দৈনিক ভোরের কাগজ থেকে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করে ডিক্লারেশন বাঁচাতে ক্ষুদ্র একটি টিম নিয়ে পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগের প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন পত্রিকাটির সুবিধা বঞ্চিত সাংবাদিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাজধানীর মালিবাগের মৌচাক এলাকায় ভোরের কাগজ অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত, বেতন ভাতা, ওয়েজ বোর্ড ও ইনক্রিমেন্ট সহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে সাংবাদিক ও কর্মচারিদের মাঝে বেশ কয়েক মাস ধরেই চলছে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা। সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অভিযোগ সরকারি সকল বিজ্ঞাপন ৮তম ওয়েজ বোর্ড নিয়মে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী বেতন ভাতা ও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না কাউকে। এ নিয়েই গত কয়েক মাস চলছে অস্থিরতা।
ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা ও নিয়োগ দেওয়া সহ বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে বিগত ৯ই জানুয়ারি ২০২৫ সাংবাদিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে থেকে ভোরের কাগজের প্রকাশক সাবের হোসেন চৌধুরী বরাবর একটি লিখিত দরখাস্ত দেন প্রতিনিধি দল। ঐ আবেদনের কোন প্রতিক্রিয়া না আসলে পুনরায় ১৩ই জানুয়ারি আরেকটি দরখাস্ত জমা দেন প্রতিনিধি দল। তাতে লেখা থাকে ১৯ জানুয়ারির ভিতরে আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া না হলে আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপে অতিক্রম করবো বলে জানিয়ে দেন সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারি দলের প্রতিনিধিগণ।
তাছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের পর পত্রিকাটির সম্পাদক শ্যামল দত্ত জেলে থাকার কারনে বার্তা বিভাগ সহ অন্যান্য বিষয় গুলো দেখাশুনা করছেন সম্পাদক পত্নী ও বার্তা সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন, বিজ্ঞাপন ম্যানেজার এস এম এ রাজ্জাক, এ্যাডমিন সুজন নন্দি মজুমদার, চিফ অব একাউন্টস এ কে সোহাগ সহ বেশ কয়েক জন।
জানা যায়, শ্যামল দত্তের অবর্তমানে প্রত্রিকাটির বার্তা সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন নিজেই সম্পাদকের পাওয়ার নিয়ে অফিসটি চালিয়ে আসছিলেন। এই পাওয়ারের প্রভাব খাটিয়ে সাংবাদিক ও সাংবাদিক কর্মচারীদের সাথে যাচ্ছা তাই ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠে। জোর পুর্বক চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করতেন বলেও জানা যায়। যারা অব্যাহতি না দিতেন তাদের সাথে চলতো মানসিক নির্যাতন।
এদিকে কোন দাবি-দাওয়া না মেনেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে গত ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ভোরের কাগজ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে একটি নোটিস টানিয়ে দেওয়া হয় কার্যালয়ের মুল গেইটে। এতে অভিযোগ তোলা হয় মালিক পক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারনে কার্যালয়টি বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। এবং অলিখিতভাবে জামায়াত বিএনপির দখলদারিত্ব ও হুমকির কারণে বন্ধ করা হচ্ছে বলে প্রচার করে সুবিধাভোগীরা।
অপর দিকে গত ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ভোরের কাগজ প্রধান কার্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে অফিস তালাবদ্ধ ও পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করা হয়েছে। সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোন ধরণের নোটিশ না দিয়েই একতরফা ভাবে মালিকপক্ষ এই কাজ করেছে। অন্যদিকে অফিস বন্ধ রেখে, প্রেস বন্ধ রেখে, সাংবাদিক ও কর্মচারীদের কোনরকম সম্পৃক্ততা না করে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ভিন্ন ঠিকানা ও ভিন্ন প্রেস থেকে অন্য একটি পত্রিকার নাম পরিবর্তন করে ছাপানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। এবিষয়ে সুবিধা বঞ্চিত সাংবাদিক প্রতিনিধি দল একটি লিখিত দরখাস্ত দাখিল করেছেন ডিএফপি বরাবর।
পত্রিকাটির সুবিধা বঞ্চিত এক সাংবাদিক জানান, ঐতিহ্যবাহী ভোরের কাগজের এই অবস্থার জন্য কতিপয় সুবিধাভোগীরা দায়ী। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কয়েকজন বাদে সবাই কি করে এক হতে পারে? এটাই কি সত্যটা উপলব্ধি করার জন্য যথেষ্ট নয়? জামাত-বিএনপি ট্যাগ দিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করা খুব সহজ। সেটাই যদি হতো, তবে সরকার পতনের পর পরই হতো। একটা ন্যায্য দাবিতে যখন সবাই কথা বললো, সুবিধাভোগীরা অপকর্ম প্রকাশের ভয়ে তখনই তাদের কণ্ঠস্বর রোধে উদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো।
তিনি আরও জানান, পুরো বিষয়টাই সু্বিধাভোগী কয়েকজনের প্রিপ্লান। মালিকপক্ষ বলেছিলেন খরচ কমাতে। আর তাতেই বার্তা সম্পাদক তার পছন্দের মানুষদের নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানোর লক্ষ্যে এই নোংরা খেলায় মেতেছিলেন। সম্পাদক গ্রেপ্তারের পর থেকেই নিউজ এডিটরের এই ষড়যন্ত্রে শামিল হয় বাকিরা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই মালিকপক্ষ চাইলেই সেটা বন্ধ করতে পারে, সেটা নিয়ম অনুযায়ী করা যেতো। কিন্তু সেটা না করে প্রতিনিয়ত সবাইকে চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখানো, অপমান-অপদস্ত, প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার হুমকি, অসম্মান ছাঁটাইসহ আতঙ্কে অস্থির এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছিলো বিগত কয়েক মাস। পছন্দের বাইরের প্রতিটি সহকর্মীর সঙ্গে যাচ্ছে তাই অসদাচারণ করেছেন বার্তা সম্পাদক। যা ভোরের কাগজের ইতিহাসে নজিরবিহীন কলঙ্কজনক এক অধ্যায়। এতগুলো মানুষকে চাকুরিচ্যুত করে সুবিধাভোগীদের স্বার্থ হয়তো হাসিল হয়েছে। কিন্তু যারা দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকাকে ভোরের কাগজ নামে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছাপাচ্ছেন, তাদের কি এতটুকুও রক্তক্ষরণ হচ্ছে না?
এদিকে কর্মসূচি, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ এখনো চলমান রেখেছেন ভোরের কাগজের সুবিধা বঞ্চিত সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তাদের দাবি আমাদের সকল দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে আবারও ভোরের কাগজ খুলে দেওয়া হোক। আমরা আগের মতোই উজ্জীবিত হয়ে কাজ করতে চাই। আর যদি আমাদের দাবি না মানা হয় তাহলে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।