২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ঢাকার গুলশানস্থ হোটেল বেঙ্গল ব্লুবেরিতে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সি এন আর এস) এর উদ্যোগে, অক্সফাম বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তায় এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহ-অর্থায়নে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো, “অংশগ্রহণমূলক মৎস্য ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও ব্যক্তি এবং মৎস্যজীবী সমিতির মধ্যে সংলাপ।

“ এর অংশ হিসাবে “এমপাওয়ারিং উইমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টরস ইন বাংলাদেশ (ই ডব্লিউ সি এস এ)” শিরোনামে মৎস্যজীবী হিসাবে সংশ্লিষ্ট নারীদের পরিচয় প্রণয়ন এবং সরকার প্রদেয় ভর্তুকিতে তাদের অধিকার নিশ্চিতকরণ ছিলো এই সংলাপের মূল উপজীব্য।
সম্প্রদায়ের নাম “মানতা।“ নিজেদের তারা পরিচয় দেন নৌকাবাসি বলে। একেকটা নৌকাই একেকটা পরিবার।
চাঁদপুর জেলার নদীগুলোতে তাদের বসবাস। জেলেদের মতই মাছ ধরে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। সি এন আর এস আয়োজিত এই সংলাপে উপস্থিত ছিলেন এই সম্প্রদায়ের নারী প্রতিনিধিগণ।

তারা জানালেন তাদের দুর্ভোগের কথা। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় হিসাবে অনেক ধরণের অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত। মৎস্যজীবী হিসাবে সরকারি পরিচয়পত্র না থাকায় তারা স্বাভাবিকভাবে মাছ ধরতে পারেননা, পাননা কোন ধরণের সরকারি ভর্তুকি ও সুযোগ সুবিধা।
নারী হিসাবে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার চূরান্ত রূপ তাদের মোকাবিলা করতে হয় প্রতিদিন। দারিদ্র্যের সাথে সাথে নিরাপত্তাহীনতার সাথে যুঝতে হয় তাদের। সন্তানদের জন্যও নেই শিক্ষা বা চিকিৎসার ভাল কোন বন্দোবস্ত। তারা অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের নাগরিক ও মৎস্যজীবী হিসাবে তাদের মৌলিক অধিকারটুকু নিশ্চিত করার জন্য।
অক্সফাম বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগীতায় সি এন আর এস আয়োজিত এই সংলাপে অংশীজনদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট এনজিও, আন্তর্জাতিক এনজিও, সমাজ কর্মী, তরুণ সম্প্রদায়, মৎস্যজীবী সমিতি এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিগণ।
তারা নৌকাবাসি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের নারীদের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চিহ্নিত করে নানামুখী আলোচনার মাধ্যমে বেশ কিছু সমাধানের প্রস্তাব রাখেন। নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ আফসানা পারভীন শাহিদ প্রস্তাব করেন মৎস্যজীবী নারীদের একটা সংগঠন তৈরী করার, যাতে তাদের প্রয়োজনগুলো তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সরাসরি উপস্থাপন করতে পারেন।
এছাড়া তিনি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের জন্য প্রণীত নীতিমালা পুনর্বিবেচনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্য বিভাগের অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের প্রস্তাব রাখেন মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের সরকারি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার।
এছাড়াও তিনি নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। এই সম্প্রদায়ের শিশুদের অব্যাহত শিক্ষার জন্যও তিনি বিকল্প পন্থার কথা উল্লেখ করেন। অক্সফাম অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রতিনিধিত্বকারী ভ্যানেসা লিটল এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন যে, নিঃসন্দেহে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নৌকাবাসি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের নারীদের সকল সমস্যার কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সম্ভবপর হবে।