মাসুদ হোসেন : চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০টি হাট-বাজার যান চলাচলে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে কাঁচা বাজার এবং যত্রতত্র যানবাহন থামানোর কারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান-পাট। এসব হাট-বাজারে দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকে যাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
মহাসড়কের উপর বসানো বাজারগুলোতে যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। বেশিরভাগ স্থানেই মহাসড়ক ঘেঁষে বসেছে হাট-বাজার।
আবার কোথাও কোথাও সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও অস্থায়ী বাজার। এসব বাজার ও দোকানপাট ঘিরে নীরবে চলছে চাঁদাবাজি। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের ব্যস্ততম বাজারগুলোর মধ্যে- ওয়ারলেস বাজার, বাবুরহাট বাজার, মহামায়া বাজার, বাকিলা বাজার, বলাখাল বাজার, হাজীগঞ্জ বাজার, উয়ারুক বাজার, দোয়াভাঙ্গা বাজার, কালিয়া পাড়া বাজার, মুদাফ্ফরগঞ্জ বাজার। এছাড়াও মহাসড়কের মধ্যে প্রায় সময়ই যানজট লেগে থাকে চেয়ারম্যান ঘাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, চাঁদখার বাজার, দেবপুর বাজার, কৈয়ারপুল, আলীগঞ্জ, উয়ারুক রাড়া মৌলুভী বাজারসহ অসংখ্য বাজারে। উপরোক্ত বাজারগুলোতে এলোপাতাড়ি গাড়ি রেখে মালামাল তোলা কিংবা নামানোর কারণে যানজট লেগেই থাকে। মহাসড়কের এইসব বাজারে রাস্তার দুইপাশেই বসে বাজার।
তবে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাবুরহাট পশ্চিম ও পূর্ব বাজার, মহামায়া বাজার, বলাখাল বাজার, হাজীগঞ্জ বাজার, উয়ারুক বাজার, দোয়াভাঙ্গা বাজার, কালিয়া পাড়া বাজার ও মুদাফ্ফরগঞ্জ বাজারের দুইপাশ জুড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট।
সড়কের উপর করা হয়েছে সিএনজি কিংবা অটো স্ট্যান্ড। বাজারগুলোতে মহাসড়ক ঘেঁষে বসে সাপ্তাহিক হাট। অনেকগুলো বাজারে মহাসড়কের ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে ফল ও সবজির দোকান। এসব দোকানগুলোয় ফুটপাত দখলের পাশাপাশি উপরে টানানো হয়েছে বড় বড় ছাতা। যেগুলোর কারনে যানবাহনসহ বাজারে আগত মানুষরা চলাচলে পেতে হয় বাঁধা। অন্যদিকে আশেপাশের এলাকায় চলাচলকারী সিএনজি ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড করা হয়েছে সড়কের উপরেই। সবমিলিয়ে উপরোক্ত সমস্যা আর অনিয়মত্রান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের কারনে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছেন এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীগণ।
এসব যানজটের মধ্যে আটকে থাকতে হয় রোগী কিংবা লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স-সিএনজি, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভ্যানসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের গাড়ি। কিছু কিছু বাজারে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও পর্যাপ্ত না থাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে জেলা শহর ও উপজেলা শহরেই একমাত্র ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত আছেন। তবে সরকার দলীয় কিংবা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কোন ব্যক্তির আগমনে ছোট ছোট বাজারগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাখা হয় পুলিশ। আর ঐ সময়টাতেই এসব বাজারের চিত্র সম্পূর্ণ বদলে যায়।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলকারী বোগদাদ, রিলাক্স, পদ্মা, সৌদিয়া, তিশা, আল আরাফা, বিআরটিসি বাসগুলোই মূলত যানজটের কারণ। এসব বাসের চালক হেলপাররা যাত্রী উঠা নামাসহ ধীরগতিতে বাজার অতিক্রম করার জন্যে যানজটের সৃষ্টি হয়। বাজারগুলোতে দুই দিক থেকে আসা বাসগুলো তাদের যাত্রী উঠা নামার ফলে অন্যান্য গাড়ীগুলো আর সামনে এগোনোর সুযোগ পায় না। এদের সাথে পাল্লা দিতে যানজটের আরেক কারন ছোট বড় সিএনজি, অটোরিকশা, মিশুক, ভটভটি। এসব যানবাহনের অদক্ষ চালকরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে যেখানে সেখানে পার্কিং করে তৈরি করে দীর্ঘ যানজট। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মালবাহী ট্রাক কিংবা কার্গো এবং বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যানগুলো মহাসড়কের উপরে রেখে বাজার ব্যবসায়ীদের মালামাল নামানোর চিত্র দেখা যায়। এতে অন্যান্য গাড়ীগুলো চলাচলে মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়ে থাকে।
আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকজন যাত্রী জানান, চাঁদপুর- কুমিল্লা মহাসড়কের বিভিন্ন বাজারের যানজট এ সড়কের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে সড়ক দখলের কারণে দুইটি বাস ক্রস করতে গিয়ে যানজট লেগে যায়। অন্যদিকে মহাসড়কে অদক্ষ সিএনজি কিংবা অটোরিকশা চালকরা তাদের ইচ্ছেমত চালানোর কারনেও যানজটের সৃষ্টি হয়। সেই সাথে তাদের কারনে বিভিন্ন স্থানে ঘটছে দূর্ঘটনা। এতে প্রাণহানির স্বীকার হতে হয় বহু নিষ্পাপ যাত্রীসহ পথচারীকে।
এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীসহ যানবাহন চালকরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে যানজট মুক্ত মহাসড়ক গড়ে তুলতে জোড় অনুরোধ জানান।