ঢাকা ০৮:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাব্যতা সংকটে ধনাগোদা নদীতে বর্ষায় চললেও  গ্রীষ্মে বন্ধ থাকে নৌ চলাচল

ছবি ক্যাপশনঃ মতলব উত্তর উপজেলার ধনাগোদা নদীতে কচুরিপানে ভরপুর। গ্রীষ্মকালীন সময়ে ধনাগোদা নদীর চিত্র।

নাব্যতা সংকটের কারণে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার মধ্যখানে প্রবাহিত ধনাগোদা নদীতে নৌ চলাচল বন্ধ থাকে। গ্রীষ্মকালে শুধু বর্ষার দুই মাসেই সচল থাকে এ নদী। নাব্যতা না থাকায় একে একে বন্ধ হয়ে গেছে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালামাল পরিবহনকারী কারগো, লঞ্চ এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকা (ট্রলার)। ফলে চরম বিপাকে পড়তে হয় এই নৌপথ ব্যবহারকারীদের।

Model Hospital

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই ধনাগোদা নদীর এমন বেহাল দশার কারণে এই পথ ব্যবহারকারীদের এখন বেশি ভাড়া গুনে স্থলপথই ব্যবহার করতে হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। নৌযান না চলার কারণে ব্যবসায়ীরা  স্থলপথে দ্বিগুণ ভাড়ার টাকা গুনতে হয় ।

মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলাকে বিভক্ত করে রাখা এই নদী দুই উপজেলার মানুষের একমাত্র নৌ চলাচলের পথ। এই নদীকে কেন্দ্র করে এক সময় ঘড়ে উঠেছিল ধনাগোদার দুই পাশে ছোট বড় ১৫ টির মত হাট বাজার।  ঢাকা নারায়ণগঞ্জের সাথে নদীপথে একমাত্র যোগাযোগ ছিল এই ধানাগোদা  নদী। কালের বিবর্তনে স্থলপথে  যোগাযোগ বারা ও এই নদীপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে ঐতিহ্য হারায় এই ধানাগোদা নদী।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর থেকে প্রতি ঘন্টায় ঢাকা নারায়ণগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত ছোট বড় ১৭টির মতো লঞ্চ।  এনায়েত নগর, লক্ষ্মীপুর, মাছুয়াখাল, সাহাপুর, নায়েরগাঁও, নন্দলালপুর, দুর্গাপুর, শ্রী রায়েরচর, কালিপুর, কালিবাজার প্রত্যেকটি লঞ্চঘাটকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ছোট বড় এসব বাজার । নদীর নাব্যতা সংকটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় এসব বাজারে এখন শুধু শুনশান  নিরবতা। বন্ধ হয়ে গেছে হাজারো মানুষের কর্মের চাকা। নন্দালালপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, একসময় তার লাখ লাখ টাকার ব্যবসা ছিল। লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে এখন আর মানুষ আসে না । বাজারগুলো এখন ভূতের গলিতে পরিণত হয়েছে।

দুর্গাপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাধেশ্যাম বাবু জানায়, বাজারের মালামাল আগে নৌ পথে আনার কারনে খরচ কম ছিল। নৌপথ বন্ধ হওয়ার কারণে এখন মালামাল আনতে হচ্ছে সড়ক পথে। পরিবহন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। শাহাপুর  বাজারের ব্যবসায়ী হযরত আলী জানায়, লঞ্চ চলাচল বন্ধের সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট ছেড়ে চলে গেছেন। লোকজন নাই। শুধু দোকান পাহারা দিচ্ছেন কেউ কেউ।। লঞ্চের মাধ্যমে একসময় প্রচুর শিক্ষার্থী উপজেলা সদরের কলেজ ও স্কুল গুলোতে লেখাপড়া করতে আসত। লঞ্চ  চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। যোগাযোগের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী এখন (মানসম্মত না হলেও) স্থানীয় স্কুল কলেজগুলোতেই ভর্তি হচ্ছে।

মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুব আলম লাভলু জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে জলজ প্রাণীর উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গ্রীষ্মকালে খাল বিল শুকিয়ে সেচের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বোরধান ও রোপা আমনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার একি মিত্র চাকমা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা সহ সরজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত পাল বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোন প্রকল্প নেই প্রকল্প পাওয়া গেলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে কার্টন ফ্যাক্টরিতে আগুন,নিয়ন্ত্রণে ৮ইউনিট

