মোঃ রাছেল : চাঁদপুরের কচুয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেদারছে চলছে প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং বাণিজ্য। দেখবাল করার জন্য যেন কেউ নেই। কচুয়া উপজেলার ৭ টি কলেজ সহ ৪০ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩৭টি মাদ্রাসা রয়েছে। এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠানে চলছে প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং বাণিজ্য।
২০১১ সালে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়ার ঠিক পরের বছরেরই শিক্ষা মন্ত্রনালয় একটি নীতিমালা জারি করে। এ নীতিমালা ছিল ‘শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ২০১২’। প্রায় বছর যাবৎ এ নীতিমালা মানা হচ্ছে কিনা মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। তারপর এ কার্যক্রম পরিচালনা ভাটা পড়তে থাকে। নীতিমালা জারির ১০ বছর পর ২০২২ সালে এসে ও দেখা যায় মাঠ পর্যায়ে এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ নীতিমালা সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা দেখভাল করার জন্য কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি ও গঠন করা হয়। কিন্তু এই মনিটরিং কমিটিরও কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় , উপজেলা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার সামনে রুম ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রায় ২০-২৫ জন ছাত্রÑছাত্রী নিয়ে কোচিং ও প্রাইভেট চালিয়ে যাচ্ছেন।
আগামী শিক্ষাবর্ষে চারটি শ্রেনীতে নতুন কারিকুলাম শুরু হতে যাচ্ছে। এ কারিকুলামে শিক্ষকদের হাতে অনেক কারিকুলাম রাখা হয়েছে। তাই শিক্ষকের কাছে কোচিং টিউশনিতে পড়লে বেশি নম্বর দেওয়া হবে। বেশি নম্বর পাইয়ে দিতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে কোচিং টিউশনিতে পড়ার জন্য উৎসাহিত করছে। টিউশনিতে জড়িত কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রাইভেট পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়ার ব্যাপক অভিযোগ উঠে। পরে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত টিম গঠন করা হলেও রহস্য জনক কারনে তদন্ত কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। ওই অসাধু শিক্ষকরা শান্তির সম্মুখীন না হয়ে প্রভাবশালীদের তদবিরে পার পেয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন গরীব শিক্ষার্থী জানায়, আমরা ক্লাসে কঠিন পাঠ গুলো ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষন করলে ওই পাঠ বুঝার জন্য শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়তে বলে। কিন্তু প্রাইভেট পড়ায় অর্থ যোগান দেওয়ার আমাদের পক্ষ সম্ভব হচ্ছে না। নতুন কারিকুলামে প্রাইভেট টিউশনিতে জড়িত শিক্ষকদের কাছ থেকে কাংখিত নম্বর লাভ করতে পারবো কিনা এ নিয়ে উদ্বিগ্নে আছি।
ছাত্র-অভিভাবক উপজেলার আশ্রাফপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, সায়েদাপুর গ্রামের আবুল কালাম, নোয়াগাঁও গ্রামের মকবুল হোসেন ও ডুমুরিয়া গ্রামের মোঃ ইলিয়াছ জানান, আমরা গরীব অভিভাবক, অর্থনৈতিক টানা পোড়নে মাসিক বেতন পরীক্ষার ফি, বিবিধ চার্জ ইত্যাদি পরিশোধ ও প্রয়োজনীয় কাগজ, কলম এসব ক্রয় করে দিতে হিমশিম খাচ্ছি। এমন অবস্থায় আমাদের সন্তানদের প্রাইভেট পড়ানোর মধ্য দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে নেওয়ার বিষয় চিন্তাই করতে পারছিনা। কোচিংবাজ শিক্ষকরা এতটাই ভয়াবহ যে তারা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিবেচনায় নেয় না।
এব্যাপরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলী আশ্রাফ খান জানান, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনি চলছে এমন অভিযোগ পেলে সরজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ক্লাসে পাঠদানের বাইরে মাসে বাড়তি ক্লাস নেয়ার জন্য যে পরিমাণ টাকা নেয়ার বিধান করা হয়েছে তার বাইরে কোনো কোচিং করানো যাবে না। অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। মহানগরী এলাকার প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে তিনশ টাকা, জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দু’শ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড়শ’ টাকা নেয়া যাবে।