ঢাকা ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চরাঞ্চলে সবজি চাষে ঝুঁকছে চাষীরা

মনিরুল ইসলাম মনির : কৃষকেরা অন্য ফসলের চাষ কমিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। তবে সবজি চাষে বেড়েছে কীটনাশকের ব্যবহার। কৃষকেরা বলছেন, ধান চাষের চেয়ে সবজি চাষ লাভজনক। এক বছরে মৌসুমভিত্তিক নানা সবজি চাষ করা যায়। অল্প সময়ে ফসল ঘরে ওঠে। তবে খেতের ফসল রক্ষার জন্য ঘন ঘন কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে।

Model Hospital

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজির চাষ হয়েছে। এ ছাড়া চরাঞ্চলের জমিতে মুলা, শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ঢ্যাঁড়সসহ নানা জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২০০ হেক্টর।

উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, মাইলের পর মাইল জুড়ে শীতের হরেক রকম সবজি চাষ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মুলা, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজরসহ শীতের বেশ কিছু আগাম সবজি বাজারে উঠেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এসব সবজির দাম বেশি।

কৃষকেরা বলেন, ভালো দাম পাওয়ায় শীতকালীন সবজি চাষে তাঁদের আগ্রহ বেড়েছে। আবার আবহাওয়াও অনুকূলে।
উপজেলার চরকাশিম গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ইব্রাহিম গাজী (৫৫) দেড় দশক ধরে সবজির চাষ করছেন। ২০০৭ সালে বিঘাখানেক জমিতে টমেটো ও বেগুন লাগানোর মধ্য দিয়ে সবজির চাষ শুরু করেন।

জিল্লুর রহমান বকাউল বলেন, ধান চাষে লাভ নেই। শুধু ভাতের জন্যই বিঘা দুয়েক জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। বাকি তিন বিঘায় শীতকালীন নানা সবজি লাগিয়েছেন। এক দশক আগেও সবজিখেতে দুই সপ্তাহে একবার কীটনাশক ছিটালে চলত। এখন পোকা আর রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেড়েছে। দুদিন পরপর খেতে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। কীটনাশক ছিটানোর পরপরই কোনো কোনো সবজি খেত থেকে তুলে হাটে নিতে হয়।

চরওমেদ গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন (৫৮) আট বিঘা জমি চাষ করেন। একসময় শুধু আমন, বোরো ধান আর কলা চাষাবাদ করতেন।

কয়েক বছর ধরে অন্য ফসলের চাষাবাদ কমিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। এ বছর তিনি ফুলকপি, পটোল, আগাম জাতের আলু এবং বিভিন্ন জাতের শাক চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আগামী বছর আমন চাষ কমিয়ে পুরো জমিতেই সবজি চাষাবাদের ইচ্ছা আছে। ধান চাষের বদলে সবজিতে ঝুঁকেছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধান চাষে লোকসান দিতে হয়। সবজি চাষে চার গুণ লাভ।

শুধু কৃষকেরা নন, সবজি চাষে ঝুঁকছেন শিক্ষিত তরুণেরাও। তিনি এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন। এর মধ্যে পাঁচ বিঘায় আছে সবজি। খেতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এই কৃষক ভারমি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছেন। অরগানিক পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমন করছেন।

রাজ্জাক মিয়া বলেন, কীটনাশক ছিটানো খেতের সবজি খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এ কারণে কীটনাশকের ব্যবহার শূন্যতে আনতে নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি অন্যদের সচেতন করতে কাজ করছেন।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, মতলব উত্তর উপজেলার চরাঞ্চল’সহ বিভিন্ন এলাকায় শীতকালিন আগাম সবজি চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে সবজি চাষের। সবজির দাম আশানুরূপ হওয়ায় চাষীরা সবজি চাষ করছে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগন চাষীদের সময়োপযুগী পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ছাত্রীসহ প্রধান শিক্ষক আটক

