ঢাকা ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন (পর্ব পাঁচ)

:::: কাজী শাহাদাত ::::
॥ পাঁচ ॥
সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর জন্মলগ্ন থেকে সাহিত্য আসর বা আড্ডা হয়েছে একেবারে বিক্ষিপ্তভাবে। শুরু হয়ে কিছুদিন চলেছে তো, আবার বন্ধ হয়ে গেছে। সাহিত্য একাডেমীর হলরুমে কাপড় বা ম্যাট বিছিয়ে চলতো মাসিক এ আড্ডা। চাঁদপুর জেলা পরিষদে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সামসুজ্জামান ভূইয়ার যোগদানের পর তিনি এ আড্ডাকে পাক্ষিক হিসেবে চালানোর জন্যে জোর তাগিদ দেন। তাতে সায় দেন চাঁদপুরের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আলকামা সিদ্দিকী (যিনি সরকারের সচিব হিসেবে বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত)। এঁরা দুজনই বিদগ্ধ লেখক। তাঁরা নিজেরা সাহিত্য আসরে উপস্থিত থাকতেন এবং চাঁদপুরের লেখকদের ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতেন ও উৎসাহ দিতেন। অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত অর্থে এ সাহিত্য আসরে চলতো আপ্যায়ন। তাঁদের বদলির পর বন্ধ হয়ে যায় এই আসর।

Model Hospital

তারপর প্রায় এক দশকের ব্যবধানে সাহিত্য একাডেমীর নবপর্যায়ের মাসিক সাহিত্য আসর শুরু হয়, যা হয় দীর্ঘস্থায়ী। এ আসর টেবিল-চেয়ারে বসে সর্বোচ্চ চার ঘন্টা ধরে চলতো। আপ্যায়ন করা হতো সাহিত্য একাডেমীর অর্থায়নে। শুধু আপ্যায়ন নয়, অতীতের স্বল্পস্থায়ী সাহিত্য আসরের চেয়ে নবপর্যায়ের সাহিত্য আসরে থাকতো হাল্কা আনন্দ-বিনোদন এবং আলোচনা-সমালোচনায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সকল লেখকের অবাধ সুযোগ। এমন ধারাবাহিক সাহিত্য আসরের ষাটতম সংখ্যা তথা পাঁচ বছর পূর্তি ছিলো তাই অনেক আনন্দের। সেজন্যে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিক্রিয়া ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত।

সাহিত্য আসরে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম হচ্ছেন এইচএম জাকির। তিনি সরকারি চাকুরিজীবী। তবে নেশায় লেখক ও গ্রন্থ প্রণেতা। তিনি ‘সাহিত্য আসরে প্রথম দিন’ শিরোনামে লিখেছেন, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী ২০১৪ সাল থেকে ‘মাসিক সাহিত্য আসর’ নামে প্রতি মাসে যে আসর করে আসছে তার ৫২তম আসরে একজন আড্ডারু হিসেবে আমার প্রথম অংশ নেয়া। মাধ্যমিকে পড়াকালে অণুকাব্য, অণুগল্প, ছড়া, কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ ছিলো। মাঝে মাঝে এসব লিখতামও। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে কয়েকবার আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৭ সালে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বৈশাখী সংখ্যায় লিখে সেরা ছড়াকারের পুরস্কার ও সনদ পাই। সাহিত্য একাডেমীর মাসিক সাহিত্য আড্ডার খবর দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ এবং ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি। তারপর থেকেই আড্ডায় যোগ দেওয়ার আগ্রহ জমে। কিন্তু কীভাবে যোগ দিবো, যোগ দিতে কী নিয়ম ইত্যাদি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। মনে সংকোচ থাকা সত্ত্বেও সাহিত্যকর্মী মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের সহযোগিতা চাই। তিনি জানালেন, প্রতি মাসের শেষ বুধবার সাহিত্য একাডেমী মিলনায়তনে বিকালে মাসিক সাহিত্য আসর বসে। আসরে সাহিত্যানুরাগী যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারেন। আপনিও আগামী আসরে চলে আসুন।

আমি যে আসরে যাই সেটি ছিলো ৫২তম আসর। দুদিন আগেই মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বার্তা দিয়ে আসরের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। বুধবার ঠিক ৪টার আগেই চলে গেলাম সাহিত্য একাডেমীতে। নতুন গেলাম, তাই প্রথমে একটু সংকোচ লেগেছিলো। পরবর্তীতে সব পরিচিত মুখের আগমন দেখে সংকোচ কেটে গেলো। নতুন আড্ডারু হিসেবে অভিনন্দনও পেলাম। সবাই নিজের কোনো না কোনো লেখা নিয়ে আসছে এবং নিজেই তা পড়ে শোনাচ্ছে। আবার সেই লেখায় উপস্থিত লেখকদের উৎসাহবর্ধক আলোকপাতও রয়েছে। খুব ভালোই লাগলো। প্রথম দিন আসছি তো, তাই লেখা নিয়ে আসতে হয় জানতাম না বলে লেখা নিতে পারিনি। সবার লেখা পাঠ শুনছি আর মনে মনে ভাবছি, ৫২তম আসরে আমার আগমন নিশ্চয়ই শুভ হবে। কারণ ৫২ সংখ্যাটি বাঙালির ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত। ৫২তম সাহিত্য আড্ডায় অংশ নিতে পেরেছি বলে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এই আত্মতৃপ্তি এবং সাহিত্যের প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকেই প্রতি মাসে সাহিত্য আসরে আমি চলে আসি।

