প্রিয় চাঁদপুর রিপোর্ট : ফরিদগঞ্জে অতি দরিদ্র্যদের কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিপিপি)’র প্রকল্পে কাজ করেছেন ২২ জন বেকার, ভূমিহীন ও স্বল্প আয়ের শ্রমিক। ৬০ বছরের বৃদ্ধা ও বিধবা নারীসহ কেউ সম্পূর্ণ, কেউ আংশিক মজুরীর টাকা পাননি।
ভূক্তভোগীরা বলেছেন, চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। তিনি উল্টো আইনের আশ্রয় নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। শ্রমিকদের সিমকার্ড ও পিন নম্বর নিয়েছেন ইউপি সদস্য। তিনি দাবী করেছেন চেয়ারম্যানের নির্দেশে সিমকার্ড নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নানা অনিয়মের সংবাদ পাওয়া গেছে। অতি দরিদ্র্য ওই নারী-পুরুষ তাদের শ্রমের টাকা চান। অভাবি মানুষদের চোখেমুখে বেদনার রেখা ফুটে উঠেছে। ঘটনা ঘটেছে উপজেলার ৬নং গুপ্টি (পশ্চিম) ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে।
সূত্রে জানা গেছে, লাউতলী গ্রামে ২০২২ সালে প্রথম দফায় ৪০ দিনের কর্মসূচীতে তালিকা করা হয়েছে ২৭ জন নারী-পুরুষের। কাজ শুরু হয় ২২জন দিয়ে। তাদের মধ্যে নারী শ্রমিক ছিলেন ১৩জন। কিছুদিন পর ছয়জন পুরুষ কাজ ছেড়ে দেন। পরে, ১৬ জনের দলে পরিণত হয়। আন্দিরপাড়-মোল্লা বাড়ি, খলিফা বাড়ি-ঘোড়াশালা খাল ব্রীজ, মিজি বাড়ি-সিংহের দিঘিরপাড়, লতিফগঞ্জ বাজার খাল পাড়-লাউতলী ভূঁইয়া বাড়ির সামনে পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজ করেন। প্রত্যেক শ্রমিক নিজ নামে সিমকার্ড তুলেন ও বিকাশ একাউন্ট করেন।
ভূক্তভোগী, রিংকু রাণী (৪৫), নয়ন রাণী (৩৫), মাধব (৪২), মিনতি (৩০), খোকন (৪০), শিপন (৪৫)জানান, প্রথম দফায় বিকাশ একাউন্টে কয়েক ধাপে মজুরি হিসেবে ১৬ হাজার টাকার স্থলে আট হাজার টাকা পেয়েছেন। বাকী টাকা আজও পাননি। শিল্পী রাণী ৪০ দিন পূর্ণ কাজ করেও কোন মজুরি পাননি।
অণিমা রাণী দাস (৪৯), বীণা রাণী, পুষ্প রাণী (৬০), যমুনা রাণী (৩৮), ভাসানী রাণী (৪৫), ললিতা রাণী (৬০) বলেন, এ বছরের জানুয়ারি মাসে বুলবুল চেয়ারম্যান ১৩ জন নারী শ্রমিককে তার কার্যালয়ে নিয়ে বলেন, প্রথম দফায় অন্য এলাকার টাকা আপনাদের মোবাইলে গেছে। ৬ হাজার টাকা করে সবাই ফেরত দেন।
আমরা বলি অন্য এলাকার কাজের টাকা আমাদের বিকাশ নম্বরে আইছে কেমনে। আমরা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করেছি, আমাদের টাকা কোথায় গেল, আমরা টাকা দিব না। তিনি বলেন, না দিলে আইনের আশ্রয় নিমু। আমরা বলেছি, প্রয়োজনে জেলখানায় যামু টাকা ফেরত দিমু না।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় ৪০ দিনের কর্মসূচীর কাজ করানো হয়েছে ২৭ দিনে। লাউতলী আড্ডা বাড়ি ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গর্ত, শাহ আলম নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট এর কাজ করেছেন।
তারা আরো বলেন, যেই কাজ করার কথা ২৭ জনে। পেটের জ¦ালায় সেই কাজ ১৬জন করেছি। কিন্তু, এইবার কাজ শুরুর আগে আমাদের কাছ থেকে সিমকার্ড ও পিন নম্বর নিয়ে যান ওয়ার্ড মেম্বার মাসুদ আলম। কাজ শেষ হওয়ার পরও মজুরির টাকা পাইনি। অভাব অনটনে পড়ে বারংবার মেম্বারকে বলার পর প্রায় দুই মাসে দুই ভাগে চার হাজার টাকা দিছে।
শ্রমিক ইলিয়াস (৩২) বলেন, আমি সিমকার্ড দেই নাই। গত বছর বিকাশে ১৬ হাজার, এ বছর আট হাজার টাকা পাইছি।
দশম শ্রেণি পড়ুয়া প্রসেনজিৎ বলেন, অসুস্থ্য হওয়ায় মা’র সাথে গত বছর আমি অর্ধেক কাজ করেছি। এ বছর সম্পূর্ণ কাজ আমি করেছি। স্কুল বন্ধ দিয়ে কাজ করে আজও টাকা পাইনি।
বিধবা মিনতি রাণী দাস (৪৪) বলেন, খেয়ে না খেয়ে থাকি। কয়টা টাকার জন্য হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটেছি। অথচ, মজুরির টাকা পাইলাম না।
৬০ বছরের অঞ্জনা রাণী ও পুষ্প রাণী, যমুনা রাণী বলেন, মাটি কাইটা অসুখ হইয়া গেছে। কয়েকবার ঘুইরা পড়ছি। ঠিক মতো খাইতে পারি না, ওষুধ কিনমু কেমনে।
ইউপি সদস্য মাসুদ আলম বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে সিমকার্ড ও পিন নম্বর নিয়া তাকে দিছি। বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
সূত্র জানিয়েছে, মেম্বারও আতংক বোধ করছেন। একাধিক কলেও মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ বলেছেন, বিল পাঠানো হয়েছে, ঢাকা থেকে ২৫ জনের টাকা আসেনি। কতো জনের টাকা এসেছে- এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। সিমকার্ড নেওয়ার তথ্য স্বীকার করে তিনি বলেন, পিন নম্বরের কথা আমি জানি না।
তিনি আরো বলেন, টাকা না পাওয়ার বিষয় মেম্বার আমাকে জানিয়েছে। আপনাদের কারা তথ্য দেয় এটা বুঝি না। তারা আপনাদের কাছে বলে কেনো।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মিলটন দস্তিদার বলেছেন, এগুলো (দুর্নীতি) বন্ধ হওয়ার জন্য সরকার শ্রমিকদের সিমকার্ডের বিকাশ এ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাচ্ছে। চেয়ারম্যান আমাদেরকে তালিকা ও সিমকার্ডের নাম্বার দেয়। আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেই। শ্রমিকদের টাকা লেনেদেনের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তালিকায় গন্ডগোল, সিমকার্ড নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দায়ী না। নানা জটিলতায় অনেকের সিমে টাকা আসে না। সিস্টেমে গলদ আছে। তবে, সিমকার্ড নেওয়ার বিষয়টা চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করবো।