মো: রাছেল, কচুয়া : কচুয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন কলেজ শিক্ষার্থীর পরিবারের আহাজারি থামছে না।
গত ২৫ নভেম্বর কচুয়ার কড়ইয়া গ্রামের কাদির ডাক্তারের বাড়ি সংলগ্ন এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় শিক্ষার্থী উর্মি মজুমদার, সাদ্দাম হোসেনর ও মাহবুব আলম রিফাত। উর্মি ও সাদ্দাম কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের মাস্টার্স পরীক্ষার্থী।
অপরজন মাহবুব আলম রিফাত চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থী। তারা তিন জনই পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে একই সিএনজি যোগে কলেজের উদ্দেশ্যে হাজীগঞ্জ যাচ্ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ওদের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ ও আর বাড়ি ফিরা হয়নি। বিআরটিসি বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন জনেরই প্রাণ কেড়ে নিল।
দোয়াটি গ্রামের উর্মি মজুমদারের স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষকতার পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করবে। উর্মির ছোট ভাই শুভ জানান, আমরা তিন বোন এক ভাই। প্রায় ৮ বছর আগে কুয়েতের এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবাকে হারাই। বোন উর্মি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের মুখ উজ্জ¦ল করবে, গড়ে তুলবে আলোকিত সমাজ। এমনি আশায় আমরা বুক বাঁধি।
নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান মজুমদারের ছেলে সাদ্দাম উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করে প্রশাসনিক ক্যাডার হয়ে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করার স্বপ্ন লালন করে আসে। তাঁর ভাই স্কুল শিক্ষক ইসমাইল হোসেন জানান, আমরা পাঁচ ভাই দুই বোন। ছোট ভাই সাদ্দাম একজন স্বপ্ন বিলাসি মানুষ ছিলেন। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সে কঠোর অধ্যাবসায় চালিয়ে যাচ্ছিল। বাবা আব্দুল মান্নান মজুমদার ও মা মমতাজ বেগম স্বপ্ন বিলাসি পুত্র সাদ্দামকে হারিয়ে প্রায় বাকরুদ্ধ। সাদ্দাম প্রায় দেড় বছর পূর্বে বিয়ে করে। তাঁর রয়েছে তিন মাসের এক পুত্র সন্তান। স্ত্রী আছমা আক্তার স্বামীকে হারিয়ে অবুঝ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তাঁর ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কান্না যেন কেউ থামাতে পারছে না।
অপর নিহত কোয়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে মাহবুব ইসলাম রিফাত সরকারও সদ্য বিবাহিত ছিলেন। স্ত্রী রিয়া আক্তার আছমার মতই বারা বার স্বামীর স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তাঁর বোন শামীমা আক্তার জানান, আমরা তিন ভাই এক বোন। অভাবি সংসারে লেখাপড়া করে ভবিষ্যতে বিবিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসনিক ক্যাডার পদে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। মা হালিমা বেগম জানান, আমার স্বামী বৃদ্ধ হওয়ায় ছেলে কর্মকরে সংসার চালাতো ও পাশাপাশি পড়াশোনা করতো। এখন আমার সংসারে হাল ধরবে কে? এমনি ভাবনায় আমি কোন কুলকিনারা পাচ্ছি না।
তিন পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভের সাথে বলেন, আপনারা সাংবাদিক ছাড়া জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কেউ আমাদের খোঁজ খবরটুকু নিতে আসেনি। আমরা যাতে এ কষ্ট সইতে পারি সে জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করবেন। তবে এ ধরণের দুর্ঘটনায় আর কারো মায়ের কোল যেন খালি না হয় এটাই আমাদের কাম্য। মামলা মোকদ্দমা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিন পরিবারের সদস্যরাই অভিন্ন মতামত প্রকাশ করে বলেন, মামলা করে আমরাতো আর তাদেরকে ফিরে পাবো না।
কচুয়া থানার ওসি মো. মহিউদ্দিন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ কোন প্রকার অভিযোগ করেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহতদের পরিবার চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে লাশ দাফন করেছে। আমরা ঘাতক বিআরটিসি বাসটিকে আটক রেখেছি। বাসের চালককে কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে।