মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনি : টাকা আত্মসাৎ ও হাসপাতালের নার্সকে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বেলায়েত হোসেনকে কুমিল্লা শহীদ নগর ২০ শয্যা বিশিষ্ট ট্রমা কেন্দ্রে আরএমও পদে বদলি করা হয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোঃ শামিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়।
গত ৩ আগষ্ট হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেন এর বিরুদ্ধে নার্স এবং নার্সের মেয়েকে যৌন হয়ারানী করার অভিযোগসহ নার্সদের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা রকম দূর্নীতির অভিযোগ উঠে।
উক্ত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সিনিয়র নার্স গীতা রানীর মেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী পূজা (১৭) এর সাথে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেনের পরিচয় হওয়ার পর তার ফোন নাম্বার চায়। এতে পূজা নাম্বার দিতে নারাজ হলে এক পর্যায়ে তিনি জোরপূর্বক পূজার মোবাইল নাম্বার নেন। মোবাইল নাম্বার নেয়ার পর থেকে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ফোন দিয়ে অশ্লীল কুরুচিপূর্ন কথা বার্তা বলেন। তিনি অসংখ্যবার ভিডিও কল দিয়ে নগ্ম অবস্থায় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন এবং পূজাকে নগ্ম হতে বলেন। এমনকি ভিডিও সেক্স করতেও বলেন তিনি। পূজা তার কথামত অশ্লীল কাজ করতে না চাইলে তিনি তার বাসায় যেতে বলেন। পঃপঃ কর্মকর্তার স্ত্রী বাসায় না থাকলেই তিনি পূজাকে বাসায় যেতে জোর করেন। তার কোন কথায় রাজি না হওয়ায় পঃপঃ কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন পূজাকে হুমকি দিয়ে বলেন, সে যদি এসকল কথা কারো কাছে বলে এবং তার ডাকে সারা না দেয়, তার বাসায় না যায় তাহলে তার মাতা সিনিয়র নার্স গীতা রানীকে অন্যত্র বদলী করে দেওয়ার হুমকি দেন।
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেনের যৌনহয়রানীতে পূজা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়াও সিনিয়র নার্স উম্মে হাবিবা সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেন
সে অভিযোগে জানা যায়, ২০১৬ সালে নিয়াগকৃত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স তিনি। তিনি অভিযোগে বলেন, ফাইজার ভ্যাকসিন দেওয়ার কারনে সরকার ৮জন নার্সকে ২৪ হাজার টাকা করে মোট ১লাখ ৯২ হাজার টাকা প্রদান করেন। ৮ জন নার্সকে বেলায়েত হোসেন ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা অফিস খরচ বাবদ কেটে রাখেন। এছাড়া তিনি ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কুরুচিপূর্ন কথা বলে বিভ্রত করেন। অফিস অথবা ওয়ার্ডের কাজে বা তার অফিসে গেলে তার দৃষ্টিভঙ্গি আপত্তিকর কথা বার্তা শুনতে হয়। যার ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল নার্সরা স্যারের অফিস রুমে যেতে ভয় পায়। পঃ পঃ কর্মকর্তার যৌনহয়রানীর কারনে নার্সরা হাসপাতালে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারছে না।
অভিযোগকারি পূজা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএস বেলায়েত হোসেন এ হাসপাতালে আসার পর থেকেই তিনি আমাকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করতেন। একদিন জোর করে আমার থেকে আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে আমাকে কুরুচিপূর্ন কথা বলতেন। আমি ওনার সাথে কথা বলতে না চাইলে তিনি আমার মাকে অন্যকোথাও বদলি করে দিবেন বলে আমাকে ভয় দেখাতেন। তার ভয়ে আমি তার সকল প্রকার যৌন হয়রানি মুখ সহ্য করেছি। কিন্তু এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে দাড়িয়েছে তিনি প্রতিদিন আমাকে তার বাসায় যেতে বলেন, বাসায় না গেলে তিনি ভিডিও কল দিয়ে তার জামাকাপড় খুলে আমাকে দেখান এবং আমার শরীরের জামাকাপড় খুলে তাকে দেখাতে বলেন। আমি তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে সবাইকে জানাতে বাধ্য হয়েছি। এ বিষয়ে আমি গত বুধবার চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে লিখিত ও ভিডিও বক্তব্য সহ অভিযোগ দিয়ে এসেছি।
অভিযোগকারি নার্স উম্মে হাবিবা বলেন, পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেন আমার ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করেন। যার ফলে আমার পরিবারে অশান্তি সৃস্টি হয়েছে। আমি ফেসবুকে কোন পোস্ট করলেই তিনি বাজে মন্তব্য করায় পোস্ট গুলো ডিলেট করতে বাধ্য হই। তাছাড়া তিনি সরসরি আমাকে দেখলেও অশ্লীন ভাষায় মন্তব্য করেন। তিনি আমাদের নার্সদের ভ্যাকসিন দেওয়ার টাকা অফিস খরচ দেখিয়ে নিজে তা আত্মসাৎ করেছেন। এসকল বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আমি চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।