নাব্যতা সংকটে ধনাগোদা নদীতে বর্ষায় চললেও  গ্রীষ্মে বন্ধ থাকে নৌ চলাচল

আপডেট সময় : ০৮:২৪:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নাব্যতা সংকটের কারণে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার মধ্যখানে প্রবাহিত ধনাগোদা নদীতে নৌ চলাচল বন্ধ থাকে। গ্রীষ্মকালে শুধু বর্ষার দুই মাসেই সচল থাকে এ নদী। নাব্যতা না থাকায় একে একে বন্ধ হয়ে গেছে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালামাল পরিবহনকারী কারগো, লঞ্চ এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকা (ট্রলার)। ফলে চরম বিপাকে পড়তে হয় এই নৌপথ ব্যবহারকারীদের।

Model Hospital

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই ধনাগোদা নদীর এমন বেহাল দশার কারণে এই পথ ব্যবহারকারীদের এখন বেশি ভাড়া গুনে স্থলপথই ব্যবহার করতে হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। নৌযান না চলার কারণে ব্যবসায়ীরা  স্থলপথে দ্বিগুণ ভাড়ার টাকা গুনতে হয় ।

মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলাকে বিভক্ত করে রাখা এই নদী দুই উপজেলার মানুষের একমাত্র নৌ চলাচলের পথ। এই নদীকে কেন্দ্র করে এক সময় ঘড়ে উঠেছিল ধনাগোদার দুই পাশে ছোট বড় ১৫ টির মত হাট বাজার।  ঢাকা নারায়ণগঞ্জের সাথে নদীপথে একমাত্র যোগাযোগ ছিল এই ধানাগোদা  নদী। কালের বিবর্তনে স্থলপথে  যোগাযোগ বারা ও এই নদীপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে ঐতিহ্য হারায় এই ধানাগোদা নদী।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর থেকে প্রতি ঘন্টায় ঢাকা নারায়ণগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত ছোট বড় ১৭টির মতো লঞ্চ।  এনায়েত নগর, লক্ষ্মীপুর, মাছুয়াখাল, সাহাপুর, নায়েরগাঁও, নন্দলালপুর, দুর্গাপুর, শ্রী রায়েরচর, কালিপুর, কালিবাজার প্রত্যেকটি লঞ্চঘাটকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ছোট বড় এসব বাজার । নদীর নাব্যতা সংকটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় এসব বাজারে এখন শুধু শুনশান  নিরবতা। বন্ধ হয়ে গেছে হাজারো মানুষের কর্মের চাকা। নন্দালালপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, একসময় তার লাখ লাখ টাকার ব্যবসা ছিল। লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে এখন আর মানুষ আসে না । বাজারগুলো এখন ভূতের গলিতে পরিণত হয়েছে।

দুর্গাপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাধেশ্যাম বাবু জানায়, বাজারের মালামাল আগে নৌ পথে আনার কারনে খরচ কম ছিল। নৌপথ বন্ধ হওয়ার কারণে এখন মালামাল আনতে হচ্ছে সড়ক পথে। পরিবহন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। শাহাপুর  বাজারের ব্যবসায়ী হযরত আলী জানায়, লঞ্চ চলাচল বন্ধের সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট ছেড়ে চলে গেছেন। লোকজন নাই। শুধু দোকান পাহারা দিচ্ছেন কেউ কেউ।। লঞ্চের মাধ্যমে একসময় প্রচুর শিক্ষার্থী উপজেলা সদরের কলেজ ও স্কুল গুলোতে লেখাপড়া করতে আসত। লঞ্চ  চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। যোগাযোগের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী এখন (মানসম্মত না হলেও) স্থানীয় স্কুল কলেজগুলোতেই ভর্তি হচ্ছে।

মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুব আলম লাভলু জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে জলজ প্রাণীর উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গ্রীষ্মকালে খাল বিল শুকিয়ে সেচের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বোরধান ও রোপা আমনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার একি মিত্র চাকমা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা সহ সরজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত পাল বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোন প্রকল্প নেই প্রকল্প পাওয়া গেলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।