জাওয়াদ তাহির : কিয়ামতের দিন বহু মানুষ আফসোস করবে। এ জন্য এ দিবসকে পরিতাপের দিবস বলা হয়। জাহান্নামিরা সেদিন পরিতাপ করবে এ কারণে যে তারা ঈমানদার ও সৎকর্মপরায়ণ হলে জান্নাত লাভ করত; কিন্তু এখন তাদের জাহান্নামের আজাব ভোগ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বিশেষ এক প্রকার পরিতাপ জান্নাতিদেরও হবে।
মুমিনদের আফসোসের কারণ
নেতৃত্বের কারণে আফসোস : যারা ক্ষমতা ও নেতৃত্বের জন্য লোভ করে। এবং দায়িত্ব আসার পর যথাযথ দায়িত্ব আদায় না করে। তারা কিয়ামতের দিন এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আফসোস করবে। আবু হুরায়রা (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, অচিরেই তোমরা শাসক হওয়ার লোভ করবে। অথচ তার শেষ ফল লজ্জাকর ও অনুতাপের হয়। কেননা তা অতি উত্তম দুগ্ধদায়িনী (অর্থাৎ যখন তা লাভ হয়, তখন তো খুবই উত্তম মনে হয়) আর অতি নিকৃষ্ট ছাড়ানদাত্রী (অর্থাৎ যখন তা চলে যায়, তখন খুবই বেদনাদায়ক হয়)। (নাসাঈ, হাদিস : ৪২১১)
লোক দেখানো আমল : এমন নেক আমলের ওপর আফসোস করবে যে সৎ আমলের মধ্যে লোক দেখানো, সুনাম খ্যাতি উদ্দেশ্য থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে এমন কিছু প্রকাশিত হবে, যা তারা ধারণাও করেনি।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৪৭)
জিকিরবিহীন মজলিসের আফসোস : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যেসব লোক কোনো বৈঠকে বসেছে অথচ তারা আল্লাহ তাআলার যিকির করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরুদও পড়েনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তাদের শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮০)
সুরা বাকারা না পড়া : সুরা বাকারা পড়ার সামার্থ্য থাকা সত্ত্বেও না পড়া। কিয়ামতের দিন যখন এই সুরার বরকত ও বিনিময় দেখবে তখন সে আফসোস করবে, কেন এই সুরা পড়েনি। আবু উসামা আল বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কিয়ামতের দিন তা পাঠকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থিত হবে। তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান পড়ো। কিয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি, যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা বাকারা পাঠ করো। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কারণ। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৫৯)
কাফিররা যেসব কারণে আফসোস করবে
যারা অসৎ সঙ্গ গ্রহণ করেছে : দুনিয়াতে যারা অসৎ লোককে বন্ধু বানিয়েছে এবং তাদের কারণে সেসব মানুষ বিপথগামী হয়েছে, সেদিন এর কারণে সে আফসোস করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘(কাফিররা বলবে) হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’ (সুরা আল-ফোরকান, আয়াত : ২৮-২৯)
মাটি হয়ে যাওয়ার আশা করবে : কিয়ামতের সেই দিন ভয়াবহ দৃশ্য দেখে কাফিররা আফসোস করবে, আর মাটি হওয়ার ইচ্ছা করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে এবং কাফির বলবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম! (সুরা নাবা, আয়াত : ৪০)
সবচেয়ে বেশি আফসোস করবে : জাহান্নামিরা সবচেয়ে বেশি আফসোস করবে, যখন দেখবে মৃত্যুকে জবাই করে দেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ জীবনে আর কোনো দিন তাদের মৃত্যু হবে না। এ কথা যখন তারা বুঝতে পারবে তখন তাদের আফসোসের শেষ থাকবে না। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, জান্নাতিরা জান্নাতে যাওয়ার পর আর জাহান্নামিরা জাহান্নামে যাওয়ার পর মৃত্যুকে উপস্থিত করা হবে, এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থানে রাখা হবে। এরপর তাকে জবাই করে দেওয়া হবে, অতঃপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেবে যে হে জান্নাতিরা, (আর) মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামিরা, (আর) মৃত্যু নেই। তখন জান্নাতবাসীদের আনন্দের ওপর আনন্দ হবে। আর জাহান্নামিদের দুঃখের ওপর দুঃখ হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৪৮)
পথভ্রষ্ট নেতাদের অনুসরণ : দুনিয়াতে যারা ভ্রান্ত নেতাদের অনুসরণ করেছে এবং তাদের কথামতো নিজেদের জীবন-যাপন পরিচালনা করেছে, সেদিন তারা এর জন্য আফসোস করবে। কারণ তারা তখন বিশ্বাস করবে যে তারা দুনিয়াতে ভ্রান্ত পথে ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতা ও বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব, আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের দিন মহা অভিসম্পাত।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৬৭-৬৮)