চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে রানু বেগম নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ৪ ঘন্টার মধ্যে ছেলে রাসেল খানকে আটক ও ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করেছে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। এ নিয়ে শনিবার (২৭ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রেস রিলিজ দিয়েছেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ।
চাঁদপুর জেলা পুলিশ জানায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর গ্রামের বাবুর্চির কাজ করা আতর খাঁন তার স্ত্রী রানু বেগম (৫৭) ও ছোট ছেলে রাসেল খান (২৭) সহ বসবাস করে আসছেন। বিগত ৩ মাস যাবত ছেলে রাসেল খান উশৃঙ্খল চলাফেরা করায় তার বাবা-মা তাকে নিষেধ করলে সে তার বাবা মায়ের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে মারধর করেন। বিষয়টি তখন তার বাবা আতর খাঁন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন আহমেদ রাজনকে জানালে বাবা মাকে প্রাণে হত্যা করে ফেলার হুমকি-ধমকি দিয়ে আসতেছিল।
অতঃপর গত ২৬ এপ্রিল শুক্রবার আতর খাঁন তার স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে রেখে ভোর ৫টার দিকে তার কর্মস্থল রূপসা মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাড়ি হতে বের হয়ে যায়। পরে এদিন দুপুর পৌনে ৩টার দিকে মুদি দোকানে কাজ করা রাসেল তার বাবাকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, “আমি মাকে জবাই করে লাশ ঘরে রেখে দিলাম” বলে ফোন কেটে দেয়। আতর খান তাৎক্ষণিক মাদ্রাসা থেকে আধা ঘন্টা পর বাড়িতে এসে নিজ বসত ঘরের খাটের উপর স্ত্রী রানু বেগম এর গলা কাটা লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় খাটের উপর দেখতে পেয়ে ডাক চিৎকার দিলে ঐ বাড়িসহ আশপাশের বাড়ির লোকজন এসে উক্ত ঘটনা দেখতে পায়।
খবর পেয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পংকজ কুমার দে ও ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সহ থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিম রানু বেগম এর গলা কাটা লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার) এর সার্বিক পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম কৌশলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার কেরোয়া গ্রাম থেকে আসামী রাসেলকে গ্রেফতার করে। আসামী রাসেলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বাবার দোচালা টিনশেড বসত ঘরের কাঁড় থেকে আসামী রাসেলের দেখানো মতে হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা আল কাঁচি এবং ঘটনার সময় আসামীর পরিহিত রক্তমাখা লুঙ্গি ও শার্ট উদ্ধার করেন।
পরবর্তীতে আতর খান বাদী হয়ে তার ছেলে রাসেল খান এর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করলে এই হত্যা মামলাটি রুজু করেন। এই ঘটনার পর পরই চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার) এর সার্বিক দিক-নিদের্শনায় ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এর নেতৃত্বে এসআই ইসমাইল হোসেন, রুবেল ফরাজী, এএসআই নাঈম হোসেন, মনিরুল ইসলামসহ একটি চৌকস টিমের কর্মতৎপরতায় এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে হত্যাকান্ডের সংবাদ প্রাপ্তির ৪ ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস হত্যাকান্ডটির মূল হোতা আসামী রাসেল (২৭) কে গ্রেফতারসহ ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন, ঘটনা সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধারসহ আসামীর স্বীকারোক্তি গ্রহন করা হয়। যথাশ্রীঘ্রই মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হবে।