শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যকার দ্বন্ধ নিরসনে প্রধান শিক্ষকের প্রশ্নবিদ্ধ ভুমিকা এবং উল্টো শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনার ব্যাপারে এক অভিভাবকের দায়ের করা অভিযোগে বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা স্কাউটস’র কমিশনার হাছিনা আক্তার ডলির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করেন ওই বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুমন শীল। অভিযোগের আলোকে চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসের এডিপিও মো. রবিউল আলম’র নের্তৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিভাগীয় তদন্ত করেন।
জানা গেছে, অভিযোগকারী ফরিদগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সুমন শীল নিজের দুই সন্তানের পড়ালেখার জন্য গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের অন্যতম সেরা বিদ্যাপিঠ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। কিন্তু গত ২৩ জুলাই প্রথম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছোট ছেলে ঋজু এর স্কুল ব্যাগ ডাস্টবিনে ফেলে একই ক্লাসের সিয়াম। ঘটনা জেনে ঋজুর ভাই একই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ঋক ব্যাগ উঠিয়ে নিয়ে আসে এবং সিয়ামকে চড় মেরে শাসন করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের উপস্থিতিতে সিয়ামের নানী ঋককে সিয়ামের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় এবং পরবর্তীতে সিয়ামের বাবা রুবেল শিক্ষকদের সামনেই পুনরায় ঋককে মারধর করে এবং ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে ফেললে সে আহত হয়। আবার এই ঘটনা যাতে ঋজু-ঋকের বাবা মাকে না জানানো হয় সেইজন্য প্রধান শিক্ষকসহ অন্যশিক্ষকরা তাদের দুই ভাইকে শাসিয়ে দেয়। বিষয়টি জেনে ঋক ও ঋজুর বাবা সুমন শীল পরবর্তীতে বিদ্যালয়েরর প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে প্রতিকার চাইলে তিনি রঢ় আচরণ করেন। এমনকি উপজেলা শিক্ষা কর্মকতার কাছে গিয়েও কোন ফল পাননি।
ফলে বাধ্য হয়ে গত ২ আগস্ট মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
এব্যাপারে সুমন শীল জানান, সিয়ামের অভিভাবক রুবেলসহ অন্যরা ওই দিনের ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেছে। কিন্তু সহকারি শিক্ষকদের বিশেষ করে প্রধান শিক্ষকের অশিক্ষক সুলভ আচরণ তাকে ব্যথিত করেছে। শিশুরা অনেক কিছুই না বুঝে করে ফেলে। স্কুলে থাকাকালিন শিক্ষকদের দায়িত্ব বাবা মায়ের আদর দিয়ে তাদের শাসন ও বুঝানো। কিন্তু তারা উল্টো আচরণ করেছেন। তাই বাধ্য হয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। আর যেন কোন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এমন ঘটনার শিকার নয় হয়, সেই কারনে আমি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের আশে-পাশের অনেক অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৭-১৮ বছর হাছিনা আক্তার ডলি প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরির সুবাদে অনেকটা স্বেচ্ছাচারীতা ও অভিভাকদের সাথে অশোভনীয় আচরণের কথা এখন সবাই অবগত। কিন্তু এরপরও অদৃশ্য ক্ষমতার কারনে কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়। সুমন শীলের অভিযোগের বিষয়টি নিষ্ঠার সাথে তদন্ত করলে প্রধান শিক্ষকের মুখোশ খুলে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. জহির হোসেন বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তদন্ত করছে। আমি শুধু তদন্ত কর্মকর্তাদের সহায়তা করেছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা শিক্ষা অফিসের এডিপিও মো. রবিউল আলম বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনা সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছি। তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্ট প্রক্রিয়াধীন আছে। বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।