আজ মাসিক সাহিত্য আসরটি ৬০তম আসরের মধ্য দিয়ে ৫ বছর পূর্ণ করলো। মাত্র ৯টি আসরে অংশগ্রহণ করে আমিও ৫ বছরের মাইলফলক স্পর্শ করলাম। চাঁদপুর সাহিত্যের চারণভূমি হিসেবে আরো এগিয়ে যাবে এবং ইলিশের বাড়ির মতো সাহিত্যের বাড়ি নামেও চাঁদপুর দেশ-বিদেশে খ্যাতি বয়ে আনবেথএই প্রত্যাশা রাখি। জয় হোক সাহিত্যের।

মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও নেশায় একজন লেখক। তাঁর সাহিত্যানুরাগ ভীষণ প্রবল। তিনি ‘সাহিত্য আসরে প্রাপ্তির আনন্দ’ শিরোনামে লিখেছেন সাহিত্য একডেমী চাঁদপুরের নবপর্যায়ের সাহিত্য আসরের পাঁচ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে-এটি অনেক আনন্দের খবর। এটি চাঁদপুরের সাহিত্য চর্চা ও গতিধারার উচ্ছল আনন্দের প্রকাশ।

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান এক গোধূলি সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বললেন, আমাদের আর খোলা আকাশের নিচে সাহিত্য আড্ডা দিতে হবে না। সাহিত্য একাডেমীতে এখন প্রতিমাসের শেষ বুধবার মাসিক সাহিত্য আসর হবে। একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত সাহেব এই উদ্যোগ নিয়েছেন। ফরিদ হাসান প্রথম আসরে আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। এরপর চাঁদপুরের সাহিত্যের সৌরভ জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে পর্যন্ত পৌঁছলো। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর নয় কেবল, চাঁদপুর হয়ে উঠলো সাহিত্যের বাড়িও।

সাহিত্য একাডেমীর মাসিক সাহিত্য আসর পিছিয়ে-পড়া সাহিত্যকে, ঝিমিয়ে-পড়া সাহিত্যামোদীদের এগিয়ে আসার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। আসরে নবীন লেখকরা যেমন এসেছেন, তেমনি অনেক প্রবীণ লেখকবৃন্দও আসরে এসে সাহিত্য পাঠ ও আলোচনা উপভোগ করেছেন। ফলে চাঁদপুরের তরুণরা সাহিত্য নিয়ে এখন আরো বেশি আগ্রহী ও মনোযোগী হয়েছে। চাঁদপুরের সাহিত্য যাদের নখদর্পণে তারা অবশ্যই অবলীলায় স্বীকার করবেন, বিগত পাঁচ বছরে চাঁদপুরের স্থানীয় লেখকদের লেখা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আমার মত ক্ষুদ্র লেখকের লেখাও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর সবটুকু কৃতিত্ব সাহিত্য একাডেমীর মাসিক সাহিত্য আসরের। চাঁদপুরের তরুণ লেখকরা এখন জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত ও সম্মানিত হচ্ছেন। এটি দেখে চাঁদপুরের মানুষ হিসেবে আমার খুব ভালো লাগে।

সাহিত্য আসরের উপস্থিতি অন্য সবার মতো আমাকেও পিপাসু রাখে। নবযুগের প্রান্তিক সময়ে সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডবদের বন্ধুত্ব, আড্ডায় প্রাণের উচ্ছ্বাসে সবাই মুগ্ধ হতেন। ভালোবাসতেন তাদের হাতে হাত ধরে চলাফেরা, রেললাইনের পথচলার গল্প। এই চর্চা অব্যাহত থাকুক। সফল ও সার্থক চাঁদপুরের ইতিহাসের প্রথম সাহিত্য সম্মেলন। ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান ও কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস। ভূয়সী প্রশংসা করেছেন গভীর রাতেও চাঁদপুরের সর্বস্তরের সাহিত্যকর্মীদের শিল্পকলায় ব্যাপক উপস্থিতির। প্রস্তাবিত আগামী দুই দিনের সাহিত্য সম্মেলনেও লেখকদের পদচারণায় মুখরিত থাকবে সাহিত্যাঙ্গন-এই প্রত্যাশা করছি। ধন্যবাদ সাহিত্য একাডেমীকে, ধন্যবাদ একাডেমীর মহাপরিচালক ও সাহিত্য আসরের আড্ডারুদেরকে।

চাঁদপুরের উদীয়মান লেখকদের অন্যতম নিঝুম খান। স্থানীয় পত্রিকায় শুধু নয়, জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয় তার লেখা। তিনি ‘সাহিত্যমনার অনুভূতি’ শিরোনামে লিখেছেন, সাহিত্য হচ্ছে একজন মানুষের চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ। তাত্ত্বিক শিক্ষার জন্যে যেমন বিদ্যালয়ের প্রয়োজন তেমনি সাহিত্যমনা ব্যক্তির সাহিত্য প্রতিভা বিকাশের জন্যে সাহিত্য একাডেমীর প্রয়োজন। কারণ সাহিত্য আসরই গুরু এবং শিষ্যকে একই সারিতে বসাতে পারে, কাছাকাছি আনতে পারে। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাথে সম্পর্কটা অতটা দীর্ঘ না হলেও এর প্রতি ভালোবাসা রয়েছে প্রগাঢ়। যখন সবেমাত্র লেখালেখির জগতে পা রেখেছি তখন পাহাড় সমান ভুলভ্রান্তি সাথে করে নিয়ে এসেছি। নিজের লেখার ভাষাগত, অর্থগত, ব্যবহারগত ভুলের অভাব ছিলো না। কিন্তু একটা কথা বলবো যে, আমার লেখালেখির শুরুতে এই সাহিত্য একাডেমীর সাহিত্য আসরের সাহায্যের সত্যিই প্রয়োজন ছিলো। ‘কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, ভুল থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত’ কথাটি এখান থেকে শেখা।

