চাঁদপুরের শাহরাস্তির রেমিট্যান্স যুদ্ধা নুরুল হুদা খোকা ৫৪ কুয়েতের সড়কে সিটিকর্পোরেশনের ”বলদিয়া” গাড়ির ধাক্কায় ম্যানহোলের গর্তে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে।
এমন আকস্মিক মৃত্যুতে তার পরিবারসহ দেশের বাড়িতে স্বজনদের মাঝে শোকের মাতম বইছে।
নিহতের পরিবার, স্বজনরা জানায়, শাহরাস্তি উপজেলার পৌর শহরের ১১ নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর মহল্লার সারেং বাড়ি, বর্তমানে ঢাকা সারুলিয়া ডেমরা ডগাইর অধিবাসী তিনি । বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর (অব.) অডিট অফিসার আবুল হাসেমের ৪ মেয়ের মধ্যে একমাত্র পুত্র সন্তান খোকা আজ থেকে অন্তত ২০ বছর পূর্বে জীবিকার প্রয়োজনে প্রথমে মালয়েশিয়া পরে সৌদি আরব বর্তমানে কুয়েতে বিভিন্ন ট্রেডে কাজ করে একজন সফল রেমিট্যান্স যুদ্ধা হিসেবে দেশে ও পরিবারের জন্য অবদান রেখে আসছিলেন।
এরই মধ্যে তিনি ঢাকায় ডেমরা সারুলিয়ার ডগাইতে বাসা বাড়ি করে আত্মনির্ভরশীল হন। বিবাহ পরবর্তী জীবনে ১ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তানের জনক হন তিনি। তার ১ মাত্র পুত্র রেদওয়ান হুদা দিপু ২২ জাপানে উন্নত শিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় ৬ মাস পূর্বে দেশ ছাড়েন।
অপরদিকে কন্যা মেহেরুন্নেসা ১৭ ঢাকা ডেমরার শামসুল হক স্কুল এন্ড কলেজে লেখাপড়া করছে। এই সুখের সংসারে বয়োবৃদ্ধ মা বাবা স্ত্রী পুত্রকন্যা সন্তানের ভরণপোষণের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে একমাত্র অভিভাবক ছিলেন তিনি। এদিকে গত শুক্রবার ১৫ জুন ” জ্বালানি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ মরুর দেশ কুয়েতের সময় সকাল ৯ টা বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় সে দেশের ”জাহারা” জেলায় জাহারা নামক স্থানে খোকা নিজগাড়ির চাকা পানচার পরীক্ষা করছিলেন।
ওই সময় হঠাৎ করে সিটি কর্পোরেশন কুয়েত”বলদিয়ার”একটি গাড়ি বেপরোয়া গতিতে তাকে ধাক্কা দিয়ে নতুন নির্মাণাধীন একটি ম্যানহোলের ঢাকনা বিহীন গভীর গর্তে ছিটকে ফেলে দেয়। এতে সেখানে পড়েই তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত জাহারা এলাকার ”পরোয়ানিয়া” হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। বর্তমানে তার মরদেহ ওই হাসপাতালের হিমাগারে রক্ষিত রয়েছে।
এদিকে তার ভগ্নিপতি মো. জাকির হোসেন মুঠোফোনে জানান, তাদের আদরের একমাত্র ভাই খোকা জীবিত অবস্থায় আগামী ২৬ শে জুন দেশে আসার জন্য বিমানের টিকেট সংগ্রহ করেন। অথচ ১৫ জুন তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে নিথর দেহ নিয়ে দেশে আসার জন্য হিমাগারে প্রস্তুতি নিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে।
স্বজনরা আরো জানান, দেশ-বিদেশের আইনি জটিলতার আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় বাংলাদেশে মরদেহ আশার কথা রয়েছে। বুধবার ডেমরা সারুলিয়া ডগাই মসজিদ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে চির বিদায় জানানো হবে তাকে। এছাড়া খোকার মৃত্যুর সংবাদ তার দেশের বাড়ি শাহরাস্তির পৌরসভার কৃষ্ণপুর গ্রামের সারেং বাড়িতে পৌঁছানোর পর থেকে এই পর্যন্ত স্বজনদের মাঝে শোকের মাতম বইছে।
এ প্রসঙ্গে তার চাচাতো ভাই আলী আশরাফ জানান, তার খোকার বৃদ্ধ পিতা-মাতা একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে শোকে দুঃখে শয্যাশাই । স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা পুত্র বাকরুদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর আবুল কাশেম জানান, খোকা ভাই একজন নম্র ভদ্র বিনয়ি ব্যাক্তি ছিলেন। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।