মোটারসাইকেল মেকানিক্যালের কাজ করে ভালোই চলছিল লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ৫নং চন্দ্রীপুর ইউনিয়নের চাংগীরগাঁও গ্রামের বাবুল মজুমদারের ছেলে শিপন মজুমদারের সংসার। পাচঁ মাস আগে শিপন মজুমদারকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাড়ৈগাঁও গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মো. সুরুজ মিয়া কাতারে মোটা অংকের বেতনে একটি চাকরির প্রস্তাব দেন তার বোন জামাই প্রদীপ ধরের মাধ্যমে।

পরে প্রদীপ ধর ও শিপন মজুমদারের পরিবার ধার-দেনা ও এনজিও’র মাধ্যমে টাকা ব্যবস্থা করে কাতারে যাওয়ার জন্য নগদ ৬ লক্ষ টাকা সুরুজ মিয়াকে দেন। এরপর চলতি বছরের ১৬ জুন কাতারে পাঠানো হয় শিপনকে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর সুরুজ তার কথা অনুযায়ী কাজ না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। প্রায় ৫ মাস অতিবাহীত হলেও শিপন মজুমদার এখন কর্মহীন হয়ে কাতারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ বিষয়ে চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন শিপন মজুমদারের বোন জামাই প্রদীপ ধর।
প্রদীপ ধর অভিযোগ করে বলেন, মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাড়ৈগাঁও গ্রামের মো. বিল্লাল প্রধানের ছেলে সুরুজ মিয়া আমার পাশের বাড়ির হওয়ায় তাদের সাথে আমার সুসম্পর্ক ছিল। তারই সূত্রধরে আমার শ্যালক শিপন মজুমদারকে কাতারে নিয়ে মোটা অংকের বেতনে চাকুরি দিবে বলে সুরুজ মিয়া আমাকে প্রলোভন দেখায়। আমার শ্যালকের বয়স কম হওয়ায় সে কাতারে গিয়ে কাজ করতে পারবে কি না জানতে চাইলে সুরুজ আমাকে আশ^াস দেয় এবং কাতারে নিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা করে সকল দায় দায়িত্ব সে নিবে বলে আমার সাথে অঙ্গীকার করে। এরপর আমি ধার কর্জ করে সুরুজ ও তার পরিবারকে এলাকার আনোয়ার হোসেন ভূইঁয়াসহ একাধিক স্বাক্ষীগণের সম্মুখে তিন ধাপে সর্বমোট ৬ লক্ষ টাকা নগদে দেই।
এরপর আমার শ্যালককে গত ১৬ জুন ২০২৩ইং তারিখে কাতারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে আমার শ্যালককে চাকরি দিবে বলে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন। আমার শ্যালক অপেক্ষা করতে থাকে। এক পর্যায়ে মাস পাড় হয়ে গেলে, জিজ্ঞাস করলে সুরুজ চাকরি দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাইতে থাকে এবং তালবাহানা করতে থাকে। আমার শ্যালক শিপন মজুমদার কাতারে যাবার পর থেকে তার খাওয়া দাওয়ার কোন ব্যবস্থা করে দেয়নি সুরুজ। সে অর্ধহারে অনাহারে দিন অতিবাহিত করতে থাকে। এমন অবস্থায় সুরুজ তাকে চাকরির আশা দিলেও পরবর্তীতে অস্বীকার করে হুমকি ধমকি দিতে থাকে। আমার শ্যালক তাদের এবিষয়ে কোন চাপ দিলে ভিসা বাতিল করে পুলিশে ধরিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।
প্রদীপ ধর আরও বলেন, প্রায় ৫ মাস অতিবাহীত হলেও আমার শ্যালক কর্মহীন, অর্থহীন অবস্থায় কাতারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তার অবস্থা এমনই খারাপ যে আমরা দেশ থেকে টাকা পাঠালে সেই টাকা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছে। বর্তমানে সুরুজ আমার শ্যালককে কাতারে একলা ছেড়ে দেশে চলে আসছে। বর্তমানে তারা তাদের নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। .
আমি জানতে পেরে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, সে আমাদের উল্টো হুমকি-ধমকি দেয় এবং পারলে কিছু করিস বলে শাসিয়ে দেয়। বর্তমানে আমি খুবই অসহায়ভাবে দিনাতিপাত এবং এ ঘটনার ব্যাপারে আমার শ্বশুর বাড়ির সাথে সম্পর্ক খুবই খারাপ হচ্ছে। আমার শ^শুর বাড়ির লোকজনও আমাকে চাপ দিচ্ছে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। শ্যালককে কাতারে পাঠাতে গিয়ে কিস্তি তুলতে হয়েছে আমার। আমি বর্তমানে ওই কিস্তি পরিশোধ করে যাচ্ছি। সুরুজ আমাকে পুরোই নিঃস্ব করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ভিসার টাকা লেনদেনের স্বাক্ষী আনোয়ার হোসেন ভূইঁয়া জানান, আমার উপস্থিতিতে সুরুজকে প্রদীপ তার শ্যালককে কাতারে নেওয়ার জন্য ৬ লক্ষ টাকা প্রদান করেছে। এরপর কাতারে নিয়ে কোন প্রকার কাজ না দিয়ে উল্টো হয়রানি করছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
অভিযুক্ত সুরুজ মিয়া বলেন, আমি তাকে ১০ জায়গায় কাজ দিয়েছে কিন্তু সে কাজ করে না। বর্তমানে একটি গ্যারেজে কাজ করছে।