প্রথমবারে এসে নিজের ভেতর বেশ লজ্জা কাজ করছিলো। কারণ এতো এতো গুণীজনদের সামনে নিজেকে বেশ নগণ্য মনে হচ্ছিলো। গুটিসুটি মেরে বসেছিলাম শেষের চেয়ারটাতে। একে একে সবাই সবার স্বরচিত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ পাঠ করছিলো। আমি শুধু সকলের দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে ছিলাম। লেখালেখির প্রতি উৎসাহের কিছুটা এখান থেকে আসে। লাভ-ক্ষতির হিসেব করে কখনো লেখালেখি হয় না। তারপর থেকে সাহিত্য আড্ডায় এসে কবিতা পাঠ করি। কোনো জায়গায় ভালো-খারাপ হলে সেসব নিয়ে সাহিত্য আসরে আলোচনা হয়, সমালোচনা হয়। অভিজ্ঞ লেখকদের কাছ থেকে মূল্যবান মতামত পাই, যা পরবর্তী লেখায় উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা জোগায়। নতুনত্বের সন্ধানে প্রাণিত করে।

আগামী প্রজন্মকে কলম ধরার নিয়ম শিখাতে বর্তমান প্রজন্মের কলম সৈনিকদের প্রয়োজন। একত্রে প্রয়োজন। যা একমাত্র সাহিত্য আড্ডার মাধ্যমেই সম্ভব। একদিন এখান থেকেই উঠে আসবে কালজয়ী কোনো কবি বা লেখক। একজন সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে চাইবো সাহিত্য আড্ডার এই ধারা অব্যাহত থাকুক, চলমান থাকুক।

কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক হিসেবে সৌদি আরব প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় বহুল পরিচিত একটি নাম। তিনি ‘ভালোবাসার সাহিত্য আসর’ শিরোনামে লিখেছেন, দূর প্রবাসে বসে হাজার কাজের মাঝেও মনে পড়ে ভালোবাসার সাহিত্য একাডেমীর মাসিক আসর ও সাহিত্য প্রেমীদের। পারিবারিক জীবনের সচ্ছলতা আনার জন্যই ২০০৮ সালে প্রবাসে আসি। তার পূর্বেই চাঁদপুর জেলা সাহিত্য একাডেমীতে যাওয়া হতো। সেদিন যে মানুষদের কাছে পেয়েছি তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাহিত্য একাডেমীর বর্তমান মহাপরিচালক প্রিয় কাজী শাহাদাত ভাই। ১৯৯৬ সালে সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। নিজ উপজেলায় নাটক ও সাহিত্য চর্চা শুরু করি।

আমার মনে আছে, আমি যখন প্রথম শাহরাস্তি থেকে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীতে আসি, সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। বসার জায়গা পাইনি। সে অনেক কথা। তবে আজকের সাহিত্য একাডেমীর যে পরিপাটি পরিবেশ আছে তা সেদিন ছিল না। ছিল ভিন্ন পরিবেশ। ওই সময়ের আড্ডারুরা জানেন, চাঁদপুর সদরের বাইরে থেকে কেবল শাহরাস্তি উপজেলা থেকে একজন খুদে সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে আমিই অংশ নিতাম। চাঁদপুর সদরে থাকতেন আমার আরেক প্রিয় পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী দাদা। তিনি বলতেন, হৃদয় তুমি এতো দূর থেকে আসো, বেশি রাত হলে যাবে কী করে? বলতাম, কুমিল্লামুখি লোকাল শেষ বাসটি ৭টার দিকে ছেড়ে যাবে। সেই বাস ধরেই যাবো। ইঞ্জিঃ দেলোয়ার ভাই, কবি এস এম জয়নাল ভাইসহ অনেকের সাথেই দেখা হতো আসরে। কালীবাড়ি দিয়ে সাহিত্য একাডেমীতে যাওয়ার পথে কবি জসিম মেহেদী বলতেন, হৃদয় ভাই এতো দূর থেকে চলে এসেছেন! বলতাম, না এসে যে পারি না, মন মানে না। আমার পরিবার ও সাথের অনেক বন্ধু আমার এই সাহিত্য আসরে অংশ নেয়াটা ভালো চোখে দেখতেন না। বলতেন, এসব দিয়ে কী হবে, কই তোর মত সবাই যায় না। এসব বাদ দাও, মন দিয়ে লেখাপড়া কর। আমি বলতাম, সাহিত্য একাডেমীতে অনেক জ্ঞানী মানুষ আসে। আড্ডায় অংশ নেয়, সেখানে খারাপ কিছুই শেখায় না।

অপরদিকে প্রিয় কাজী শাহাদাত ভাই প্রায় বলতেন, কিরে হৃদয় তুই এতো দূর থেকে আসছ, কষ্ট হয় না? আমি বলতাম, ভাই এই সাহিত্য একাডেমীতে না এলে আপনাদের মত মানুষদের সাথে আমার দেখা হতো কী করে? ভাই হাসি দিয়ে বলতেন, তা ঠিক। সেই আমি যদি সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার সাথে না জড়াতাম তাহলে জীবনের মানে হয়তো আজও খুঁজে পেতাম না। এটি যে সুন্দর একটি জগৎ তা দূরপ্রবাসে বসেও বুঝতে পেতাম না। সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা যায়, সুন্দর একটি মনের অধিকারী হওয়া যায়, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা যায়। এটি আমি আমার জীবনের বেলায় শিখেছি।

