ঢাকা ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মতলব উত্তরে সোলেমান লেংটার মাজার এলাকায় নারীদের অশালীন গানের আস্তানা!

মতলব উত্তর ব্যুরো : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর গ্রামে অবস্থিত দেশব্যাপী পরিচিত হযরত শাহ সোলেমান লেংটার মাজার শরীফ। এই মাজার এলাকায় প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় অর্ধশতাধিক আস্তানায় গানের আসর বসে। আসলেই কি শুদ্ধ গানের আসর নাকি অশালীন কর্মকান্ড চলছে? এই প্রশ্নের জবাব পেতে গত ১৪ জুলাই রাতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল।

Model Hospital

বৃহস্পতিবার রাত ৯.৩০ টা। সোলেমান লেংটার মাজার শরীফের দক্ষিণ পাশে কয়েকটি আস্তানায় শুরু হচ্ছে গান আর অশালীন নাচ! আস্তানাগুলোতে ঘুরে দেখা গেল নানান বিচিত্র। প্রতিটি আস্তানায় পুরুষদের পাশাপাশি রয়েছে নারীদের ব্যাপক সমাগম। নারীদের ওখানে কাজ কি? এমন প্রশ্নও উকি মারছে মনে। এবার আসি আসল কথায়, প্রতিটি আস্তানায় কিশোরী থেকে মধ্য বয়সী নারীদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অশালীন গান ও নাচ পরিবেশন করা হচ্ছে। তাদের সাথে মগ্ন হয়ে নাচছে ভক্তবৃন্দ। শিল্পী নামের অশালীন নারীদের উপর টাকা ছুড়ে মারছে অনেকে। আবার কেউ কেউ হাতেও ধরিয়ে দিচ্ছে টাকার নোট। রাত যত গভীর হয় ততই অশালীন দৃশ্য চোখে পড়ার মত।

যা একটি ইসলামিক সমাজে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলা চলে। গভীর রাতে এমন আরো কিছু অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে যা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা সম্ভব নয়। অশ্লীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে পাড় হয় প্রতিটি বৃহস্পতিবার রাত। এসব কর্মকান্ডের কারণে শাহ সোলেমান লেংটার পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে চরমে। তবে এ ধরনের নিষিদ্ধ কর্মকান্ড কার নেতৃত্বে চলে বা কারা শেল্টার দেয়? এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে স্থানীয় কেউই মুখ খুলেন নি।

সোলেমান লেংটার ভক্ত আশেকান যারা মাজার জিয়ারত করতে আসেন অথবা ইবাদতের মন নিয়ে আসেন এমন ভক্তদের কাছে এসব অশ্লীলতা অপ্রিয়। তবে অশ্লীলতার জন্য ভিন্ন মনমানসিতার লোক সোলেমান লেংটার মাজারের নাম করে চলে যান গানের আস্তানায়। আর রাতভর উপভোগ করেন নিষিদ্ধ কর্মকান্ড। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা সোলেমান লেংটার ভক্ত আঃ ছাত্তার বলেন, আমি এসেছি সোলেমান লেংটার মাজার জিয়ারত করতে। কিছুদিন পরপর আসি। কিন্তু মাজারের আশে পাশে আস্তানায় মহিলাদের দিয়ে নাচ গান করানোটা ইসলাম সম্মত না। এতে করে মাজারের পবিত্রতা নষ্ট হতে পারে। আরো কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, মাজারের যে সঠিক নিয়ম বা প্রচলন তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অশালীন কর্মকান্ডের কারণে। এখানে শুধু ইসলামিক যেমন, মিলাদ, দোয়া, কোরআন তেলোয়াত, দুরুদ পাঠ করা যেতে পারে। কিন্তু তা না করে মাজারের পবিত্রতা নষ্ট করে নারী দিয়ে নাচ গান করানোটা অশালীন। যা আমরা কখনো কামনা করি না।

