নিজস্ব প্রতিবেদক : চাঁদপুরে আলোচিত মসজিদের ইমামের উপর হামলার ঘটনায় আটক হবার এক দিনের মাথায় আদালত থেকে আগাম জামিন পেয়েছে আসামিরা। অমানবিক এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার না পাওয়া এবং এই ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে জেলার আলেম সমাজ এবং ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সম্প্রতি চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদি ঈমানিয়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু ইউসুফের উপর এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত দুলাল মৃধা ও তার পরিবার ঘটনাটিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্তরা ইমামের উপর হামলার ঘটনাকে আড়াল করতে সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন বলে জানান এলাকার শান্তিপ্রিয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
সরে জমিনে গিয়ে জানা যায়, বিষ্ণুদি ঈমানিয়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু ইউসুফ দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত এই মসজিদে দায়িত্বরত রয়েছেন। এর পূর্বে তিনি প্রায় ২০ বছর চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ড গোরে গরিবা মসজিদের পেশ ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
চাঁদপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বয়োবৃদ্ধ এই আলেমর উপর হামলার ঘটনায় মসজিদ কমিটি, এলাকাবাসী, মসজিদের মুসল্লি ও চাঁদপুরের আলেম সমাজ তীব্রভাবে বিচারের দাবি করছে।
ইমানিয়া জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মোঃ আবুল হাশেম চৌকিদার জানান, ২০২০ সালে মসজিদ পরিচালনা কমিটি পরিবর্তন করে নতুন কমিটি দেয়া হয়। এর পূর্বের কমিটিতে অভিযুক্ত দুলাল মৃধার ছোট ভাই রমজান আলী মৃধা সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মসজিদে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠায় চাঁদপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে তৎকালীন ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিল্লাল মাঝির উপস্থিতিতে মুসল্লিদেরকে নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সে কমিটিতে আমাকে সেক্রেটারির দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুলাল মৃধার ভাই রমজান আলী মৃধা মসজিদ কমিটির দায়িত্ব না পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্নভাবে মসজিদের বিষয়ে বিভিন্ন যায় ঝামেলা সৃষ্টি করছে। কিছুদিন আগে দুলাল মৃধা মসজিদের জায়গা পথ হিসেবে ব্যবহার করে জমি বিক্রি করেছে। তাতে মসজিদের কেউ কোনো আপত্তি করেনি। কিন্তু মসজিদের জায়গা নিজের পথ হিসেবে দাবী করে তিনি গেট নির্মাণ করেছেন। এতে মসজিদের মুসল্লিরা মসজিদের জায়গায় নির্মাণ করা গেইট খুলে দেয়। মূলত দুলাল মৃধার পরিবারের সাথে মসজিদ কমিটির জমি সংক্রান্ত বা অন্য কোন বিষয়ে বিরোধ নেই।
মসজিদ কমিটির জয়েন সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম খান বলেন, মজিদ কমিটিতে দুলাল মৃধার ভাইকে না রাখা, মসজিদের জায়গায় পথ ব্যবহার করে জোরপূর্বক গেট নির্মাণ করলে মুসল্লিরা গেট সরিয়ে ফেলা ও মসজিদের কোন বিষয় তাকে না জানানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে বয়োবৃদ্ধ একজন আলেম ইমামের উপর এরকম নেক্কার জন্য হামলার ঘটনা ঘটায়। এই ঘটনাকে আড়াল করতে দুলাল মৃধা মিথ্যা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন।
মসজিদের মুসল্লী বিল্লাল মৃধা ও বিপ্লব মিজি জানান, ইমামের উপর হামলা করায় আমাদের মসজিদের মুসল্লী ও এলাকাবাসী দোষীদের সর্বোচ্চ বিচার দাবি জানাচ্ছে। আমরা বিচার দাবি করায় আমাদেরকে বিভিন্নভাবে দুলাল মৃধার পরিবারের লোকেরা বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা কওমি সংগঠনের সহ-সভাপতি মাওলানা লিয়াকত হোসেন জানান, মসজিদের ইমাম সাহেবের উপর নেককারজনক হামলার বিচার এতদিনেও হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। আমরা জেনেছি হামলাকারী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাঁদপুরের প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানাবো, ভয় বৃদ্ধ একজন আলেমের উপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনুন। চাঁদপুরের আলেম সমাজের পক্ষ থেকে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের বিচার দাবি করছি।