আজ নিজেই আগ্রহী হয়ে সাহিত্য একাডেমীর আজীবন সদস্য হয়েছি। এটি সম্ভব হয়েছে প্রিয় কাজী শাহাদাত ভাইয়ের কারণে। আর এই সাহিত্য একাডেমীতে এসে আমি আরেকজন প্রিয় মানুষকে পেয়েছি, তিনি হলেন মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। তার কথা না বললেই নয়। কারণ তিনি আমাকে লেখালেখির জন্য উৎসাহ দিয়ে আসছেন। তার আন্তরিকতার কারণেই ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় আমার লেখা ‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দেশে থেকে ফরিদ হাসান সহযোগিতা না করলে প্রবাসে থেকে হয়তো বই প্রকাশ করতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। শুধু তাই নয়, আজ প্রিয় সাহিত্য একাডেমীর নবপর্যায়ের মাসিক আসরের ৫ বছর পূর্তি নিয়ে লিখেছি, তা ফরিদ আমাকে মনে না করিয়ে দিলে হয়তো লেখা হতো না। ধন্যবাদ প্রিয় ফরিদ হাসান। অনেক ধন্যবাদ লেখক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, কাফী ভাই, কবি ইকবাল ভাই, সালাউদ্দিন ভাই, ম. নূরে আলম পাটওয়ারী, আশিক বিন রহিম, রফিকুজ্জামান রণি, কবির হোসেন মিজিসহ সকল সাহিত্যপ্রেমীকে। যাদের পদচারণায় মুখরিত সাহিত্য একাডেমী, আমি সে-সকল কবি, লেখক, পাঠক, শুভাকাক্সক্ষীসহ সবাইকে প্রবাস থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী সারা দেশের সাহিত্যপ্রেমীদের নিয়ে একটি সাহিত্য মেলার আয়োজন করবে, ৫ বছরের পূর্তিতে সেই প্রত্যাশা করছি কর্তৃপক্ষের কাছে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

আবদুর রাজ্জাক একজন বিদগ্ধ প্রাবন্ধিক ও কবি। তিনি চাঁদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও পেশাগত কারণে চাঁদপুরে অবস্থান করে সাহিত্য আসরের নিয়মিত অংশগ্রহণকারী হয়ে যান। তিনি ‘সাহিত্য আসরের কথা’ শিরোনামে লিখেছেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ইতিবাচক পরিবর্তনে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতি ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করে। সাহিত্যবিষয়ক বৈপ্লবিক চিন্তা, সৃজনশীল ও মননশীলতাকে প্রত্যাশিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে সৃষ্টি করে নতুন সাহিত্যকর্ম। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের মানুষকে ব্যাপকতর শুদ্ধ করার হাতিয়ার। যে জাতি শিল্প-সাহিত্যে যতো বেশি এগিয়ে, তারা ততো বেশি সমৃদ্ধ ও সভ্য। সাহিত্য যেহেতু জ্ঞানের একটি নিগূঢ়তম শাখা তাই এর রস আস্বাদন করতে হলে পঠন-পাঠন ও শ্রবণ করতে হয়। আর এ লক্ষ্যেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে শিল্প-সাহিত্যিকরা জমিয়ে আড্ডা দিতেন এবং সে আড্ডা থেকে সৃষ্টি হতো সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম। আর এ সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম একসময় সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তিত করে দিতো।

আজ চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাহিত্য আড্ডার পাঁচ বছর পূর্তি। মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা। আমার মন আজ উচ্ছ্বসিত। কেননা ২০১৭ সালে কোনো এক আড্ডায় সাহিত্যকর্মী মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের হাত ধরে এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত হয়েছিলাম। পরিচিত হয়েছিলাম আড্ডারুদের সাথে। তারপর থেকে নিয়মিত এ আসরে উপস্থিত হয়ে আসছি। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর আড্ডায় নবীন-প্রবীণ ও বিজ্ঞজনদের আলোচনা আর স্বরচিত কবিতা-গল্প, প্রবন্ধ পাঠ এবং এগুলোর উৎকর্ষে পরামর্শ উপস্থাপন আমার সাহিত্য চর্চার পরিধিকে আরো বৃদ্ধি করেছে। সমৃদ্ধ করেছে আমার কবিতার বলয়। সর্বোপরি নবীন সাহিত্যকর্মীদের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে সাহিত্যের এ আসর। এ আড্ডায় উপস্থিত হয়ে চাঁদপুরের সাহিত্য চর্চার বিভিন্ন বিষয় জানতে পেরেছি। কোনো কোনো সাহিত্য আড্ডায় যোগ দিয়ে সাহিত্যের অজানা বিষয় আমার জানার সুযোগ হয়েছে। ভীষণভাবে আলোড়িত হয়েছে আমার নবীন সাহিত্যের আঙ্গিনা।

সাহিত্য আসরে এসে আমি যাদের সান্নিধ্য পেয়েছি তারা হলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, প্রবীণ লেখক তছলিম হোসেন হাওলাদার, কবি ইকবাল পারভেজ, সালাহউদ্দীন, কাদের পলাশ, মুহাম্মদ ফরিদ হাসানসহ আরো অনেকের। যাঁর কথা বিশেষভাবে না বললেই নয়, তিনি হলেন সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত। আমার লেখা কবিতা প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পরে তাঁর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়েছিলেন। যা আমার জীবন-চলার পাথেয় হয়ে থাকবে। অন্যদিকে চাঁদপুরের সাহিত্য জগতের মানুষদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতার ডোরে বেঁধেছেন লেখক কবির হোসেন মিজি। তাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর নিয়মিত সাহিত্য আসর নবীন-প্রবীণ লেখকদের জন্যে এক মিলনমেলা, এক আস্থার নাম। নবীন-প্রবীণ সাহিত্যসেবীদের সৃজনশীলতার উৎকর্ষে চাঁদপুর সাহিত্য আসর নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে তাদের মাঝে প্রাণসঞ্চার করুক-সেই প্রত্যাশা চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাহিত্য আড্ডার বিদগ্ধজনদের কাছে। (চলবে)

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন (পর্ব পাঁচ)

