মোজাম্মেল প্রধান হাসিব : চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে যৌতুকের জন্য আয়েশা আক্তার (৩২) নামে এক গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই গৃহবধূ। নির্যাতিত গৃহবধু উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের আবুল বাসারের মেয়ে।
নির্যাতিত গৃহবধূর বাবা আবুল বাসার জানান, ছয় বছর আগে মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাড়ৈগাঁও এলাকার আব্দুল মতিন মজুমদারের ছেলে কাউছার মজুমদারের সাথে পারিবারিকভাবে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে কাউছার যৌতুকের দাবি করে আসলে আমার সামান্য জায়গা জমি বিক্রি করে কাউছারকে একটি বসতঘর করে দেই। এরপর কিছুদিন সংসার ভালোভাবে চললেও পুনরায় কাউছার মজুমদার যৌতুক বাবদ আমার কাছ থেকে আরও টাকা এনে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু আমার মেয়ে এতে রাজি না হলে প্রায় সময় বেধড়ক মারধর করতো।
এরই জের ধরে গত ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে কাউছার মজুমদার ও তার আগের সংসারের ছেলে মিনহাজ মজুমদার, বড় ভাই সাদেক মজুমদারসহ পরিবারের লোকজন মিলে গৃহবধূ আয়েশা আক্তারকে বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে আবার চাপ প্রয়োগ করে এবং এতে ওই গৃহবধু রাজি না হলে কাউছার মজুমদার ও তার ছেলে মিনহাজ, ছেলের বউ, ভাই সাদেক মজুমদার, সাদেকের স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন আয়েশা আক্তারকে হত্যার জন্য বেধড়ক মারধরসহ দা দিয়ে কোপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে আয়েশা আক্তার অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে কাউছার ও তার পরিবারের লোকজন। আয়েশা আক্তারের জ্ঞান না ফেরায় ঘটনার প্রায় ৩ ঘন্টা পর কাউছারের ছেলে মিনহাজ মজুমদার আয়েশার বাবার বাড়ি ফোন করে জানান আয়েশা আক্তার ঘুরের ঘরে মারা গেছেন। এই খবর পেয়ে আয়েশা আক্তারের বাবার বাড়ির লোকজন তার শশুরবাড়ি গেলে তাদের উপর হামলা করার চেষ্টা করেন কাউছার ও তার পরিবারের লোকজন। পরে এলাকাবাসির সহযোগিতায় মর্মূর্ষ অবস্থায় আয়েশা আক্তারকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে আয়েশা আক্তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
গৃহবধূর বাবা কাঁদতে কাঁদতে আরও বলেন, আমি অনেক গরীব মানুষ। বারবার জামাইয়ের চাহিদা মেটানোর সামর্থ্য আমার নেই। তাই তারা সব সময় আমার মেয়েকে মারধর করত। অনেক বুঝিয়ে লাভ হয়নি। এবার হত্যা চেষ্টা করেছে।
নির্যাতনকারী কাউছার মজুমদারের মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সূত্রে চেষ্টা করেও সেই পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।