এ ব্যাপারে কথা হয় শাহ সোলেমান লেংটার মাজারের খাদেম মতিউর রহমান লাল মিয়ার সাথে। মাজার এলাকায় অশালীন নাচ গানের ব্যবসা কে করছে, মাজার কমিটি নাকি আপনি জড়িত আছেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সোলেমান লেংটার মাজারের খাদেম। এই অশালীন কর্মকান্ড করলে আমাকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। সোলেমান লেংটাও আমাকে অভিশাপ দিবেন। লাল মিয়া বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, মাজারের আশে পাশে নারী দিয়ে নাচ গান এটা আমি কখনোই সর্মথন করি না। এরফলে মাজারের পবিত্রতা নষ্ট হয়। গত ৫ বছর আগে থানা প্রশাসনের উদ্যোগে আমি নিজে সহযোগীতা করে এধরনের কর্মকান্ড বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে আবার এসব গান বাজনা চালু হয়েছে। কে বা কাহারা সোলেমান লেংটার সঠিক ইতিহাস নষ্ট করতে এধরনের পায়তারা করছে। আমি এসব কর্মকান্ডের পক্ষে কখনোই ছিলাম না,এখনো নেই। তবে পুরুষ বাউল শিল্পীরা আধ্যাত্বিক গান পরিবেশন করতে পারেন, তাতে মাজারের পবিত্রতা নষ্ট হবে না।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল হাসান বলেন, ইসলাম বিরোধী অথবা অশালীন কর্মকান্ড কোথাও হতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি এই প্রথম জানলাম। তদন্ত করে এমন কিছু পাওয়া গেলে অবশ্যই তা আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করবো।

(এ প্রতিবেদনটি কোন নারীকে ছোট করার জন্য করা হয়নি, যারা অসহায় নারীদের ব্যবহার করে সমাজকে কুলসিত করছে তাদেরকে সচেতন করাই মূল লক্ষ্য)

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে কার্টন ফ্যাক্টরিতে আগুন,নিয়ন্ত্রণে ৮ইউনিট

মতলব উত্তরে সোলেমান লেংটার মাজার এলাকায় নারীদের অশালীন গানের আস্তানা!

আপডেট সময় : ০৩:০৮:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২

মতলব উত্তর ব্যুরো : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর গ্রামে অবস্থিত দেশব্যাপী পরিচিত হযরত শাহ সোলেমান লেংটার মাজার শরীফ। এই মাজার এলাকায় প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় অর্ধশতাধিক আস্তানায় গানের আসর বসে। আসলেই কি শুদ্ধ গানের আসর নাকি অশালীন কর্মকান্ড চলছে? এই প্রশ্নের জবাব পেতে গত ১৪ জুলাই রাতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল।

Model Hospital

বৃহস্পতিবার রাত ৯.৩০ টা। সোলেমান লেংটার মাজার শরীফের দক্ষিণ পাশে কয়েকটি আস্তানায় শুরু হচ্ছে গান আর অশালীন নাচ! আস্তানাগুলোতে ঘুরে দেখা গেল নানান বিচিত্র। প্রতিটি আস্তানায় পুরুষদের পাশাপাশি রয়েছে নারীদের ব্যাপক সমাগম। নারীদের ওখানে কাজ কি? এমন প্রশ্নও উকি মারছে মনে। এবার আসি আসল কথায়, প্রতিটি আস্তানায় কিশোরী থেকে মধ্য বয়সী নারীদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অশালীন গান ও নাচ পরিবেশন করা হচ্ছে। তাদের সাথে মগ্ন হয়ে নাচছে ভক্তবৃন্দ। শিল্পী নামের অশালীন নারীদের উপর টাকা ছুড়ে মারছে অনেকে। আবার কেউ কেউ হাতেও ধরিয়ে দিচ্ছে টাকার নোট। রাত যত গভীর হয় ততই অশালীন দৃশ্য চোখে পড়ার মত।

