চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়ীয়া ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয় থেকে এক কলেজছাত্রীসহ ওই স্কুলের দপ্তরিকে আটক করেছে স্থানীয় জনতা। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বড় জামবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার অফিস কক্ষে আপত্তিকর অবস্থায় তাঁদের আটক করা হয়। পরে অবশ্য তাঁদের আলাদা দুই ব্যক্তির জিম্মায় দিয়ে সাময়িকভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে স্কুল চত্বরে আজ সোমবার বিকেলে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।
ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় ও স্কুল সূত্রে জানা যায়, বড় জামবাড়ীয়া গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম পটুর ছেলে মো. আব্দুল কাদের জিলানি (২৭) বড় জামবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৬ সাল থেকে নিয়োগপত্র ছাড়াই দপ্তরির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ সুবাদে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তোহমিনা খাতুন স্কুলের সব চাবি তাঁর কাছে রাখেন। এ সুযোগে স্কুলের দ্বিতীয় তলার অফিস কক্ষে বিভিন্ন সময় অনৈতিক কাজ করেন জিলানি। বিশেষ করে এক কলেজ শিক্ষার্থীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্কুলের অফিস কক্ষে একাধিক বার আপত্তিকর সম্পর্ক স্থাপন করেন।
স্থানীয় ও স্কুল সূত্রে আরও জানা যায়, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্কুলের অফিস কক্ষে ওই কলেজ শিক্ষার্থীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দপ্তরিকে পেয়ে স্থানীয় জনতা তাঁদের ধরে ফেলেন। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসায় দেনদরবার হলেও জটিলতার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি এলাকাবাসী। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফাজউদ্দিন পানু মিয়া, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল গাফ্ফার ঘটনাস্থলে যান।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, নিয়োগপত্র নেই এমন একজন দপ্তরির হাতে প্রধান শিক্ষক স্কুলের সব চাবি দিয়ে রাখায় দীর্ঘদিন ধরে নারী-সংক্রান্ত অপরাধ করে আসছেন। এ সবের প্রতিকার চেয়ে তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে ওই কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার সঙ্গে সাত বছর ধরে জিলানি প্রেমের সম্পর্ক গড়েছেন। স্কুলের অফিস কক্ষে ডেকে আপত্তিকর সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। আমার দেড় বছর আগে অন্য জায়গায় বিয়ে হলেও সেখান থেকে বিবাহবিচ্ছেদ করে চলে আসতে বাধ্য করেন। গতকাল রোববার দুপুরে অফিস কক্ষে ডেকে নেন তিনি। সেখানে আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয় জনতা আমাদের দুজনকে ধরে ফেলে।’
এ ব্যাপারে জিলানির মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও রিসিভ করেননি।
জামবাড়ীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আফাজউদ্দিন পানু মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গেলে সত্যতা পাই। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন স্কুলের ১০-১২ বছর বয়সের মেয়ে শিক্ষার্থীরাও খারাপ আচরণের কারণে তাকে ভয় পায়।’
প্রধান শিক্ষক তোহমিনা খাতুন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জিলানির কাছ থেকে চাবি নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্কুল সভাপতি মো. গোলাম নবী বলেন, ‘জিলানিকে কীভাবে রাখা হয়েছে, আমি জানতাম না। আমি রোজার আগে সভাপতি হয়েছি।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল গাফ্ফার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চাবি দেওয়া ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ সোমবার এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’