আপডেট সময় : ০২:৫২:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুন ২০২২

:::: কাজী শাহাদাত ::::
॥ পাঁচ ॥
সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর জন্মলগ্ন থেকে সাহিত্য আসর বা আড্ডা হয়েছে একেবারে বিক্ষিপ্তভাবে। শুরু হয়ে কিছুদিন চলেছে তো, আবার বন্ধ হয়ে গেছে। সাহিত্য একাডেমীর হলরুমে কাপড় বা ম্যাট বিছিয়ে চলতো মাসিক এ আড্ডা। চাঁদপুর জেলা পরিষদে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সামসুজ্জামান ভূইয়ার যোগদানের পর তিনি এ আড্ডাকে পাক্ষিক হিসেবে চালানোর জন্যে জোর তাগিদ দেন। তাতে সায় দেন চাঁদপুরের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আলকামা সিদ্দিকী (যিনি সরকারের সচিব হিসেবে বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত)। এঁরা দুজনই বিদগ্ধ লেখক। তাঁরা নিজেরা সাহিত্য আসরে উপস্থিত থাকতেন এবং চাঁদপুরের লেখকদের ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতেন ও উৎসাহ দিতেন। অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত অর্থে এ সাহিত্য আসরে চলতো আপ্যায়ন। তাঁদের বদলির পর বন্ধ হয়ে যায় এই আসর।

Model Hospital

তারপর প্রায় এক দশকের ব্যবধানে সাহিত্য একাডেমীর নবপর্যায়ের মাসিক সাহিত্য আসর শুরু হয়, যা হয় দীর্ঘস্থায়ী। এ আসর টেবিল-চেয়ারে বসে সর্বোচ্চ চার ঘন্টা ধরে চলতো। আপ্যায়ন করা হতো সাহিত্য একাডেমীর অর্থায়নে। শুধু আপ্যায়ন নয়, অতীতের স্বল্পস্থায়ী সাহিত্য আসরের চেয়ে নবপর্যায়ের সাহিত্য আসরে থাকতো হাল্কা আনন্দ-বিনোদন এবং আলোচনা-সমালোচনায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সকল লেখকের অবাধ সুযোগ। এমন ধারাবাহিক সাহিত্য আসরের ষাটতম সংখ্যা তথা পাঁচ বছর পূর্তি ছিলো তাই অনেক আনন্দের। সেজন্যে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিক্রিয়া ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত।

সাহিত্য আসরে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম হচ্ছেন এইচএম জাকির। তিনি সরকারি চাকুরিজীবী। তবে নেশায় লেখক ও গ্রন্থ প্রণেতা। তিনি ‘সাহিত্য আসরে প্রথম দিন’ শিরোনামে লিখেছেন, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী ২০১৪ সাল থেকে ‘মাসিক সাহিত্য আসর’ নামে প্রতি মাসে যে আসর করে আসছে তার ৫২তম আসরে একজন আড্ডারু হিসেবে আমার প্রথম অংশ নেয়া। মাধ্যমিকে পড়াকালে অণুকাব্য, অণুগল্প, ছড়া, কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ ছিলো। মাঝে মাঝে এসব লিখতামও। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে কয়েকবার আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৭ সালে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বৈশাখী সংখ্যায় লিখে সেরা ছড়াকারের পুরস্কার ও সনদ পাই। সাহিত্য একাডেমীর মাসিক সাহিত্য আড্ডার খবর দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ এবং ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি। তারপর থেকেই আড্ডায় যোগ দেওয়ার আগ্রহ জমে। কিন্তু কীভাবে যোগ দিবো, যোগ দিতে কী নিয়ম ইত্যাদি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। মনে সংকোচ থাকা সত্ত্বেও সাহিত্যকর্মী মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের সহযোগিতা চাই। তিনি জানালেন, প্রতি মাসের শেষ বুধবার সাহিত্য একাডেমী মিলনায়তনে বিকালে মাসিক সাহিত্য আসর বসে। আসরে সাহিত্যানুরাগী যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারেন। আপনিও আগামী আসরে চলে আসুন।

আমি যে আসরে যাই সেটি ছিলো ৫২তম আসর। দুদিন আগেই মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বার্তা দিয়ে আসরের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। বুধবার ঠিক ৪টার আগেই চলে গেলাম সাহিত্য একাডেমীতে। নতুন গেলাম, তাই প্রথমে একটু সংকোচ লেগেছিলো। পরবর্তীতে সব পরিচিত মুখের আগমন দেখে সংকোচ কেটে গেলো। নতুন আড্ডারু হিসেবে অভিনন্দনও পেলাম। সবাই নিজের কোনো না কোনো লেখা নিয়ে আসছে এবং নিজেই তা পড়ে শোনাচ্ছে। আবার সেই লেখায় উপস্থিত লেখকদের উৎসাহবর্ধক আলোকপাতও রয়েছে। খুব ভালোই লাগলো। প্রথম দিন আসছি তো, তাই লেখা নিয়ে আসতে হয় জানতাম না বলে লেখা নিতে পারিনি। সবার লেখা পাঠ শুনছি আর মনে মনে ভাবছি, ৫২তম আসরে আমার আগমন নিশ্চয়ই শুভ হবে। কারণ ৫২ সংখ্যাটি বাঙালির ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত। ৫২তম সাহিত্য আড্ডায় অংশ নিতে পেরেছি বলে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এই আত্মতৃপ্তি এবং সাহিত্যের প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকেই প্রতি মাসে সাহিত্য আসরে আমি চলে আসি।