যা একটি ইসলামিক সমাজে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলা চলে। গভীর রাতে এমন আরো কিছু অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে যা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা সম্ভব নয়। অশ্লীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে পাড় হয় প্রতিটি বৃহস্পতিবার রাত। এসব কর্মকান্ডের কারণে শাহ সোলেমান লেংটার পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে চরমে। তবে এ ধরনের নিষিদ্ধ কর্মকান্ড কার নেতৃত্বে চলে বা কারা শেল্টার দেয়? এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে স্থানীয় কেউই মুখ খুলেন নি।

সোলেমান লেংটার ভক্ত আশেকান যারা মাজার জিয়ারত করতে আসেন অথবা ইবাদতের মন নিয়ে আসেন এমন ভক্তদের কাছে এসব অশ্লীলতা অপ্রিয়। তবে অশ্লীলতার জন্য ভিন্ন মনমানসিতার লোক সোলেমান লেংটার মাজারের নাম করে চলে যান গানের আস্তানায়। আর রাতভর উপভোগ করেন নিষিদ্ধ কর্মকান্ড। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা সোলেমান লেংটার ভক্ত আঃ ছাত্তার বলেন, আমি এসেছি সোলেমান লেংটার মাজার জিয়ারত করতে। কিছুদিন পরপর আসি। কিন্তু মাজারের আশে পাশে আস্তানায় মহিলাদের দিয়ে নাচ গান করানোটা ইসলাম সম্মত না। এতে করে মাজারের পবিত্রতা নষ্ট হতে পারে। আরো কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, মাজারের যে সঠিক নিয়ম বা প্রচলন তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অশালীন কর্মকান্ডের কারণে। এখানে শুধু ইসলামিক যেমন, মিলাদ, দোয়া, কোরআন তেলোয়াত, দুরুদ পাঠ করা যেতে পারে। কিন্তু তা না করে মাজারের পবিত্রতা নষ্ট করে নারী দিয়ে নাচ গান করানোটা অশালীন। যা আমরা কখনো কামনা করি না।

এ ব্যাপারে কথা হয় শাহ সোলেমান লেংটার মাজারের খাদেম মতিউর রহমান লাল মিয়ার সাথে। মাজার এলাকায় অশালীন নাচ গানের ব্যবসা কে করছে, মাজার কমিটি নাকি আপনি জড়িত আছেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সোলেমান লেংটার মাজারের খাদেম। এই অশালীন কর্মকান্ড করলে আমাকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। সোলেমান লেংটাও আমাকে অভিশাপ দিবেন। লাল মিয়া বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, মাজারের আশে পাশে নারী দিয়ে নাচ গান এটা আমি কখনোই সর্মথন করি না। এরফলে মাজারের পবিত্রতা নষ্ট হয়। গত ৫ বছর আগে থানা প্রশাসনের উদ্যোগে আমি নিজে সহযোগীতা করে এধরনের কর্মকান্ড বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে আবার এসব গান বাজনা চালু হয়েছে। কে বা কাহারা সোলেমান লেংটার সঠিক ইতিহাস নষ্ট করতে এধরনের পায়তারা করছে। আমি এসব কর্মকান্ডের পক্ষে কখনোই ছিলাম না,এখনো নেই। তবে পুরুষ বাউল শিল্পীরা আধ্যাত্বিক গান পরিবেশন করতে পারেন, তাতে মাজারের পবিত্রতা নষ্ট হবে না।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল হাসান বলেন, ইসলাম বিরোধী অথবা অশালীন কর্মকান্ড কোথাও হতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি এই প্রথম জানলাম। তদন্ত করে এমন কিছু পাওয়া গেলে অবশ্যই তা আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করবো।

(এ প্রতিবেদনটি কোন নারীকে ছোট করার জন্য করা হয়নি, যারা অসহায় নারীদের ব্যবহার করে সমাজকে কুলসিত করছে তাদেরকে সচেতন করাই মূল লক্ষ্য)