৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কলেজে পা পড়েনি তার। অথচ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর হয়েছে যথারীতি। পেয়েছেন আগস্ট ২০২৪ মাসের বেতনও। ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নেপাল চন্দ্র দেবনাথের অর্শীবাদপুষ্ট এ রাজকীয় কর্মচারীর নাম মিস তানিয়া খাতুন। তিনি কলেজটির পাঠাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগে কর্মরত আছেন। ইনডেক্স নং- সি৩০০০১১৫।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারীর স্ত্রী, উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি নাজমুন নাহার অনি এবং এএসপি রাহুলের মা। স্বামী এবং সন্তানদের ক্ষমতা ব্যবহার করে কলেজের নিয়মকে তোয়াক্কা করতেন না তিনি। তাই গত ৭/৮ বছর ধরে তিনি এ সুবিধা পেয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কলেজের একাধিক শিক্ষক কর্মচারী জানিয়েছেন, তানিয়া খাতুনের জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারী ১৯৬৫ খ্রি.। সে হিসেবে তার বয়স ৬০ বছর চলমান। এমপিও নীতিমালা অনুসারে তিনি ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারীর স্ত্রী হওয়ায় বিগত ৭/৮ বছর ধরে তিনি কলেজে না এসেই চাকরী করে গেছেন।
কলেজের অধ্যক্ষরা (সাবেক ও বর্তমান) হাজিরা খাতা তার বাসায় পাঠিয়ে একসাথে স্বাক্ষর নিয়ে আসতেন। ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজের ইতিহাসে এমন রাজকীয় চাকরীর সুযোগ আর কেউ পাননি। ঘটনার বিষয়ে জানতে গ্রন্থাগারিক তানিয়া খাতুনের নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি কল রিসিভ করে কথা বলেননি। এরপর কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নেপাল চন্দ্র দেবনাথের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উনি এখন পিআরএলে আছেন। পিআরএলে থাকা অবস্থায় কলেজে আসা লাগেনা। স্বাক্ষরও করা লাগেনা। তাহলে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে কেন? পিআরএল আবেদন না করেও তিনি কিভাবে পিআরএল সুবিধা পেতে পারেন? এমন প্রশ্নের সদুত্তোর না দিয়ে তিনি বলেন, আমি যা বলছি সেটাই বিশ্বাস করতে হবে। সরকারীকরণ প্রক্রিয়ার অধীনস্থ অবসরপ্রাপ্ত যেসকল শিক্ষক-কর্মচারীগণ এমপিও নীতি অনুসারে ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গেছেন তাদের পিআরএল কিভাবে হিসেব হবে?
এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাদের কিছুই করার নেই। একই প্রক্রিয়ার অধীন তানিয়া খাতুনকে পিআরএলের কথা বলে অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা বৈধ কিনা? গ্রন্থাগারিক তানিয়া খাতুন কেন ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অথবা সরকারীকরণ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন না? এসব প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.কে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করবো না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌলি মন্ডলের সাথে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।