আজ মাসিক সাহিত্য আসরটি ৬০তম আসরের মধ্য দিয়ে ৫ বছর পূর্ণ করলো। মাত্র ৯টি আসরে অংশগ্রহণ করে আমিও ৫ বছরের মাইলফলক স্পর্শ করলাম। চাঁদপুর সাহিত্যের চারণভূমি হিসেবে আরো এগিয়ে যাবে এবং ইলিশের বাড়ির মতো সাহিত্যের বাড়ি নামেও চাঁদপুর দেশ-বিদেশে খ্যাতি বয়ে আনবেথএই প্রত্যাশা রাখি। জয় হোক সাহিত্যের।

মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও নেশায় একজন লেখক। তাঁর সাহিত্যানুরাগ ভীষণ প্রবল। তিনি ‘সাহিত্য আসরে প্রাপ্তির আনন্দ’ শিরোনামে লিখেছেন সাহিত্য একডেমী চাঁদপুরের নবপর্যায়ের সাহিত্য আসরের পাঁচ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে-এটি অনেক আনন্দের খবর। এটি চাঁদপুরের সাহিত্য চর্চা ও গতিধারার উচ্ছল আনন্দের প্রকাশ।

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান এক গোধূলি সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বললেন, আমাদের আর খোলা আকাশের নিচে সাহিত্য আড্ডা দিতে হবে না। সাহিত্য একাডেমীতে এখন প্রতিমাসের শেষ বুধবার মাসিক সাহিত্য আসর হবে। একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত সাহেব এই উদ্যোগ নিয়েছেন। ফরিদ হাসান প্রথম আসরে আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। এরপর চাঁদপুরের সাহিত্যের সৌরভ জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে পর্যন্ত পৌঁছলো। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর নয় কেবল, চাঁদপুর হয়ে উঠলো সাহিত্যের বাড়িও।

সাহিত্য একাডেমীর মাসিক সাহিত্য আসর পিছিয়ে-পড়া সাহিত্যকে, ঝিমিয়ে-পড়া সাহিত্যামোদীদের এগিয়ে আসার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। আসরে নবীন লেখকরা যেমন এসেছেন, তেমনি অনেক প্রবীণ লেখকবৃন্দও আসরে এসে সাহিত্য পাঠ ও আলোচনা উপভোগ করেছেন। ফলে চাঁদপুরের তরুণরা সাহিত্য নিয়ে এখন আরো বেশি আগ্রহী ও মনোযোগী হয়েছে। চাঁদপুরের সাহিত্য যাদের নখদর্পণে তারা অবশ্যই অবলীলায় স্বীকার করবেন, বিগত পাঁচ বছরে চাঁদপুরের স্থানীয় লেখকদের লেখা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আমার মত ক্ষুদ্র লেখকের লেখাও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর সবটুকু কৃতিত্ব সাহিত্য একাডেমীর মাসিক সাহিত্য আসরের। চাঁদপুরের তরুণ লেখকরা এখন জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত ও সম্মানিত হচ্ছেন। এটি দেখে চাঁদপুরের মানুষ হিসেবে আমার খুব ভালো লাগে।

সাহিত্য আসরের উপস্থিতি অন্য সবার মতো আমাকেও পিপাসু রাখে। নবযুগের প্রান্তিক সময়ে সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডবদের বন্ধুত্ব, আড্ডায় প্রাণের উচ্ছ্বাসে সবাই মুগ্ধ হতেন। ভালোবাসতেন তাদের হাতে হাত ধরে চলাফেরা, রেললাইনের পথচলার গল্প। এই চর্চা অব্যাহত থাকুক। সফল ও সার্থক চাঁদপুরের ইতিহাসের প্রথম সাহিত্য সম্মেলন। ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান ও কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস। ভূয়সী প্রশংসা করেছেন গভীর রাতেও চাঁদপুরের সর্বস্তরের সাহিত্যকর্মীদের শিল্পকলায় ব্যাপক উপস্থিতির। প্রস্তাবিত আগামী দুই দিনের সাহিত্য সম্মেলনেও লেখকদের পদচারণায় মুখরিত থাকবে সাহিত্যাঙ্গন-এই প্রত্যাশা করছি। ধন্যবাদ সাহিত্য একাডেমীকে, ধন্যবাদ একাডেমীর মহাপরিচালক ও সাহিত্য আসরের আড্ডারুদেরকে।

চাঁদপুরের উদীয়মান লেখকদের অন্যতম নিঝুম খান। স্থানীয় পত্রিকায় শুধু নয়, জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয় তার লেখা। তিনি ‘সাহিত্যমনার অনুভূতি’ শিরোনামে লিখেছেন, সাহিত্য হচ্ছে একজন মানুষের চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ। তাত্ত্বিক শিক্ষার জন্যে যেমন বিদ্যালয়ের প্রয়োজন তেমনি সাহিত্যমনা ব্যক্তির সাহিত্য প্রতিভা বিকাশের জন্যে সাহিত্য একাডেমীর প্রয়োজন। কারণ সাহিত্য আসরই গুরু এবং শিষ্যকে একই সারিতে বসাতে পারে, কাছাকাছি আনতে পারে। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাথে সম্পর্কটা অতটা দীর্ঘ না হলেও এর প্রতি ভালোবাসা রয়েছে প্রগাঢ়। যখন সবেমাত্র লেখালেখির জগতে পা রেখেছি তখন পাহাড় সমান ভুলভ্রান্তি সাথে করে নিয়ে এসেছি। নিজের লেখার ভাষাগত, অর্থগত, ব্যবহারগত ভুলের অভাব ছিলো না। কিন্তু একটা কথা বলবো যে, আমার লেখালেখির শুরুতে এই সাহিত্য একাডেমীর সাহিত্য আসরের সাহায্যের সত্যিই প্রয়োজন ছিলো। ‘কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, ভুল থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত’ কথাটি এখান থেকে শেখা।

