ঢাকা ০৯:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফরিদগঞ্জে চু’রি’র অপবাদে যুবককে পি’টি’য়ে হ’ত্যা

  • এস. এম ইকবাল
  • আপডেট সময় : ১০:০১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • 170
ফরিদগঞ্জে গণপিটুনির শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুবক মারা গেছে। তার নাম বাবু গাজী। বসত ঘরে প্রবেশ করে মা’র সামনে তাকে পিটানো হয়। ঘর থেকে টেনে হেঁচড়ে তুলে নিয়ে পথে পথে পেটানো হয়। তারপর বেঁধে রাখা হয় গাছে। বেদম পিটুনির ফলে বাবু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। চোর অপবাদে তার ওপর ওই নির্যাতন চালানো হয়।
খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে রেফার করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরে একটি প্রাইভেট হাসাপাতলে তিনি ২৭ নভেম্বর বুধবার বিকালে মারা যান।
বৃহস্পতিবার চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে তাকে বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।
উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিন ইউনিয়নের চররাঘবরায় গ্রামের গাজী বাড়িতে পিটুনির ঘটনা ঘটেছে ১৩ নভেম্বর রাতে।
সরজমিন নিহত বাবুর মা শাহিদা (৫৫), বোন পাখি (৩৫) অভিযোগ করেছেন, ঘটনার সময় অশেপাশের বাড়ির বেশ কিছু সংখ্যক লোক রাত আনুমানিক সাড়ে আট ঘটিকায় বোন পাখির বাড়িতে জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঝগড়া বিবাদ বাধে। সেখানে বাবুকে বেদম মারা হয়। মার খেয়ে বাবু নিজ বসত ঘরে আশ্রয় নেয়। সেখানে লোকজন দল বেঁধে ছুটে গিয়ে বসত ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বাবুকে পেটায়। ওই সময় বাবুর মা ও বোন বাধা দিলে তাদেরকও মারা হয়। বাবুকে মারতে মারতে বসত ঘর থকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির বাইরে। তারপর, পথে পথে পেটানো হয়। পথে মোস্তফা, সেলিম, হারুনের দোকানের সামনে ফেলে দফায় দফায় পেটানো হয়। এক পর্যায়ে, বাবু জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হারুনের দোকানের অদূরে একটি গাছের সাথ বেঁধে রাখে হামলা কারীরা।
ওই দিকে, পেছনে মা ও বোন দৌড়ে দৌড়ে “বাবা রে, মারিছ না রে” বলে চিৎকার করেন। তাদের আহাজারি ও বাধা কেউ শোনেনি। বাবুর মা ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের ফোন নম্বর নিয়ে কল দিলে এস.আই. জাহাঙ্গীর সঙ্গীয় ফোসর্সসহ তাকে মারাত্মক আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে বাবুকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠালে তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ভোর বেলা ঢামেকে ভর্তি করা হয়। সেখানে বাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে স্বজনরা তাকে বিএনকে হাসপাতাল লিমিটেড নামের প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকাল পাঁচ ঘটিকা নাগাদ বাবু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বাবুর ওপর হামলাকারী ও তাকে খুনের জন্য বাবুর মা ও বোন পাশ্ববর্তী বিভিন্ন বাড়ির আব্বাছের ছেলে রাকিব (৩০), সাকিব ২৭), শামছুল হকের ছেলে ফরিদ, বাচ্চুর ছেলে রিয়াদ ও হাসান, হান্নানের ছেলে সোহেল ও রাকিব, একই বাড়ির মজিদ, জাহাঙ্গীরের ছেলে শাহাদাৎ, গণি গাজীর ছেলে শাহ আলম, মুনছুর আখন্দ ও তারে ছেলে রুবেলকে দায়ী করেন। তারা বলেন, তাদের সঙ্গে আরও অনেকে ছিল। বাবুর মা-বোন, স্ত্রী, শ্বশুর প্রমুখ আত্মীয় স্বজন দাবী করেছেন ওইদিন বাবুকে বিনা অপরাধে মারা হয়েছে। বাবুকে হাতুড়ি, চুরি, এসএস পাইপ দিয়ে পেটানো ও ধারালো অস্ত্র দ্বারা কোপানো হয়েছে। আমরা বাবুর হত্যা কারীদের বিচার ও ফাঁসী চাই। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির সামনে বাবুর দাফর সম্পন্ন হয়। হাছান (৫) ও হোসেন (১ বছর) নামে দুজন ছেলে সন্তান রয়েছে বাবুর। প্রায় তিন বছর আগে বাবুর বাবা মারা গেছেন।

Model Hospital
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। তাকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করার পর পুলিশ উদ্ধার করে হাসাপাতালে প্রেরণ করেছিল। চাঁদপুরে গতকাল বাবুর ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয় প্রক্রিয়াধীন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইন হাতে তুলে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে কার্টন ফ্যাক্টরিতে আগুন,নিয়ন্ত্রণে ৮ইউনিট

