শিক্ষার আলো ও ক্রীড়ার উজ্জীবনী শক্তিকে একসূত্রে গেঁথে একটি ব্যতিক্রমী আয়োজনের সাক্ষী হলো উঘারিয়া ইউসি উচ্চ বিদ্যালয়। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার রঙিন উৎসবের মধ্যেই প্রিয় শিক্ষক শামছুল হক ভূঁইয়াকে বিদায় জানিয়ে এক অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বিদ্যালয়টি। দীর্ঘ ৩৮ বছরের শিক্ষকতা শেষে তিনি বিদায় নিচ্ছেন, তবে রেখে যাচ্ছেন অসংখ্য স্মৃতি, ভালোবাসা আর গুণগ্রাহী শিক্ষার্থী।

২৫ ফেব্রুয়ারী, রোজ মঙ্গলবার, আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটির উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন অষ্টগ্রাম স্পোর্টিং ক্লাবের প্রধান পৃষ্টপোষক এবং জারিফ ফার্মার স্বত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম দিপু।
সাধারণত বিদায় সংবর্ধনা হয় আনুষ্ঠানিক আলোচনার মধ্য দিয়ে, কিন্তু এবার উঘারিয়া ইউসি উচ্চ বিদ্যালয় ভিন্ন পথ বেছে নিল। ক্রীড়ার প্রতিটি ধাপে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র জয়ী হওয়ার জন্য নয়, বরং তাদের প্রিয় শিক্ষক শামছুল হক ভূঁইয়া’র প্রতি সম্মান জানাতেও অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীরা তাঁদের মেডেল ও পুরস্কার উৎসর্গ করেন বিদায়ী শিক্ষককে।
উঘারিয়া ইউসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মোঃ মোস্তফা কবির পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে ও সিনিয়র শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ও সাইফুল খালেদের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহি অফিসার নিগার সুলতানা।

বিদ্যালয়টির অভিভাবক সদস্য মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম মিঠু’র সার্বিক তত্বাবধানে অনুষ্ঠানটিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্ডেন এসোসিয়েশন এর শাহরাস্তি উপজেলার সভাপতি মোঃ আলী আজগর মিয়াজি।
অষ্টগ্রামের কৃতির সন্তান জাহিদুল ইসলাম দিপু সংবর্ধনার উদ্বোধন ঘোষণা করে বলেন, “শিক্ষক শামছুল হক ভূঁইয়া শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবক, প্রেরণার বাতিঘর। তাঁর অনুপস্থিতি আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা স্মৃতিচারণ করে বলেন, “তিনি ছিলেন আমাদের শিক্ষাজীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক, যার শিক্ষা আমাদের জীবন গড়তে সাহায্য করেছে।”
সংবর্ধনার মূল আকর্ষণ ছিল বিদায়ী শিক্ষকের বক্তব্য। আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, “এই বিদ্যালয়, এই ছাত্রছাত্রী, এই স্মৃতিগুলো চিরকাল হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। তোমাদের সাফল্যই হবে আমার প্রকৃত অর্জন।”
অনুষ্ঠানের শেষাংশে বিদায়ী শিক্ষককে একটি বিশেষ স্মারক উপহার দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “এই আয়োজন শুধুমাত্র বিদায় সংবর্ধনা নয়, বরং একজন শিক্ষকের শিক্ষা ও আদর্শকে চিরস্থায়ী করে রাখার এক অনন্য প্রয়াস।”
প্রোগ্রামে চমক হিসেবে ছিলো অষ্টগ্রাম স্পোর্টিং ক্লাবের সকল সদস্যদের উপস্থিতি এবং তাদেরকে সম্মাননা স্মারক প্রদান৷ ক্লাবের অধিকাংশ সদস্যই এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। প্রাক্তন ছাত্রদের এমন ব্যতিক্রমভাবে সম্মাননা প্রদর্শন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এছাড়া ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পাঁচজন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
শিক্ষার্থীদের চোখে জল, শিক্ষকের মুখে আবেগমাখা হাসি, আর ক্রীড়ার চমৎকার মুহূর্ত—সব মিলিয়ে এই আয়োজন কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং শিক্ষা ও ভালোবাসার এক অবিস্মরণীয় সংযোগ হয়ে থাকল।