প্রথমবারে এসে নিজের ভেতর বেশ লজ্জা কাজ করছিলো। কারণ এতো এতো গুণীজনদের সামনে নিজেকে বেশ নগণ্য মনে হচ্ছিলো। গুটিসুটি মেরে বসেছিলাম শেষের চেয়ারটাতে। একে একে সবাই সবার স্বরচিত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ পাঠ করছিলো। আমি শুধু সকলের দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে ছিলাম। লেখালেখির প্রতি উৎসাহের কিছুটা এখান থেকে আসে। লাভ-ক্ষতির হিসেব করে কখনো লেখালেখি হয় না। তারপর থেকে সাহিত্য আড্ডায় এসে কবিতা পাঠ করি। কোনো জায়গায় ভালো-খারাপ হলে সেসব নিয়ে সাহিত্য আসরে আলোচনা হয়, সমালোচনা হয়। অভিজ্ঞ লেখকদের কাছ থেকে মূল্যবান মতামত পাই, যা পরবর্তী লেখায় উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা জোগায়। নতুনত্বের সন্ধানে প্রাণিত করে।

আগামী প্রজন্মকে কলম ধরার নিয়ম শিখাতে বর্তমান প্রজন্মের কলম সৈনিকদের প্রয়োজন। একত্রে প্রয়োজন। যা একমাত্র সাহিত্য আড্ডার মাধ্যমেই সম্ভব। একদিন এখান থেকেই উঠে আসবে কালজয়ী কোনো কবি বা লেখক। একজন সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে চাইবো সাহিত্য আড্ডার এই ধারা অব্যাহত থাকুক, চলমান থাকুক।

কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক হিসেবে সৌদি আরব প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় বহুল পরিচিত একটি নাম। তিনি ‘ভালোবাসার সাহিত্য আসর’ শিরোনামে লিখেছেন, দূর প্রবাসে বসে হাজার কাজের মাঝেও মনে পড়ে ভালোবাসার সাহিত্য একাডেমীর মাসিক আসর ও সাহিত্য প্রেমীদের। পারিবারিক জীবনের সচ্ছলতা আনার জন্যই ২০০৮ সালে প্রবাসে আসি। তার পূর্বেই চাঁদপুর জেলা সাহিত্য একাডেমীতে যাওয়া হতো। সেদিন যে মানুষদের কাছে পেয়েছি তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাহিত্য একাডেমীর বর্তমান মহাপরিচালক প্রিয় কাজী শাহাদাত ভাই। ১৯৯৬ সালে সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। নিজ উপজেলায় নাটক ও সাহিত্য চর্চা শুরু করি।

আমার মনে আছে, আমি যখন প্রথম শাহরাস্তি থেকে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীতে আসি, সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। বসার জায়গা পাইনি। সে অনেক কথা। তবে আজকের সাহিত্য একাডেমীর যে পরিপাটি পরিবেশ আছে তা সেদিন ছিল না। ছিল ভিন্ন পরিবেশ। ওই সময়ের আড্ডারুরা জানেন, চাঁদপুর সদরের বাইরে থেকে কেবল শাহরাস্তি উপজেলা থেকে একজন খুদে সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে আমিই অংশ নিতাম। চাঁদপুর সদরে থাকতেন আমার আরেক প্রিয় পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী দাদা। তিনি বলতেন, হৃদয় তুমি এতো দূর থেকে আসো, বেশি রাত হলে যাবে কী করে? বলতাম, কুমিল্লামুখি লোকাল শেষ বাসটি ৭টার দিকে ছেড়ে যাবে। সেই বাস ধরেই যাবো। ইঞ্জিঃ দেলোয়ার ভাই, কবি এস এম জয়নাল ভাইসহ অনেকের সাথেই দেখা হতো আসরে। কালীবাড়ি দিয়ে সাহিত্য একাডেমীতে যাওয়ার পথে কবি জসিম মেহেদী বলতেন, হৃদয় ভাই এতো দূর থেকে চলে এসেছেন! বলতাম, না এসে যে পারি না, মন মানে না। আমার পরিবার ও সাথের অনেক বন্ধু আমার এই সাহিত্য আসরে অংশ নেয়াটা ভালো চোখে দেখতেন না। বলতেন, এসব দিয়ে কী হবে, কই তোর মত সবাই যায় না। এসব বাদ দাও, মন দিয়ে লেখাপড়া কর। আমি বলতাম, সাহিত্য একাডেমীতে অনেক জ্ঞানী মানুষ আসে। আড্ডায় অংশ নেয়, সেখানে খারাপ কিছুই শেখায় না।

অপরদিকে প্রিয় কাজী শাহাদাত ভাই প্রায় বলতেন, কিরে হৃদয় তুই এতো দূর থেকে আসছ, কষ্ট হয় না? আমি বলতাম, ভাই এই সাহিত্য একাডেমীতে না এলে আপনাদের মত মানুষদের সাথে আমার দেখা হতো কী করে? ভাই হাসি দিয়ে বলতেন, তা ঠিক। সেই আমি যদি সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার সাথে না জড়াতাম তাহলে জীবনের মানে হয়তো আজও খুঁজে পেতাম না। এটি যে সুন্দর একটি জগৎ তা দূরপ্রবাসে বসেও বুঝতে পেতাম না। সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা যায়, সুন্দর একটি মনের অধিকারী হওয়া যায়, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা যায়। এটি আমি আমার জীবনের বেলায় শিখেছি।