ফরিদগঞ্জে চু’রি’র অপবাদে যুবককে পি’টি’য়ে হ’ত্যা

আপডেট সময় : ১০:০১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
ফরিদগঞ্জে গণপিটুনির শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুবক মারা গেছে। তার নাম বাবু গাজী। বসত ঘরে প্রবেশ করে মা’র সামনে তাকে পিটানো হয়। ঘর থেকে টেনে হেঁচড়ে তুলে নিয়ে পথে পথে পেটানো হয়। তারপর বেঁধে রাখা হয় গাছে। বেদম পিটুনির ফলে বাবু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। চোর অপবাদে তার ওপর ওই নির্যাতন চালানো হয়।
খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে রেফার করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরে একটি প্রাইভেট হাসাপাতলে তিনি ২৭ নভেম্বর বুধবার বিকালে মারা যান।
বৃহস্পতিবার চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে তাকে বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।
উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিন ইউনিয়নের চররাঘবরায় গ্রামের গাজী বাড়িতে পিটুনির ঘটনা ঘটেছে ১৩ নভেম্বর রাতে।
সরজমিন নিহত বাবুর মা শাহিদা (৫৫), বোন পাখি (৩৫) অভিযোগ করেছেন, ঘটনার সময় অশেপাশের বাড়ির বেশ কিছু সংখ্যক লোক রাত আনুমানিক সাড়ে আট ঘটিকায় বোন পাখির বাড়িতে জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঝগড়া বিবাদ বাধে। সেখানে বাবুকে বেদম মারা হয়। মার খেয়ে বাবু নিজ বসত ঘরে আশ্রয় নেয়। সেখানে লোকজন দল বেঁধে ছুটে গিয়ে বসত ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বাবুকে পেটায়। ওই সময় বাবুর মা ও বোন বাধা দিলে তাদেরকও মারা হয়। বাবুকে মারতে মারতে বসত ঘর থকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির বাইরে। তারপর, পথে পথে পেটানো হয়। পথে মোস্তফা, সেলিম, হারুনের দোকানের সামনে ফেলে দফায় দফায় পেটানো হয়। এক পর্যায়ে, বাবু জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হারুনের দোকানের অদূরে একটি গাছের সাথ বেঁধে রাখে হামলা কারীরা।
ওই দিকে, পেছনে মা ও বোন দৌড়ে দৌড়ে “বাবা রে, মারিছ না রে” বলে চিৎকার করেন। তাদের আহাজারি ও বাধা কেউ শোনেনি। বাবুর মা ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের ফোন নম্বর নিয়ে কল দিলে এস.আই. জাহাঙ্গীর সঙ্গীয় ফোসর্সসহ তাকে মারাত্মক আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে বাবুকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠালে তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ভোর বেলা ঢামেকে ভর্তি করা হয়। সেখানে বাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে স্বজনরা তাকে বিএনকে হাসপাতাল লিমিটেড নামের প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকাল পাঁচ ঘটিকা নাগাদ বাবু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বাবুর ওপর হামলাকারী ও তাকে খুনের জন্য বাবুর মা ও বোন পাশ্ববর্তী বিভিন্ন বাড়ির আব্বাছের ছেলে রাকিব (৩০), সাকিব ২৭), শামছুল হকের ছেলে ফরিদ, বাচ্চুর ছেলে রিয়াদ ও হাসান, হান্নানের ছেলে সোহেল ও রাকিব, একই বাড়ির মজিদ, জাহাঙ্গীরের ছেলে শাহাদাৎ, গণি গাজীর ছেলে শাহ আলম, মুনছুর আখন্দ ও তারে ছেলে রুবেলকে দায়ী করেন। তারা বলেন, তাদের সঙ্গে আরও অনেকে ছিল। বাবুর মা-বোন, স্ত্রী, শ্বশুর প্রমুখ আত্মীয় স্বজন দাবী করেছেন ওইদিন বাবুকে বিনা অপরাধে মারা হয়েছে। বাবুকে হাতুড়ি, চুরি, এসএস পাইপ দিয়ে পেটানো ও ধারালো অস্ত্র দ্বারা কোপানো হয়েছে। আমরা বাবুর হত্যা কারীদের বিচার ও ফাঁসী চাই। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির সামনে বাবুর দাফর সম্পন্ন হয়। হাছান (৫) ও হোসেন (১ বছর) নামে দুজন ছেলে সন্তান রয়েছে বাবুর। প্রায় তিন বছর আগে বাবুর বাবা মারা গেছেন।

Model Hospital
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। তাকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করার পর পুলিশ উদ্ধার করে হাসাপাতালে প্রেরণ করেছিল। চাঁদপুরে গতকাল বাবুর ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয় প্রক্রিয়াধীন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইন হাতে তুলে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।