মো. রাছেল, কচুয়া : র্যাব-১১ সিপিসি-২ (কুমিল্লা ক্যাম্প) কতৃক প্রতারণার অভিযোগে আটক হয়েছে কবিরাজ রবিউল হোসেন (২৮) ওরপে যুবরাজ ওরফে জ্বীনের বাদশাহ। কবিরাজ রবিউল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে কচুয়া উপজেলার হাসিমপুর মিয়া বাড়ির সৌদি প্রবাসী মুন্না মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মদ ইভা আক্তার (২৫) কচুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, কবিরাজ রবিউল হোসেন চট্টগ্রাম জেলাধীন জোরালগঞ্জ থানাধীন মধ্যম সোনা পাহাড়ের বেদে পল্লীর অধিবাসী। রবিউল ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইভার মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়। ইভা অপরিচিত নম্বর দেখে প্রথম প্রথম ফোন রিসিভ করেনি। কিন্তু বেশ কয়েক দফা ফোন দেওয়ার এক পর্যায়ে ১০ সেপ্টেম্বর ফোন রিসিভ করে। রবিউল নিজকে জ্বীনের বাদশাহ্ দাবী করে ইভাকে বলে তার বাড়িতে গুপ্তধন রয়েছে। এছাড়া তার স্বামী দীর্ঘদিন থেকে প্রবাসে পেট ব্যাথা রোগ ভুগে আসছে। গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়া সহ স্বামীর রোগ সমুরে দূর করতে পারবে এজন্য তাকে (ইভাকে) ১০০ পাঞ্জাবি ও টুপি দেওয়া সহ, গরু, মহিষ, শুকুর এগুলো বলি দিতে হবে। একাজে তাকে অর্থকুড়ি দিতে হবে।
কবিরাজ ইভাকে কঠোর ভাষায় জানিয়ে দেয় যে, এই তদবিরের কথা কাউকে জানানো যাবে না। কাউকে জানালে ইভা তার সন্তান ও স্বামী অকালে হারাতে হবে। কোন কিছুতেই তারা অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে না। ইভা কবিরাজের কথায় কোন গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এক পর্যায়ে কবিরাজের বিভিন্ন প্রলোভনে ইভা কবিরাজকে সরল মনে বিশ্বাস করে ফেলে।
গতবছরের ১৯ সেপ্টেম্বর কবিরাজের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ১১শত টাকা হাদিয়া প্রদানের মধ্য দিয়ে টাকা দেওয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ১০ অক্টোবর হতে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ দফায় এ কবিরাজের ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বার ও এজেন্ট নম্বরে সর্বমোট ৫লক্ষ ৫২ হাজার ১শত টাকা পাঠায়। উক্ত টাকা পাঠানোর পর পর গুপ্তধন পাওয়ার ও স্বামীর রোগ আরোগ্যের জন্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ৫টি তাবিজ পাঠায়। কুরিয়ার সার্ভিসে তাবিজ পাওয়ার পর ইভা কবিরাজ রবিউলের ২টি মোবাইল নম্বর (০১৮৭০০১৬৩৫২ ও ০১৭০৮৫৫৬৬১৫) দুটি মোবাইল নম্বরে দফায় দফায় চেষ্টা করেও কোন সংযোগ পাইনি।
প্রায় ১মাস পর ফোন দিলে রবিউলের স্ত্রী ফোন রিসিভ করে বলে আমার স্বামী দেশে নেই ভারতে চলে গেছে। পুনরায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ব্যবহৃত দুটি নম্বর ই পুনরায় বন্ধ পাওয়া যায়। এতে ইভা বুঝতে পারে সে প্রতারণার শিকার হয়েছে। তারপর ইভা ছোট বোনের স্বামীকে নিয়ে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি র্যাবের কুমিল্লা ক্যাম্পে এসে পুরো ঘটনা র্যাবের কর্মকর্তাকে অবহিত করায় । র্যাবের কর্মকর্তারা বিষয়টি আমলে নিয়ে বিভিন্ন প্রকার তথ্য সংগ্রহ করে কবিরাজ রবিউলের অবস্থান নিশ্চিত হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে র্যাবের একটি টহল দল ডিএডিএম মফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্সসহ মিরশরাই উপজেলার মধ্যম সোনা পাহাড় এলাকার জনৈক ইয়াসিনের বিকাশ দোকানের সামনে থেকে জ্বীনের বাদশাহ্ কবিরাজ রবিউলকে আটক করে। অতপর পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি র্যাব সদস্যরা আটককৃত কবিরাজ রবিউলকে কচুয়া থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেন।
কচুয়া থানা পুলিশ ইভা আক্তারের দায়ের করা মামলায় (মামলা নং-১৯/৫৩, তারিখ-১৩/০২/২০২২)।ইভা আক্তারের দায়ের করা মামলার আসামী হিসেবে গ্রেফতার দেখায়।
কচুয়া থানার ওসি মো. মহিউদ্দিন জানান, কথিত কবিরাজ রবিউলের বিরুদ্ধে থানা মামলা দায়ের হযেছে, তাকে কোটে সোপর্দ করার মধ্যে দিয়ে জেল হাজতেদ প্রেরন করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কচুয়া থানার এসআই মামুনুর রশিদ সরকারকে। এইদিকে জ্বীনের বাদশাহ রবিউলের প্রতারণার কর্মকান্ড এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।