ও নারিকেলের খোসা প্রয়োজন হয়। আকার ভেদে তা বিক্রি হয় ৩ হাজার থেকে চার হাজার টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের অন্যান্য সময় মাসে ২-৪ জন তোষক কিনতে আসলেও লেপের চাহিদা একেবারেই থাকে না। শীতের শুরু থেকে অন্তত চারটি মাস লেপ-তোষক বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে লেপ। যে কারণে চাহিদার কথা মাথায় রেখে লেপ সেলাই কর্মীদের সংখ্যাও বাড়াতে হয়।
ছেংগারচর বাজারের কারিগর সফিকুল ইসলাম জানান, শীতের সময় কাজের চাপ থাকে। গড়ে প্রতিদিন একজন কারিগর ৩-৪টি লেপ-তোষক তৈরি করতে পারেন।
তিনি আরো জানান, গত শীতের তুলনায় বিভিন্ন প্রকার তুলা ও কাপড়ের দাম অনেক বেড়েছে। এ কারণে প্রতিটি লেপ-তোষকে আকার ভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা বেশি খরচ পড়ছে।