চরাঞ্চলে সবজি চাষে ঝুঁকছে চাষীরা

আপডেট সময় : ০২:৫৩:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২

মনিরুল ইসলাম মনির : কৃষকেরা অন্য ফসলের চাষ কমিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। তবে সবজি চাষে বেড়েছে কীটনাশকের ব্যবহার। কৃষকেরা বলছেন, ধান চাষের চেয়ে সবজি চাষ লাভজনক। এক বছরে মৌসুমভিত্তিক নানা সবজি চাষ করা যায়। অল্প সময়ে ফসল ঘরে ওঠে। তবে খেতের ফসল রক্ষার জন্য ঘন ঘন কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে।

Model Hospital

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজির চাষ হয়েছে। এ ছাড়া চরাঞ্চলের জমিতে মুলা, শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ঢ্যাঁড়সসহ নানা জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২০০ হেক্টর।

উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, মাইলের পর মাইল জুড়ে শীতের হরেক রকম সবজি চাষ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মুলা, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজরসহ শীতের বেশ কিছু আগাম সবজি বাজারে উঠেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এসব সবজির দাম বেশি।

কৃষকেরা বলেন, ভালো দাম পাওয়ায় শীতকালীন সবজি চাষে তাঁদের আগ্রহ বেড়েছে। আবার আবহাওয়াও অনুকূলে।
উপজেলার চরকাশিম গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ইব্রাহিম গাজী (৫৫) দেড় দশক ধরে সবজির চাষ করছেন। ২০০৭ সালে বিঘাখানেক জমিতে টমেটো ও বেগুন লাগানোর মধ্য দিয়ে সবজির চাষ শুরু করেন।

জিল্লুর রহমান বকাউল বলেন, ধান চাষে লাভ নেই। শুধু ভাতের জন্যই বিঘা দুয়েক জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। বাকি তিন বিঘায় শীতকালীন নানা সবজি লাগিয়েছেন। এক দশক আগেও সবজিখেতে দুই সপ্তাহে একবার কীটনাশক ছিটালে চলত। এখন পোকা আর রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেড়েছে। দুদিন পরপর খেতে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। কীটনাশক ছিটানোর পরপরই কোনো কোনো সবজি খেত থেকে তুলে হাটে নিতে হয়।

চরওমেদ গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন (৫৮) আট বিঘা জমি চাষ করেন। একসময় শুধু আমন, বোরো ধান আর কলা চাষাবাদ করতেন।

কয়েক বছর ধরে অন্য ফসলের চাষাবাদ কমিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। এ বছর তিনি ফুলকপি, পটোল, আগাম জাতের আলু এবং বিভিন্ন জাতের শাক চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আগামী বছর আমন চাষ কমিয়ে পুরো জমিতেই সবজি চাষাবাদের ইচ্ছা আছে। ধান চাষের বদলে সবজিতে ঝুঁকেছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধান চাষে লোকসান দিতে হয়। সবজি চাষে চার গুণ লাভ।

শুধু কৃষকেরা নন, সবজি চাষে ঝুঁকছেন শিক্ষিত তরুণেরাও। তিনি এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন। এর মধ্যে পাঁচ বিঘায় আছে সবজি। খেতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এই কৃষক ভারমি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছেন। অরগানিক পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমন করছেন।

রাজ্জাক মিয়া বলেন, কীটনাশক ছিটানো খেতের সবজি খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এ কারণে কীটনাশকের ব্যবহার শূন্যতে আনতে নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি অন্যদের সচেতন করতে কাজ করছেন।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, মতলব উত্তর উপজেলার চরাঞ্চল’সহ বিভিন্ন এলাকায় শীতকালিন আগাম সবজি চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে সবজি চাষের। সবজির দাম আশানুরূপ হওয়ায় চাষীরা সবজি চাষ করছে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগন চাষীদের সময়োপযুগী পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।