দেশের স্বনামধন্য আধ্যাত্মিক এবং সেবামূলক সংস্থা নেদায়ে ইসলাম সেবা সংস্থার নবনিযুক্ত প্রশাসক বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের উপপরিচালক মোঃ আবদুল হামিদ নেদায়ে ইসলাম কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন এবং সংস্থার অফিসিয়াল কার্যক্রম ভিজিট করেন।
১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার তিনি মতলব উত্তর উপজেলার ফরাযীকান্দী আল-উয়েসীয়া কমপ্লেক্সে অবস্থিত নেদায়ে ইসলাম সেবা সংস্থাটির অফিসিয়াল কার্যক্রম ভিজিট করেন এবং এতিমখানা পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে সংস্থাটির বিলুপ্তকৃত কমিটির চেয়ারম্যান ও সুপারিন্টেন্ডেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত না থাকায় প্রশাসক অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সংস্থার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ক্যাশিয়ার উপস্থিত থাকলেও তারা অফিসিয়াল নানা বিষয়ের সন্তোষজনক তেমন কোনো জবাব দিতে পারেননি এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ডকুমেন্টও দেখতে পারেননি। তাতে নবনিযুক্ত প্রশাসক অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আমি যে আজকে এখানে আসবো, অফিসিয়াল ভিজিট করবো তা জানানোর জন্যে সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান মাসউদ সাহেবকে বেশ কয়েকবার কল করেছি। কিন্তু তিনি আমার কল একবারও রিসিভ করেননি। এটা আমি মনে করি আমাকে অসহযোগিতা করা। আমাকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সংস্থা নিয়ে যেসব অভিযোগ, অনিয়ম রয়েছে তা খতিয়ে দেখা এবং এসব দূর করে স্থানীয় গণ্যমান্য, শুভাকাক্সক্ষী ও সংস্থার সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটা কার্যকর, গ্রহণযোগ্য এবং জবাবদিহিমূলক কমিটি গঠন করে দেয়া। যাতে এই সেবামূলক ধর্মীয় সংস্থাটি সুন্দর ও সঠিকভাবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে পরিচালিত হয়। আপনাদের সহযোগিতা নিয়েই আমি এটি করতে চাই। এজন্যে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। পরে তিনি এতিমখানা এবং কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরাযীকান্দী উয়েসীয়া শরীফের সাজ্জাদানশীন পীর সাহেব আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মোশতাক আহমাদ আল-আহমাদী রেফায়ী উয়েসী (মাঃজিঃআঃ), হাশিমপুর দরবার শরীফের পীর সাহেব ও হাশিমপুর আহমাদিয়া সিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা শায়খ আশফাক আহমাদ, ফরাযীকান্দী উয়েসীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা আতাউল করিম মুজাহিদ, মাদ্রাসার প্রধান ফকীহ্ মাওলানা সোলায়মান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, নেদায়ে ইসলাম মহিলা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ, ইমামুত্ব ত্বারীকত শেখ বোরহানুদ্দীন আহমদী রেফায়ী উয়েসী (রঃ)-এর দৌহিত্র মাসুক আহমেদ, আশিক আহমেদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন মতলব উত্তরের সমন্বয়ক মোহাম্মদ মানিক, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিবদের মধ্যে মাওঃ মাঈনুদ্দিন, মাওঃ আবু হানিফ, মাওঃ মাহতাফ প্রমুখ। এছাড়া ফরাযীকান্দী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম গাজী, জেলা যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ মোমিন ও উপজেলা বিএনপির সদস্য নান্নু গাজীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত সকলে নেদায়ে ইসলাম সংস্থা, ফরাযীকান্দী কমপ্লেক্স ইমামুত্ব ত্বারীকতের আদর্শ মতে পরিচালনার জন্যে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন পীর সাহেব আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মোশতাক আহমাদ উয়েসী রেফায়ী হুজুর কেবলার নির্দেশনা মতে পরিচালনা করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সবশেষে শেখ বোরহানুদ্দীন (রঃ)-এর মাজার জিয়ারত এবং মিলাদ কিয়াম শেষে দোয়া মুনাজাত করা হয়।
ফরাযীকান্দী উয়েসীয়া শরীফের সাজ্জাদানশীন পীর সাহেব আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মোশতাক আহমাদ আল আহমাদী উয়েসী রিফায়ী (মাঃজিঃআঃ) বাংলাদেশ জয়েন্ট স্টক এন্ড কোম্পানিজ-এর সোসাইটি এক্টের আওতায় নেদায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান আছেন ২০১৮ সাল থেকে। সেই কমিটিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম শমশের আলী ও ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এহতেশামুল হক ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ইসমাইল হোসেন সিরাজি। সেই সূত্রে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে ফরাযীকান্দী উয়েসীয়া কামিল (এম. এ) মাদ্রাসার গভর্নিংবডির চেয়ারম্যানও আছেন পীর সাহেব।
এছাড়াও তিনি ২০১৪ ও ২০১৬ সালে দুই মেয়াদে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নেদায়ে ইসলামের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালে রাজনৈতিক অপশক্তি ও পেশী শক্তি কাজে লাগিয়ে ভুয়া ভোটার তালিকা ও পাতানো নির্বাচন করে সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নেদায়ে ইসলামের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে যান শায়খ মাসউদ আহমাদ। যার মেয়াদ ছিল ২০২৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ভুয়া তথ্যের মাধ্যমে গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়মের বিষয় সামনে আসলে সমাজসেবা অধিদপ্তর তথ্য যাচাই-বাছাই করে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উক্ত কমিটি বাতিল ঘোষণা করে প্রশাসক নিয়োগ করে।