আজ নিজেই আগ্রহী হয়ে সাহিত্য একাডেমীর আজীবন সদস্য হয়েছি। এটি সম্ভব হয়েছে প্রিয় কাজী শাহাদাত ভাইয়ের কারণে। আর এই সাহিত্য একাডেমীতে এসে আমি আরেকজন প্রিয় মানুষকে পেয়েছি, তিনি হলেন মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। তার কথা না বললেই নয়। কারণ তিনি আমাকে লেখালেখির জন্য উৎসাহ দিয়ে আসছেন। তার আন্তরিকতার কারণেই ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় আমার লেখা ‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দেশে থেকে ফরিদ হাসান সহযোগিতা না করলে প্রবাসে থেকে হয়তো বই প্রকাশ করতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। শুধু তাই নয়, আজ প্রিয় সাহিত্য একাডেমীর নবপর্যায়ের মাসিক আসরের ৫ বছর পূর্তি নিয়ে লিখেছি, তা ফরিদ আমাকে মনে না করিয়ে দিলে হয়তো লেখা হতো না। ধন্যবাদ প্রিয় ফরিদ হাসান। অনেক ধন্যবাদ লেখক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, কাফী ভাই, কবি ইকবাল ভাই, সালাউদ্দিন ভাই, ম. নূরে আলম পাটওয়ারী, আশিক বিন রহিম, রফিকুজ্জামান রণি, কবির হোসেন মিজিসহ সকল সাহিত্যপ্রেমীকে। যাদের পদচারণায় মুখরিত সাহিত্য একাডেমী, আমি সে-সকল কবি, লেখক, পাঠক, শুভাকাক্সক্ষীসহ সবাইকে প্রবাস থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী সারা দেশের সাহিত্যপ্রেমীদের নিয়ে একটি সাহিত্য মেলার আয়োজন করবে, ৫ বছরের পূর্তিতে সেই প্রত্যাশা করছি কর্তৃপক্ষের কাছে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

আবদুর রাজ্জাক একজন বিদগ্ধ প্রাবন্ধিক ও কবি। তিনি চাঁদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও পেশাগত কারণে চাঁদপুরে অবস্থান করে সাহিত্য আসরের নিয়মিত অংশগ্রহণকারী হয়ে যান। তিনি ‘সাহিত্য আসরের কথা’ শিরোনামে লিখেছেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ইতিবাচক পরিবর্তনে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতি ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করে। সাহিত্যবিষয়ক বৈপ্লবিক চিন্তা, সৃজনশীল ও মননশীলতাকে প্রত্যাশিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে সৃষ্টি করে নতুন সাহিত্যকর্ম। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের মানুষকে ব্যাপকতর শুদ্ধ করার হাতিয়ার। যে জাতি শিল্প-সাহিত্যে যতো বেশি এগিয়ে, তারা ততো বেশি সমৃদ্ধ ও সভ্য। সাহিত্য যেহেতু জ্ঞানের একটি নিগূঢ়তম শাখা তাই এর রস আস্বাদন করতে হলে পঠন-পাঠন ও শ্রবণ করতে হয়। আর এ লক্ষ্যেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে শিল্প-সাহিত্যিকরা জমিয়ে আড্ডা দিতেন এবং সে আড্ডা থেকে সৃষ্টি হতো সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম। আর এ সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম একসময় সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তিত করে দিতো।

আজ চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাহিত্য আড্ডার পাঁচ বছর পূর্তি। মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা। আমার মন আজ উচ্ছ্বসিত। কেননা ২০১৭ সালে কোনো এক আড্ডায় সাহিত্যকর্মী মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের হাত ধরে এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত হয়েছিলাম। পরিচিত হয়েছিলাম আড্ডারুদের সাথে। তারপর থেকে নিয়মিত এ আসরে উপস্থিত হয়ে আসছি। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর আড্ডায় নবীন-প্রবীণ ও বিজ্ঞজনদের আলোচনা আর স্বরচিত কবিতা-গল্প, প্রবন্ধ পাঠ এবং এগুলোর উৎকর্ষে পরামর্শ উপস্থাপন আমার সাহিত্য চর্চার পরিধিকে আরো বৃদ্ধি করেছে। সমৃদ্ধ করেছে আমার কবিতার বলয়। সর্বোপরি নবীন সাহিত্যকর্মীদের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে সাহিত্যের এ আসর। এ আড্ডায় উপস্থিত হয়ে চাঁদপুরের সাহিত্য চর্চার বিভিন্ন বিষয় জানতে পেরেছি। কোনো কোনো সাহিত্য আড্ডায় যোগ দিয়ে সাহিত্যের অজানা বিষয় আমার জানার সুযোগ হয়েছে। ভীষণভাবে আলোড়িত হয়েছে আমার নবীন সাহিত্যের আঙ্গিনা।

সাহিত্য আসরে এসে আমি যাদের সান্নিধ্য পেয়েছি তারা হলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, প্রবীণ লেখক তছলিম হোসেন হাওলাদার, কবি ইকবাল পারভেজ, সালাহউদ্দীন, কাদের পলাশ, মুহাম্মদ ফরিদ হাসানসহ আরো অনেকের। যাঁর কথা বিশেষভাবে না বললেই নয়, তিনি হলেন সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত। আমার লেখা কবিতা প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পরে তাঁর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়েছিলেন। যা আমার জীবন-চলার পাথেয় হয়ে থাকবে। অন্যদিকে চাঁদপুরের সাহিত্য জগতের মানুষদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতার ডোরে বেঁধেছেন লেখক কবির হোসেন মিজি। তাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর নিয়মিত সাহিত্য আসর নবীন-প্রবীণ লেখকদের জন্যে এক মিলনমেলা, এক আস্থার নাম। নবীন-প্রবীণ সাহিত্যসেবীদের সৃজনশীলতার উৎকর্ষে চাঁদপুর সাহিত্য আসর নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে তাদের মাঝে প্রাণসঞ্চার করুক-সেই প্রত্যাশা চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাহিত্য আড্ডার বিদগ্ধজনদের কাছে। (চলবে)